E-Paper

পরিবারই শক্তি, বিজেপিকে বোঝাচ্ছেন কাত্যায়নীর ঠাকুরদা

তেজস্বীর স্ত্রীর সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। যতটুকু জানা যায়, তা হল, হরিয়ানার মেয়ে, পড়তেন দিল্লির নামকরা স্কুলে। পরে নাকি কিছুদিন এয়ার হস্টেসের চাকরিও করেছেন।

লালু প্রসাদের কোলে নাতনি কাত্যায়নী। পটনায়।

লালু প্রসাদের কোলে নাতনি কাত্যায়নী। পটনায়। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন সাহা

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০২
Share
Save

র‌্যাচেল গোদিনহো। নামটা উচ্চারণ করতে খুবই অসুবিধা। তাই পুত্রবধূ, ছোট ছেলে তেজস্বী যাদবের স্ত্রীর নামটা বদলে দিয়েছেন লালু যাদব। ছেলেকে বলে দিয়েছেন, বিয়ে তিনি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু বাড়িতে পুত্রবধূকে ওই নামে ডাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। নাম উচ্চারণ করতেই তো জিভ আটকে যায়। ফলে বিহারের এক নম্বর যাদব পরিবারে শ্বশুরের কল্যাণে পুত্রবধূর নতুন নাম, রাজশ্রী যাদব।

তেজস্বীর স্ত্রীর সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। যতটুকু জানা যায়, তা হল, হরিয়ানার মেয়ে, পড়তেন দিল্লির নামকরা স্কুলে। পরে নাকি কিছুদিন এয়ার হস্টেসের চাকরিও করেছেন। দিল্লিতে লালু-কন্যা মিশা ভারতীর বাংলোয় অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে সহপাঠীকে বিয়ে করেছেন তেজস্বী। সেটাও আড়াই বছর আগের ঘটনা।

মেয়েটি খ্রিস্টান। ছেলে হিন্দু। নিখাদ প্রেমের বিয়ে। কিন্তু নিন্দুকের তাতে কী আসে যায়! ঝোপের মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে বসে তাই সে বলে উঠল, যারা জাত নিয়ে রাজনীতি করে, তারাই ভিন্ ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করেছে!

কিন্তু বহু ঝড় সামলে এসেছে যে গাছ, পাতা ওড়ার ভয় সে পায় না। গেরুয়া শিবিরে কানাঘুষো শুরু হতেই ছেলের বউয়ের নামটাই বদলে দিয়ে বার্তা দিয়েছেন লালু। আর তেজস্বী বলেছেন, ওরা বলে আমি নাকি জাত নিয়ে কথা বলি। তা-ই যদি হত, খ্রিস্টান মেয়েকে বিয়ে করতাম?

লোকসভা ভোটের মুখে সে সব বিতর্ক অবশ্য জোরালো ভাবে নেই, কানাঘুষো শোনা যায়। বরং তেজস্বী-রাজশ্রীর কোলে এসেছে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। লালু-রাবড়ী আদর করে নাম রেখেছেন, কাত্যায়নী। ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে নিজের দু’টি নামকেই রেখে এখন শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে মেয়ের জন্মদিনের ছবি পোস্ট করছেন র‌্যাচেল যাদব!

সত্যি বলতে কী, বড় ছেলে তেজপ্রতাপের জীবনে দাম্পত্য জটিলতা ও বিচ্ছেদের ব্যাপারটা বাদ দিলে লালু পরিবারে সম্পর্কের বড়সড় সঙ্কট নেই। আর ভিত যেখানে মজবুত, সেখানে ইমারতকে ছড়িয়ে দিতে অসুবিধা কোথায়? পরিবারতন্ত্র নিয়ে অনেক কথা বলে বেড়ায় বিজেপি। লালু কিন্তু ঘরোয়া মহলে বলেন, পরিবার হল সম্পদ। পরিবারের লোক যদি দায়িত্ব ভাগ করে নেয়, ক্ষতি কোথায়? আর আরজেডির ছোটবড় নেতারা তখন বিজেপির পরিবারতন্ত্র নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে বেড়ান।

পরিবারতন্ত্র নিয়ে মোদী-অমিত শাহদের প্রচার এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিয়ে নিজের বড় কন্যা মিশা ভারতীকে এ বারও পাটালিপুত্র কেন্দ্রে প্রার্থী করেছেন লালু। রাজ্যসভার সাংসদ মিশার উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা পটনার রাজনীতির অঙ্গনে কান পাতলেই শোনা যায়। আর এক কন্যা রোহিনী আচার্য বাবাকে কিডনি দান করে নতুন জীবন দিয়েছেন। বাবা তাঁর কন্যাকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করেছেন নিজেদের স্মৃতিবিজরিত কেন্দ্র সারণে। লালুর প্রতি রোহিনীর ভালবাসা তাঁকে পরিবার ও দলে উচ্চাসনে বসিয়েছে।

তবে এঁদের কেউই ছোট ছেলে তেজস্বীকে দেওয়া রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে আসেননি। ভাই-বোনেদের লড়াইয়ের খবরও এখন শোনা যাচ্ছে না। ফলে লালু অসুস্থ হলেও বিহারের লোকসভা ভোটে পরিবারের জমিকে ধরে রাখতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তেজস্বী-মিশা-রোহিনীরা।

