Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

মহারাজ বনাম মুখ্যমন্ত্রীর লড়াই দেখছে মাইসুরু

কর্নাটকে বিজেপি ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ২৮টির মধ্যে ২৫টি আসন ঝুলিতে পুরেছিল। এবার কংগ্রেস কর্নাটকের ক্ষমতায় আসার পরে দাক্ষিণাত্যের পুরনো ঘাঁটিতে বিজেপি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।

যদুবীর কৃষ্ণদত্ত চামরাজা ওয়াডিয়ার।

যদুবীর কৃষ্ণদত্ত চামরাজা ওয়াডিয়ার। — নিজস্ব চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
মাইসুরু শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২৯
Share: Save:

‘যদুবীর মহারাজ কি’….সকলে সমস্বরে ধুয়ো দিলেন ‘জয়!’

বছর বত্রিশের যুবক মোটেই লজ্জিত হলেন না। হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে নিজের কথা শুরু করলেন। নরেন্দ্র মোদীর ‘বিকশিত ভারত’-এর কথা বললেন। তার থেকেও বেশি বললেন মাইসোরের উন্নতিতে মহীশূর রাজপরিবারের ছ’শো বছরের রাজত্বের অবদানের কথা। আবার মহারাজের জয়ধ্বনি উঠল। বছর বত্রিশের যুবক নির্বিকার মুখে সবাইকে নমস্কার জানিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লেন। বোঝা গেল, তিনি এমন জয়ধ্বনি শুনতে অভ্যস্ত।

অভ্যস্ত হবেন নাই বা কেন। মহীশূর রাজ্যে ছ’শো বছর ধরে রাজত্ব করেছে ওয়াডিয়ার বংশ। তাঁদেরই বংশের ঠিকানা মাইসুরুর চোখধাঁধানো রাজপ্রাসাদে রোজ দেশবিদেশের হাজার হাজার পর্যটকের ভিড়। সেই ওয়াডিয়ার বংশেরই তিনি ২৭-তম উত্তরাধিকারী। মহীশূরের সিংহাসনে শেষ মহারাজা জয়চামারাজেন্দ্র ওয়াডিয়ারের নাতি। নামখানাও রাজকীয়। যদুবীর কৃষ্ণদত্ত চামরাজা ওয়াডিয়ার। যে মাইসুরুতে তাঁর পরিবার শতকের পর শতক রাজত্ব করেছে, সেই মাইসোরে যদুবীর নেমেছেন ভোট চাইতে। বিজেপি প্রার্থী হয়ে।

রাজবাড়ির সন্তানের প্রজাদের ভোট চাইতে অস্বস্তি হয় না? প্রশ্ন শুনে চিকন মেজাজের যদুবীর ঠাণ্ডা গলায় বলেন, ‘‘রাজপরিবারের শাসনের যুগে কবেই শেষ হয়ে গিয়েছে। রাজপরিবারের ঐতিহ্য, প্রথাটুকু প্রাসাদের মধ্যে। আমার জন্ম গণতান্ত্রিক দেশে। সেই গণতন্ত্রেই আস্থা রাখি। তাই ভোটে নেমেছি।”

কর্নাটকে বিজেপি ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ২৮টির মধ্যে ২৫টি আসন ঝুলিতে পুরেছিল। এবার কংগ্রেস কর্নাটকের ক্ষমতায় আসার পরে দাক্ষিণাত্যের পুরনো ঘাঁটিতে বিজেপি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষত মাইসোর তথা দক্ষিণ কর্নাটকে।

কারণ, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া মাইসোরের ভূমিপুত্র। মাইসোরে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন তাঁর আস্থাভাজন এম লক্ষ্মণ। রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র। সিদ্দারামাইয়া ঘোষণা করেছেন, ‘লক্ষ্মণকে ভোট মানে আমাকে ভোট, ওঁর জয় মানে আমার জয়’। মাইসুরুর ভোটের লড়াই হয়ে উঠেছে ‘মহারাজা বনাম মুখ্যমন্ত্রী’-র যুদ্ধ। কংগ্রেস বলছে, এ হল ‘রাজা বনাম সাধারণ প্রজা’-র লড়াই।

