—প্রতীকী ছবি।
মুন্নি বদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে!
বিহারের লোকসভা ভোটে বিজেপি ও আরজেডি-র সম্ভাবনার প্লাস-মাইনাস নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষ করে বন্দুক জগৎ নিয়ে মুখ খুললেন মুঙ্গেরের চকবাজারের মেসার্স মর্গান আর্মস কোম্পানি-র এক কর্মচারী। বেআইনি অস্ত্রের চোরাকারবার নিয়ে বলতে গিয়ে জনপ্রিয় হিন্দি গানের উপমাটা টেনে আনলেন। বোঝাই গেল, কামানের নিশানা বাংলার নবাব, ঐতিহাসিক চরিত্র মিরকাশিমের দিকেই তাক করা। কারণ, এই মুঙ্গেরে রাজধানী গড়ে তুলে তিনিই প্রথম অস্ত্রের কারখানা গড়েছিলেন। আর সেই ধারা এখনও চলেছে। সরকারি সৌজন্যে মিরকাশিমের কেল্লার ভিতরে আজও রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের কারখানা। সেখান থেকে তৈরি পিস্তল, বন্দুক বৈধ ভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে নামী কোম্পানির তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের দাম অনেক। অস্ত্র তৈরি করা কিংবা কেনার সরকারি অনুমতিও অত সহজে মেলে না। তাই প্রস্তুতকারকের সংখ্যা নগণ্য। ক্রেতাও কম। ফলে মুঙ্গের এলাকায় বংশানুক্রমে অস্ত্র তৈরির সুদক্ষ কারিগর যারা, তাদের অনেকেরই কাজ মেলে না। সেই সুযোগ নিয়েই ডালপালা মেলেছে বেআইনি অস্ত্রের চোরাকারবার। দেশি বন্দুক তৈরি থেকে বিক্রি— অন্ধকার দুনিয়ার সব জায়গাতেই জয়জয়কার মুঙ্গেরের।
মুঙ্গেরের অস্ত্র তৈরির কারিগরেরা স্থানীয় এলাকায় লুকিয়ে কাজ করে, আবার তাদেরই নিয়ে যাওয়া হয় বিহারের অন্য জেলায়, এমনকি, অন্য রাজ্যে। মুঙ্গের জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ ইমরান মাসুদের কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব কিংবা হরিয়ানায় অস্ত্র উদ্ধার হলেও আমরা মুঙ্গের-যোগ পাচ্ছি। বিহারের অন্যত্রও তাদের নিয়ে গিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।’’ পরিযায়ী শ্রমিকের এই রকমফের দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়।
এই লাইনে যাঁরা অনেকদিন নজর রাখছেন, তাঁরা বলেন, বেআইনি অস্ত্রের চোরাকারবারের ব্যাপারটা অনেকটা উইয়ের ঢিপির মতো। মাটির উপরে যতটা ছড়িয়ে, জমির ভিতরের অলিগলি তার চেয়ে অনেক বেশি। আর তা খুঁজে বার করার হয়রানিও অনেক। পুলিশ সুপার জানান, সোর্সের দেওয়া তথ্যের উপরেই বেশি ভরসা তাঁদের। পাকা খবর মিললে হানা দেওয়া হয়। মিনিগান ফ্যাক্টরির সন্ধান মেলে। কিন্তু যারা গ্রেফতার হল, তারা আসলে কারিগর। জেরার সময় তাদের অধিকাংশই জানায়, ছোটবেলা থেকে বাবা-দাদার কাছে কাজ শিখেছে। সেই দক্ষতা আছে বলেই কাজটা করে। বিনিময়ে কিছু টাকা পায়। কারিগরদের জেরা করে মেলে অস্ত্রের বরাত দেওয়ার পিছনে থাকা ব্যক্তিটির খোঁজ। তাকে ধরতে পারলে পাওয়া যেতে পারে সরবরাহকারী ও ক্রেতাদের। আর এ সব করতে গিয়েই উঠে আসে বিহারের বিভিন্ন জায়গা ও ভারতের অন্য রাজ্যগুলিতে চলতে থাকা অস্ত্রের চোরাকারবারীদের কথা।
তা হলে এত ছড়ানো ব্যবসায় মুঙ্গেরের অবদানই বা কতটা? মুঙ্গেরের দেশি বন্দুক শুধুই কি মিথ? এই এলাকায় দীর্ঘদিন কাজ করা এক সাংবাদিকের মতে, অস্ত্র তৈরিতে সুদক্ষ কারিগরিই আসলে মুঙ্গেরকে বিশেষ জায়গা করে দিয়েছে। বিহারের বাঁকা, পূর্ণিয়া, রোহতাস, গোপালগঞ্জ, সারণ, পটনা জেলাতেও অস্ত্রের কারখানা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। অর্থাৎ, মুঙ্গেরের আশপাশেই শুধু নয়, বিহারের দূরদূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে বেআইনি অস্ত্রের ব্যবসা। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাইরের মিনি গান ফ্যাক্টরিগুলিতেও মুঙ্গেরের কারিগরদের নিয়েই কাজ চলতে থাকে। যেমন, গত ফেব্রুয়ারির কথাই ধরা যাক। বিহার পুলিশ, বিহার স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ও কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের যৌথ অভিযানে বিহারের অরওয়াল জেলায় খোঁজ মিলল অস্ত্রের কারখানার। কলকাতার পুলিশের সূত্রেই ওই কারখানার খোঁজ পেয়েছিল বিহার পুলিশ। শেষ পর্যন্ত নগেন্দ্রকুমার সিংহ নামে এক জনের বাড়িতে যৌথ ভাবে হানা। মিলল ৬টি সেমি অটোমেটিক পিস্তল আর অর্ধসমাপ্ত অনেকগুলি পিস্তল ও অস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ। সেই অভিযানে ওই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর মধ্যে ন’জনই
ছিল কারিগর। তারা সকলেই মুঙ্গেরের বাসিন্দা।
এই বদনামই মাথায় বয়ে নিয়ে চলেছে মুঙ্গের। অন্ধকার জগতের ব্যবসায় যা অবশ্য সুনাম হয়েই রয়ে গিয়েছে। মুঙ্গেরের কারিগরদের দক্ষতা বোঝাতে গিয়ে একটা উদাহরণ টেনে আনলেন এখানকার পুলিশ সুপার। সেটা একটা পেন-পিস্তলের কথা। দেখলে মনে হবে কলম। আসলে মারণাস্ত্র। গত ডিসেম্বরের ঘটনা। মুঙ্গেরে পুলিশ গাড়ির তল্লাশি করছিল। সেই সময়েই খাকি উর্দি দেখে পালাতে যায় মোটরবাইকে সওয়ার তিন জন। তাড়া করে ধরা হয় তাদের। তিন জনকে তল্লাশি করলে সাতটি পেন-পিস্তলের সন্ধান মেলে। উদ্ধার হয় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। গ্রেফতার হওয়া তিন জনের মধ্যে এক জন— মহম্মদ জামশেদ মুঙ্গেরের বাসিন্দা। বাকি দু’জন— আরমান মণ্ডল আর বিলাল মণ্ডলের ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গে।
ওই পেন পিস্তল উদ্ধারের ঘটনাটা মুঙ্গেরের পুলিশ অফিসারদেরই চমকে দিয়েছিল।
( চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy