E-Paper

জাঠ-মুসলিম বিচ্ছিন্ন করে পদ্ম ফোটানোর কৌশল

কৈরানা লোকসভা আসনের শামলি জেলায় পৌঁছেছি আখচাষিদের কথা শুনতে। যে চাষিদের মধ্যে জাঠ যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন মুসলমান এবং অন্য জাতি সম্প্রদায়ের মানুষও।

কৃষকদের আড্ডা।

কৃষকদের আড্ডা। — নিজস্ব চিত্র।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:২২
Share
Save

জাঠদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক। কৃষকদের থেকে দূরত্ব তৈরি হয়েছে কৃষিমজুরের। জাঠদের ছেড়ে দূরে সরে যাচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতা।

এই কোণঠাসা জাঠ মনের সুযোগ নিয়েই ‘পশ্চিমাঞ্চলে’ ঝড় তুলতে চলছে বিজেপি। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের পাঁচটি লোকসভা আসনের (বিজনৌর, বাগপত, কৈরানা, মুজফফরনগর, সাহারানপুর) পাঁচটিতেই পদ্ম ফোটানোর জন্য, জাঠ সম্প্রদায়কে সুকৌশলে কাজে লাগাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর দল।

কৈরানা লোকসভা আসনের শামলি জেলায় পৌঁছেছি আখচাষিদের কথা শুনতে। যে চাষিদের মধ্যে জাঠ যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন মুসলমান এবং অন্য জাতি সম্প্রদায়ের মানুষও। সমাজবাদী পার্টির অন্যতম পরামর্শদাতা, কৃষিবিজ্ঞানী সুধীর পানওয়ার বলছেন, “এই নির্বাচনী ক্ষেত্রে জাঠ ৩০ শতাংশ, মুসলমান ১০ শতাংশ, গুজ্জর ১০ শতাংশ। বাকি নিম্নবর্গের মানুষ, দলিত, তফসিলি জাতি ও জনজাতির মানুষ। বিজেপি, জয়ন্ত চৌধরির আরএলডি-কে সঙ্গে নিয়েছে মানে এটা ভাববেন না তার পিছনে কোনও জাঠ প্রেম রয়েছে! কেবলমাত্র জাঠের ভোট কুড়োনোটাই কিন্তু লক্ষ্য নয় মোদীর। আসলে মুসলমান এবং জাঠের যৌথ সমীকরণ ২০২২-এর বিধানসভায় এই এলাকায় বিজেপি-কে ভুগিয়েছিল। এখানকার ন’টি বিধানসভা আসনের মধ্যে আটটিতেই বিজেপি-র প্রার্থী হেরেছিলেন এই জাঠ-মুসলমান যৌথ শক্তির কাছে। কিন্তু শুধুমাত্র মুসলমান ভোটব্যাঙ্ক জেতাতে পারবে না বিজেপি-বিরোধী কোনও প্রার্থীকে। সে কারণেই এ বার এই
দুই সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে দিল বিজেপি। মুজফফরনগরে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরির পিছনেও এই একই কারণ ছিল।”