যদুবীর কৃষ্ণদত্ত চামরাজা ওয়াডিয়ারের কাঁধে অবশ্য শুধু মাইসুরুর ভার নয়। তাঁকে সামনে রেখে বিজেপি মাইসুরু-সংলগ্ন দক্ষিণ কর্নাটকের সাতটি লোকসভা নির্বাচন জিততে চাইছে। এখন মাইসুরুর প্রাসাদের চত্বরের এক কোণে রাজপরিবারের বাস হলেও, মাইসুরু ও তার আশেপাশের জেলাতে এখনও ওয়াডিয়ার রাজাদের সম্মান অক্ষুণ্ণ। সকলেই মানেন, মাইসুরু শহরের সৌন্দর্যায়ন, পরিকাঠামো, মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়র থেকে শহরের স্কুল, কলেজ থেকে কাবেরী নদীতে কৃষ্ণরাজা সাগর বাঁধ—সব কিছুর পিছনেই রাজবংশের অবদান। সেই রাজবংশের উত্তরাধিকারী যদুবীরকেও আমজনতা পছন্দ করেন। তিনি আমেরিকা থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন। তিনি গিটার বাজান, সরস্বতী বীণাও। তিনি ঘোড়ায় চড়তে পারেন। অথচ নিজের গাড়ি নেই। যদুবীর প্রচারে বের হন রাজনীতিকদের মতো কুর্তা-পাজামা পরে। তবে তাঁর দু’কানে গয়না ঝিলিক দিয়ে জানান দেয়, তিনি রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী।

তা হলে কি যদুবীর ভোটারে প্রচারে যাবেন, দেখবেন, জয় করবেন? এত সহজ নয়।
গোটা কর্নাটকে বিজেপির আট জন সাংসদ প্রার্থীতালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মাইসুরুর গত দশ বছরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহা। তাঁর সই করা সুপারিশপত্র নিয়েই ঢুকে পড়ে দুই যুবক লোকসভায় ঢুকে পড়ে রঙিন ধোঁয়া ছড়িয়ে হাঙ্গামা বাঁধিয়েছিলেন। প্রতাপের প্রথমে বেশ গোসা হয়েছিল। প্রশ্ন করেছিলেন, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে রাজামশাই পথের ধুলোয় নামতে পারবেন তো? এখন উপরমহলের চোখরাঙানিতে মুখ বন্ধ করেছেন।

হাজার অনুরোধেও তাঁর মুখ খোলানো গেল না। বিজেপি আশা করছে, কংগ্রেসও ওয়াডিয়ার বংশের উত্তরাধিকারীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পারবে না।

কংগ্রেস প্রার্থী লক্ষ্মণ অবশ্য বোমা ফাটাচ্ছেন। তিনি বলে বসেছেন, যদুবীর তো রাজপরিবারের সন্তানই নন! বাস্তবেই তাই। মাইসুরুর জয়চামারাজেন্দ্র ওয়াডিয়ারের ছেলে শ্রীকান্তদত্ত নরসিমহারাজা ওয়াডিয়ারের কোনও ছেলে ছিল না। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী প্রমোদা দেবী যদুবীরকে দত্তক নেন। যদুবীর অবশ্য একেবারে রাজপরিবারের বাইরের কেউ নন। তিনি শ্রীকান্তদত্তের বোনেরই নাতি। মাইসুরুর বিজেপি দফতরের প্রবীণ নেতারা অবশ্য মনে করেন, এতে ভোটে প্রভাব পড়বে না। কারণ ওয়াডিয়ার বংশের মাথায় ‘অভিশাপে’র কথা গোটা মাইসুরু জানে। তাঁদের মুখেই শোনা গেল, ওয়াডিয়ার রাজারা শ্রীরঙ্গপত্তনমের সিংহাসন থেকে তিরুমলরাজাকে হঠিয়ে রাজ্য দখল করেছিলেন। মাইসুরুর প্রাচীন প্রবাদ, তাঁর স্ত্রী আলামেলাম্মা সমস্ত গয়নাগাঁটি নিয়ে কাবেরী নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার আগে অভিশাপ দিয়ে যান, ওয়াডিয়াররা নির্বংশ হবে। তার পর থেকে এক প্রজন্ম অন্তর ওয়াডিয়ার রাজারা পুত্রহীন থেকেছেন। কখনও ভাইপো, কখনও ভাগ্নেকে দত্তক নিয়ে রাজবংশ বজায় রাখতে হয়েছে। যেমন জয়চামারাজেন্দ্রের পুত্র শ্রীকান্তদত্ত নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁর দত্তকপুত্র যদুবীরের আবার পুত্রসন্তান হয়েছে। রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী এসেছে।

মাইসুরুর রাজারা অবশ্য রাজনীতিতে নতুন নন। শ্রীকান্তদত্ত নিজে চার বার কংগ্রেসের সাংসদ হয়েছিলেন। তবে ওয়াডিয়ার রাজা হলেও তাঁকে দু’বার ভোটে হারতে হয়েছিল। এক বার কংগ্রেসের হয়ে। এক বার বিজেপির টিকিটে। যদুবীর সেই ‘নিয়ম’ ভেঙে আবার সাংসদ হবেন? যদুবীর রাজা জানিয়ে যান, তিনি আত্মবিশ্বাসী। প্রজারা জয়ধ্বনি দেন, ‘যদুবীর মহারাজ কি জয়’!

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Karnataka Spot Reporting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy