E-Paper

আসন চাই, ভোট এলেই পত্নীপ্রেমিক বাহুবলীরা

বিহারে নয়ের দশক থেকেই অপরাধ জগতে সাড়াজাগানো নাম অশোক মহতো। অপসড় নরসংহারের পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামি মহতো নওয়াদা জেলে বন্দি ছিলেন।

—প্রতীকী ছবি।

অঞ্জন সাহা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৫
Share
Save

গ্যাংস্টার বলছেন— বন্দুক নয়, এখন কলম ধরার সময়! আর নিজের জীবনের সফরকে বোঝাতে তাঁর মুখে শোনা যাচ্ছে মহাবীর কর্ণকে নিয়ে লেখা জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত কবি রামধারী সিংহ দিনকরের কবিতা। পাশে বসে মন দিয়ে তা শুনছেন সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী।

ভারতের ভোট রঙ্গে নতুন সংযোজন এই জুটি। একসময়ে বিহার কাঁপানো গ্যাংস্টার ভোটের মুখে বিয়ে করে ফেলেছেন। আর অনেকেই বলছেন, সেই গাঁটছড়া বাঁধার একমাত্র কারণ, ভোট-যুদ্ধে নিজে লড়াই করতে না পেরে স্ত্রী-কে এগিয়ে দেওয়া।

বিহারে নয়ের দশক থেকেই অপরাধ জগতে সাড়াজাগানো নাম অশোক মহতো। অপসড় নরসংহারের পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামি মহতো নওয়াদা জেলে বন্দি ছিলেন। ২০০১-এর ডিসেম্বরে বলিউডি কায়দায় জেল ভেঙে পলিয়েছিলেন তিনি। জেলের নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করা হয়েছিল। তারপর ২০০৬-এ দেওঘর থেকে ধরা পড়ে যান মহতো। সতের বছর জেলে কাটিয়ে কয়েক মাস আগেই বাইরে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। মহতোর জীবনের অনুকরণে তৈরি হয়েছে ওয়েব সিরিজ, খাঁকি: দ্য বিহার চ্যাপ্টার। সেই কাহিনি তুলে এনেছিলেন আইপিএস অমিত লোধা। ছলে বলে কৌশলে অশোককে গ্রেফতার করতে যিনি সফল হয়েছিলেন।

এ বার জেল থেকে বেরিয়ে অশোক মহতো অবশ্য অস্ত্র নিয়ে নয়, রাজনীতির ময়দানে থেকে উচ্চবর্ণের অত্যাচারের জবাব দেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু এত বছর সাজা খাটার পর তাঁর পক্ষে ভোটে লড়ার সুযোগ তো নেই!

৬২ বছর বয়সি গ্যাংস্টার তাই কয়েক সপ্তাহ আগে বক্তিয়ারপুরের জগদম্বা মন্দিরে গিয়ে বিয়ে সেরে ফেলেছেন। পাত্রীর বয়স ৪৬। লখীসরাইয়ের মেয়ে, পড়াশোনা বিহারেই। দিল্লিতে চাকরি। আর গ্যাংস্টারকে বিয়ে করেই অনীতা দেবী আরজেডি-র প্রার্থী হয়ে গিয়েছেন মুঙ্গেরে। বিপরীতে জেডিইউ নেতা লালন সিংহ। মুঙ্গেরে গত বার আর এক বাহুবলী অনন্ত সিংহের স্ত্রী নীলম দেবীকে প্রার্থী করে কংগ্রেস। লালনকে বেগ দিয়েও হেরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে অশোক মহতোর দাবি, তিন লক্ষের বেশি ব্যবধানে জিতবেন অনীতা। রামবিলাস পাসোয়ানের জয়ের রেকর্ডও ভেঙে যাবে। বিয়ের পরের দিনই লালু প্রসাদের আশীর্বাদ নিতে পটনায় ছুটে গিয়েছিলেন অশোক-অনীতা। কথা রেখেছেন লালু। অনীতাকে টিকিট দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার সময়েই অশোক মহতোকে বলেছেন, ‘জিতো অউর জিতাও।’

তা হলে কি মুঙ্গের ও আশপাশের কেন্দ্রগুলিতে আরজেডির সাফল্যের জন্য গ্যাংস্টার অশোক মহতোর উপরেও ভরসা রাখছেন লালু, তেজস্বী যাদবেরা? ব্যাপারটা অনেকটা সে রকমই। আর এর পিছনে কাজ করছে অশোক মহতোকে ঘিরে তৈরি হওয়া এক অন্য ইতিহাস।