অঙ্ক জলবৎ। বিজেপি নেতারা এখানে এসে কৃষক সমস্যার কথা বেশি বলছেন না, বরং প্রতিটি বক্তৃতাতেই মনে করিয়ে দিচ্ছে জাঠদের জাতিসত্তা ও গৌরবের কথা। চৌধরি চরণ সিংহের প্রতি কংগ্রেস শাসনের ‘অবিচারের’ কথা। যদিও হুঁকোয় টান দিতে দিতে সুখপাল সিংহ পালওয়ান বলছে্ন, “শুধু জাঠ নয়, এখানে যাঁদের জমি আছে সেই সমস্ত কৃষকেরই রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতা কমে যাচ্ছে কেন জানেন? এখন মোদী নিজেই জমিদার হয়ে গিয়েছেন! প্রভাবশালী সামাজিক অবস্থান নিয়েছেন। তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন কৃষক এবং মজদুরদের মধ্যে খয়রাতির পুঁটলি হাতে। কৃষক এবং খেতে খাটা মজদুরের মধ্যে আগে ছিল খাদ্যের সম্পর্ক। তার উপরে কৃষি অর্থনীতি টিকে থাকত।’’ সেই পরিস্থিতিতে বদলের ব্যাখ্যাও দেন তিনি, ‘‘এখন সরকারই বিনা মূল্যে আনাজপাতি দিয়ে দিচ্ছে তাঁদের। কৃষি শ্রমিকরা যার ২৫ শতাংশ নিজেরা ব্যবহার করছেন, আর ৭৫ শতাংশ হাটে গিয়ে বেচে দিচ্ছেন। এখন আর কোনও জাঠ নেতা বা কৃষক, দলিত বা তফসিলি জাতি ও জনজাতিকে ভোট সংক্রান্ত কোনও পরামর্শও দিতে পারবেন না। সে দমই তাঁদের আর নেই। অথচ জাঠরা পশ্চিমাঞ্চলে সংখ্যাগুরু না হলেও চৌধরি চরণ সিংহের সময় থেকে জমির মালিকানা, রাজনৈতিক ক্ষমতা, নেতৃত্ব, সমর্থনে সর্বদাই এগিয়ে থেকেছে, কারণ, তাদের নিজস্ব একটি দল (আরএলডি) ছিল।”

এখানেই শেষ নয়, জানাচ্ছেন তোমর সিংহ। যিনি এই গ্রামের হলেও দুনিয়াদারি দেখেছেন দিল্লি গিয়ে। বহু পুরুষ ধরে এখানে জমিজমা ও চাষবাস। দিল্লির একটি আইটিআই-এর প্রযুক্তি শিক্ষক তোমর বলছেন, “এখন নরেন্দ্র মোদী চরণ সিংহের নামে গলে যাচ্ছেন, কিন্তু এই চরণ সিংহই সবসময় সাবধান করে বলতেন, এক দিকে খেতিতে নজর রাখো, অন্য চোখ রাখো দিল্লিতে। বলতেন, জনসংঘের লোকেরা ব্যবসায়ীর দল, ওদের গ্রামে ঢুকতে দেবে না। তিনি জাতপাত বা ধর্মীয় মেরুকরণের বিরোধী ছিলেন। আমাদের এখানে তাই জাঠ-মুসলমানদের ভাইচারা রয়েছে।”

দু’দিন আগেই শামলিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরিকে সঙ্গে নিয়ে এসে বলে গিয়েছেন, আখ চাষিদের বকেয়া টাকা চিনিকলগুলির কাছ থেকে আদায় করে দেবেন তিনি। তোমার কথায়, “গত বছরের (২০২২-২৩) সরকারি মিলগুলির বকেয়া যে পাব, সেটাই তো আশা ছিল না। আমরা হাল ছেড়ে বসেছিলাম। আরএলডি-র সঙ্গে জোট হওয়ার পর দেখলাম রাতারাতি সেই টাকা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে! গোটা দেশ বলছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার আবার হবে। তা যদি হয়, আশা করব আমাদের বকেয়া মিটবে।”

ভর্তুকি নয়, কৃষিক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সুবিধা চাইছে কৈরানা। চাইছে যথেষ্ট সংখ্যক গোশালা তৈরি হোক যাতে ‘ছুট্টা পশু’ ফসলের ক্ষতি না করে। স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্টের বাস্তবায়ন হোক বা না হোক, অবিলম্বে আখ চাষিদের এমএসপি বাড়ানো হোক। প্রবীণ কৃষক যশপাল সিংহ বলছেন, ‘‘এই কথাগুলো ভাল করে লিখে নিয়ে যান। আর লিখুন, এসপি হোক বা বিজেপি — প্রত্যেকেই ভর্তুকির রাজনীতি করে যা আমরা কৃষকরা চাই না। অখিলেশজি সেচের শুল্ক মাফ করেছিলেন, কিন্তু সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কিছুই করেননি। আমরা আজ পর্যাপ্ত জল পাই না। বিজলি বিনামূল্যে দিয়ে কী লাভ যদি আলোই না পাওয়া যায়?”

(শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Uttar Pradesh Spot Reporting

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।