আর তেজপ্রতাপ? মানুষটি বড়ই বিচিত্র স্বভাবের। তেজস্বীর বিয়ে নিয়ে মামা সাধু যাদব যখন জলঘোলা শুরু করেছিলেন, মামাকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন কৃষ্ণভক্ত তেজপ্রতাপ। পরে ‘দ্বিতীয় লালুপ্রসাদ’ আখ্যা দেন নিজেকে। তিনি জানিয়েছিলেন, মানুষ চাইলে বাবা লালুপ্রসাদের কেন্দ্র সারণ থেকে লড়তেও পারেন। আরজেডির কর্মীদের মধ্যে তখন তেজস্বীর নেতৃত্ব নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। বড় ছেলেকে লালু বিধায়ক করেছেন, নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভায় বিহারের মন্ত্রী হয়েছিলেন তেজপ্রতাপ। শোনা যায়, স্ত্রী রাবড়ী দেবীর চাপের মুখেই নাকি এ সব করেছিলেন লালু। কিন্তু তেজপ্রতাপের এখন আগ্রহ ইউটিউবে ভিডিয়ো তৈরিতে। বাবা-মায়ের নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে তিনি নিজের চ্যানেলের নাম দিয়েছেন— এল আর ভ্লগ। এখন সেই চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বাড়াতেই ব্যস্ততা বেশি।

লালুর দু’ছেলের কাজের ফারাকের একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে। বেকারত্ব আর মূল্যবৃদ্ধিকে বড় ইস্যু করে ভোটে ঝাঁপিয়েছেন তেজস্বী। টক্কর দিচ্ছেন বিজেপি-নীতীশের সঙ্গে। আর তেজপ্রতাপ? দামি গাড়িতে চড়ে, নিরাপত্তারক্ষীদের পাশে নিয়ে একদিন পৌঁছে গেলেন পটনায় বস্তিতে। সেখান থেকে গরিব পরিবারের দু’টি শিশুকে নিজের গাড়িতে তুলে নিলেন। এক দিনের মধ্যে তাদের স্বপ্ন পূরণ করবেন বলে ওদের নিয়ে প্রথমে হেয়ারকাটিং সেলুন, পরে পিৎজ়ার দোকান। পড়ার বই দিলেন শিশুদের হাতে। কখনও তেজপ্রতাপের খোঁজ মিলছে রাবড়ী দেবীর সরকারি বাসভবনের পিছনে থাকা গোয়ালঘরে। সদ্যজাত বাছুরকে আদর করে উল্লসিত হয়ে উঠছেন।

তেজপ্রতাপের দামি গাড়ির কথা হচ্ছিল। এই ফাঁকে একটা তথ্য জানিয়ে দেওয়া যাক। লালু পরিবারের সমৃদ্ধির সূচকটা যেখানে ধরা পড়বে। সাতের দশকে ছাত্রনেতা লালুপ্রসাদ ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে জয়প্রকাশ নারায়ণের লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন। সাতাত্তরে দশ হাজার টাকা দিয়ে তিনি কিনেছিলেন সেনার বাতিল করা একটি জিপ। এরপর নব্বইয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বছরে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কেনেন একটি মারুতি গাড়ি। আর ২০১৫ সালে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে সেই লালু-রাবড়ীই কিনেছেন মার্সিডিজ় বেনৎজ় কার। রাবড়ী তাঁর সম্পত্তির হলফনামায় গোয়ালঘরে গরুর হিসাব দেওয়ার পাশাপাশি মার্সিডিজ় এমনকি জার্মানিতে তৈরি পিস্তল, এনপি বোর রাইফেল, দোনলা বন্দুক রাখার কথাও জানিয়েছিলেন!

তবে, সেই যে বলে— কাহারও সমান নাহি যায়। জীবনে অনেক জল ঝড় সামলেছেন ঠিকই, তবু এত সমৃদ্ধির পরেও জেলে যেতে হয়েছে লালুকে। রাঁচীর জেল থেকে বেরোনোর পরেই বয়সের ভার আর অসুস্থতা শরীরকে ক্লান্ত করেছে। আপাতত তিনি ঘরবন্দি। এক বার শুধু রোহিনীর জন্য সভা করতে সারণে গিয়েছেন। এ ছাড়া, বেশিরভাগ সময়টাই টেলিভিশনে চোখ লাগিয়ে দেখেন রাজনীতির মাঠে ছেলেমেয়েদের পারফরম্যান্স। নজর রাখেন রাজনীতিতে শত্রু শিবিরের গতিবিধির উপর। কারণ, তেজস্বী যতই খেলুক, আজও গোলপোস্টে দাঁড়িয়ে তো তিনিই।

শরীর বুঝিয়ে দিচ্ছে, রাজনীতিতে লড়াইয়ের জীবনটা শেষ হতে চলল। তবে মার্গদর্শকমণ্ডলীতে বসে থাকা চির-প্রতিপক্ষ আডবাণীর মতো নয়, জীবনের শেষ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে বিহারে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা জিতে যেতে চান লালুপ্রসাদ। ছেলে তেজস্বীর উপরে যে অনেক ভরসা তাঁর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Bihar Lalu Prasad Yadav BJP Spot Reporting

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।