নয়ের দশকে বিহারের নওয়াদা ও শেখপুরায় উচ্চবর্ণ ও পিছড় বর্গের লড়াই তুঙ্গে। উচ্চবর্ণের সমর্থন পেয়ে সন্ত্রাস রাজ কায়েম করেছেন অখিলেশ সিংহ। বিপরীতে নিম্ন বর্ণের অনুগামীদের নিয়ে অস্ত্র তুলে নিলেন অশোক মহতো। গ্যাংস্টারদের লড়াইয়ে রক্তগঙ্গা বইল বিহারে। খুন পাল্টা খুনের প্রতিযোগিতায় প্রায় দু’শো মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। আর সেই লড়াইয়ের জেরে পিছড়বর্গের একটি অংশে জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছেন অশোক। এখন সেই আবেগকেই ব্যবহার করতে স্ত্রী-কে সামনে রেখে ভোটের ময়দানে নেমেছেন তিনি। তাঁর এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী অখিলেশ সিংহের স্ত্রী অরুণা দেবী বিভিন্ন দল ঘুরে আপাতত বিজেপির বিধায়ক। আর স্ত্রী অনীতাকে পাশে বসিয়ে অশোক বলেন, ‘‘হাতিয়ার ওঠানো ছিল সময়ের দাবি। এখন সেই দাবি তোলার সময় নয়, কলম ধরার সময়। এটা রাজনীতির মাঠে জবাব দেওয়ার সময়।’’ স্বামীর কথার সুর ধরে অনীতার মন্তব্য, ‘‘পরিবর্তন প্রকৃতিরই শর্ত। একে মেনে নিয়েই মানুষকে এগিয়ে যেতে হবে।’’

হ্যাঁ, গ্যাংস্টার ও তাঁদের পরিবারের মুখে যেমন শোনা যাচ্ছে পরিবর্তনের কথা, তেমনি লড়াইয়ের আঙ্গিকেও বদল এসেছে। বাহুবলীরা আগেও পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের পরিবারের সদস্যদের ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজন হলেই টিকিটের জন্য দলবদল করিয়েছেন। এ বারেও দেখা যাচ্ছে সেই ছবি।

বিহারের এক সময়ের ত্রাস আনন্দ মোহনের স্ত্রী লাভলি আনন্দ শিওহর থেকে জেডিইউ-এর প্রার্থী হয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী ও নীতীশ কুমারের ছবি সামনে রেখে প্রচার করছেন তিনি। গোপালগঞ্জের জেলাশাসক জি কৃষ্ণাইয়াকে হত্যার ঘটনায় ১৬ বছর সাজা মেলার পর গত বছরেই জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন আনন্দ মোহন। তবে লাভলীকে সেই জেলাশাসক হত্যার কটাক্ষই শুনতে হচ্ছে। লাভলীর বিপক্ষে আরজেডির হয়ে লড়ছেন এক প্রাক্তন আইএএস আধিকারিকের স্ত্রী রীতু জয়সওয়াল। টিকিট মেলার আগে থেকেই প্রতিপক্ষকে নিশানা করে তিনি বলতে শুরু করেছেন— এক দিকে আইএএসের হত্যাকারীর স্ত্রী, অন্য দিকে আইএএসের স্ত্রী। মানুষ কাকে সংসদে পাঠাবেন, সেটা তাঁরাই ঠিক করবেন!

বাহুবলী অবধেশ মণ্ডলের স্ত্রী বীমা ভারতী এ ভাবেই প্রার্থী হয়েছেন পূর্ণিয়ায়। কংগ্রেসে যোগ দিলেও বাহুবলী পাপ্পু যাদব ওই আসনে বিরোধীদের মহাজোটের প্রার্থী হতে পারেননি। কংগ্রেসের থেকে আসনটি ছিনিয়ে নিয়ে পূর্ণিয়ায় আরজেডি বীমা ভারতীকে প্রার্থী করেছে। একই ছবি সিওয়ানে। সেখানে জেডিইউয়ের প্রার্থী হয়েছেন বাহুবলী রমেশ কুশওয়াহার স্ত্রী বিজয়লক্ষ্মী দেবী।

সংসদে মহিলা সংরক্ষণ চালু হওয়ার আগেই গ্যাংস্টারদের এমন প্রয়াসের সত্যিই জবাব নেই!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Bihar Spot Reporting

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।