—প্রতীকী চিত্র।
মন্দির-মসজিদ, দলিত-মুসলিম, চিন-পাকিস্তান, আমিষ-নিরামিষ, এই সব কিছু নিয়ে নির্বাচনে আলোচনা হয়। ছোট ও মাঝারি শিল্প নিয়ে এ দেশের ভোটের ময়দানে কেন তর্কবিতর্ক হয় না বলতে পারেন?
ফরিদাবাদ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের দফতরে কফির আড্ডায় এক শিল্পপতি প্রশ্নটা তুললেন। তার পরে নিজেই বললেন, ‘‘নোট বাতিলে সবথেকে মার খেয়েছিল ছোট-মাঝারি শিল্প। জিএসটি-র পরেও এই ছোটখাটো শিল্প সবথেকে মার খেয়েছে। অথচ ভোট এলে কেউ ছোট-মাঝারি শিল্প নিয়ে কথা বলে না। সবটাই ধর্ম, জাতপাতের তর্ক হয়ে যায়।’’ কথা শেষ করেই অনুরোধ এল, ‘‘নামটা আবার লিখে দেবেন না।’’
দেশের রাজধানী দিল্লি থেকে বেরিয়ে হরিয়ানার সীমানা পার হলেই ফরিদাবাদ। ফরিদাবাদ ও পালওয়াল মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার শিল্প কারখানা। এই ফরিদাবাদে তৈরি হয় না, এমন নাকি পণ্য নেই। সিংহভাগই ছোট-মাঝারি শিল্প। এক সময় ফরিদাবাদকে বলা হত, ‘উত্তর ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার’। আর এখন?
ফরিদাবাদের ছোট-মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলির সংগঠন ‘আইএমএসএমই’ বা ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাসোসিয়েশন অব মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ়েস’-এর কর্তারা বলছেন, ছোট-মাঝারি শিল্পের নানাবিধ সমস্যা রয়েছে ঠিকই। সবথেকে বড় সমস্যা হল, ফরিদাবাদ বা হরিয়ানায় ভোটের প্রার্থীরা দূরে থাক, গোটা লোকসভা নির্বাচনেই ছোট-মাঝারি শিল্প নিয়ে কেউ কথা বলছে না।
ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, বছরে ২ কোটি চাকরি। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ দূরে থাক, মোদী সরকারের দশ বছরের রাজত্বের জেরে বেকারত্বই দেশের মূল সমস্যা বলে রাহুল গান্ধী অভিযোগ তুলেছেন। ম্যাকিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৬২ শতাংশই ছোট-মাঝারি শিল্পে। উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে ৭৭ শতাংশ কর্মসংস্থান হয় ছোট-মাঝারি শিল্পে।
তা হলে ভোটের বাজারে ছোট-মাঝারি শিল্প নিয়ে কথা নেই কেন?
ফরিদাবাদে গাড়ির ছোটখাটো যন্ত্রাংশ নির্মাণ কারখানার মালিক রমেশ চাওলার সঙ্গে দেখা হল তাঁর দফতরে। এক সময় রাজনীতি করতেন। নির্দল প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় নির্বাচনে লড়েছেন। তাঁর মোবাইলে কংগ্রেস ও বিজেপি, দুই দলেরই ইস্তাহার পিডিএফ ফাইলে রেখে দিয়েছেন। রমেশ বলেন, ‘‘এই যে কংগ্রেসের ইস্তাহারে কী রয়েছে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশে প্রশ্ন তুলে বেড়াচ্ছেন! উনি কি জানেন, কংগ্রেসের ইস্তাহারে ছোট-মাঝারি শিল্প নিয়ে কী রয়েছে? বিজেপির ইস্তাহারে ছোট-মাঝারি শিল্প নিয়ে কী রয়েছে, তা নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের মুখেও একটি কথাও শুনিনি।’’
ছোট-মাঝারি শিল্প নিয়ে কী রয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেসের ইস্তেহারে?
রমেশ মোবাইল খুলে দেখালেন, কংগ্রেস বলেছে, যদি কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে, ছোট-মাঝারি শিল্পে করের বোঝা কমানো হবে। দোকানদার, খুচরো ব্যবসায়ীরা অনলাইন বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ার কঠিন সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদেরও করের সুরাহা দেওয়া হবে।
আর বিজেপি?
বিজেপি তার ইস্তাহারে ছোট-মাঝারি শিল্প নিয়ে মাত্র একটি বিষয় রেখেছে। অ্যামাজ়ন, ফ্লিপকার্টের মতো অনলাইন ব্যবসার মোকাবিলায় মোদী সরকার ‘ওপেন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কমার্স’ চালু করেছে। যেখানে যে কেউ নিজের পণ্য বেচতে পারবেন। ছোট ব্যবসায়ী, ছোট-মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলিকে এই ব্যবস্থা কাজে লাগানোর দিকে জোর দেওয়া হবে বলে বিজেপি জানিয়েছে।
রমেশ এর পরে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এই যে বিজেপির ইস্তাহারে ছোট-মাঝারি শিল্প নিয়ে একটির বেশি বাক্য নেই, তা নিয়ে কংগ্রেস বা অন্য কোনও বিরোধী দলকে প্রশ্ন তুলতে শুনেছেন?”
ফরিদাবাদ থেকে ফেরার পথে ফরিদাবাদ ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশনের দফতরে ঢুঁ মারা গেল। এবং সেখানেও একই প্রশ্ন। ফরিদাবাদের ছোট শিল্পের উন্নতির জন্য আরও আধুনিক পরিকাঠামো চাই। ফরিদাবাদকে অন্যান্য শিল্প শহরের সঙ্গে প্রতিযেগিতায় টিকে থাকতে গেলে নতুন ‘বিজ়নেস মডেল’ ভাবতে হবে। কিন্তু লোকসভা ভোটের প্রার্থীরা তো কেউ এ সব নিয়ে কথাই বলছেন না। রামমন্দির থেকে ভোট জেহাদ, জাতগণনা থেকে সংরক্ষণ, সবই শোনা যাচ্ছে। শিল্প, রুটিরুজির কথা বাদ।
গোটা ফরিদাবাদে শিল্পপতি, কারখানার মালিকদের একটা কথা অবশ্য বারবার শোনা গেল। ‘‘নামটা যেন লিখে দেবেন না।’’ (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy