E-Paper

‘ভোট দিলেই নোটায়’, মোদীর বিরুদ্ধে ফুঁসছে ইম্ফল

রাত প্রায় ১০টা। রাস্তার পাশে নুপি বা মহিলাদের ছাউনিতে রান্নাবান্না চাপানো হয়েছে সদ্য। একে একে জড়ো হচ্ছেন পাড়ার মহিলারা। ব্যাপার জানতে দাঁড়িয়ে পড়লাম।

manipur

ইম্ফলে রাস্তার পাশে বসে নজরদারি মহিলাদের। — নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:০৪
Share
Save

‘‘হাম সব নোটা পার্টি হ্যায়!’’

নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড় শুরু এই জমিতেই। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন পোলো খেলার মাঠ হপ্তা কাংজেইবাম ভরিয়ে দিয়েছিল জনতা। হাত উপুড় করে ভোটও দিয়েছিল ‘পদ্মপাত্রে’। মোদী বলেছিলেন, এই ভূমি তাঁর কাছে পবিত্র। বলেছিলেন বিজেপির আমলে সব দুর্দিন অতীত হয়ে সুদিনের সূচনা হল।

সেটা ছিল ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সে দিন তিনি রাজ্যে ‘১০০ দিনে সুদিন আনা’র গ্যারান্টি দিয়ে গিয়েছিলেন। ঠিক এক দশকের মাথায় সেই জমিই ফুঁসছে তাঁর বিরুদ্ধে। স্লোগান উঠছে, ‘‘নো পিস, নো ভোট!’’ মহিলারা সমস্বরে বলছেন, ভোট দিতেই হলে টিপবেন নোটা-র বোতাম। শরণার্থী থেকে আশ্রয়দাতা- সব কণ্ঠে একই সুর।

রাত প্রায় ১০টা। রাস্তার পাশে নুপি বা মহিলাদের ছাউনিতে রান্নাবান্না চাপানো হয়েছে সদ্য। একে একে জড়ো হচ্ছেন পাড়ার মহিলারা। ব্যাপার জানতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। রাজ্যে হিন্দি সিনেমা দেখানো বন্ধ বলেই হয়তো হিন্দি বলা ও বোঝার চল একেবারেই কম এখানে। তার উপরে ভোটের কথা জিজ্ঞাসা করতেই উত্তেজনার চোটে আরও কথা হারালেন লালধনি দেবী। তার মধ্যেও প্রতিশব্দ হাতড়ে যা বললেন তার অর্থ, “কিসের ভোট। সরকার ১১ মাসেও শান্তি আনতে পারল না। কোন মুখে ভোট চাইবে?”

মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পদত্যাগের দাবি যখন প্রবল, তখনই এক দিন পদত্যাগপত্র হাতে গাড়ির কনভয় নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। রাস্তায় মহিলা বাহিনীর পথরোধ ও তাঁর পদত্যাগপত্র ছিঁড়ে ফেলার চিত্রনাট্যকে হাতিয়ার করে বিজেপি দাবি করছিল, মহিলারাই বীরেনকে বলছেন ‘যেতে নাহি দিব’!

ইম্ফলে পাড়ার মোড়ে মোড়ে মহিলাদের নৈশ ছাউনি কিন্তু বলছে অন্য কথা। জানা গেল, মণিপুরের অধিকাংশ মেইরা পাইবি (মহিলাদের সংগঠন) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হয় ভোট বয়কট করবে, না হলে ভোট দেবে নোটাতেই। ‘‘নো সলিউশন, নো ইলেকশন।’’

সংঘর্ষের ১০ মাসেও নরেন্দ্র মোদীর মণিপুরে না আসা ও মণিপুর নিয়ে নীরবতা মেনে নিতে পারছেন না ইম্ফলবাসী। থকচম সরলা বলছিলেন, “জানেন তো, এই ইম্ফলের জনসভা দিয়েই ২০১৪ সালে দেশে ভোট প্রচার শুরু করেছিলেন মোদী। আমিও ছিলাম সেই মাঠে। বলেছিলেন, মণিপুর তাঁর জন্য লাকি! আর আজ যখন বিজেপির আমলে মণিপুরের ব্যাড লাক চলছে, মোদী আমাদের দিব্যি ভুলে থাকলেন! এই বিশ্বাসঘাতকতা অসহ্য।”

লালধনি তত ক্ষণে রেগে আরও লাল! বলছিলেন, “এত দিন বিজেপিকে ভোট দিলাম। বদলে বর্মা থেকে আসা লোকেরা আমাদের ছেলেগুলোকে মেরে দিল। হাজার হাজার মণিপুরি ত্রাণশিবিরে আছে। তাই বিজেপি, কংগ্রেস বা অন্য কাউকে ভোট দেব না আমরা।”

ভোটের আর ১৮ দিন বাকি। নির্বাচনী সভা দূরের কথা, কোনও দেওয়াল লিখন, পোস্টার-ব্যানার চোখে পড়ল না। মেইরা সদস্যেরা জানালেন, সব প্রার্থীরা জেনে গিয়েছেন পাড়ায়-পাড়ায় ভোট প্রচার বয়কট করা হয়েছে। তাই ওঁরা প্রচার চালাতে আসার সাহসই পাচ্ছেন না।

পাড়ার সব বাড়ির মহিলারাই মহিলা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক ও সদস্য। সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে প্রতি রাতে সব এলাকার মহিলারা এ ভাবেই বাড়ির কাজ সেরে রাস্তার পাশে এসে ছাউনিতে একজোট হয়ে বসছেন। নজর রাখছেন রাস্তায়। যাতে বাইরের কেউ এসে শান্তিভঙ্গ না করতে পারে।

কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন?

সেই উত্তরই সরকারের কাছে তলব করছেন ইম্ফলের বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মোরে, সেরো, কাকচিং থেকে আসা শরণার্থীরাও। মোরে থেকে পালিয়ে আসা চিংথাম ইবাচা, সেরোর ধীরেন থচকম, কে গোবিন্দেরা ঘরপোড়া মানুষ। তাঁদের সকলে সমস্বরে বলছেন, মোদী-বীরেন সব সরকার ব্যর্থ। আগে ঘর গড়ে দিক সরকার। খামোকা ক্ষমতা দখলের খেলায় কোনও ভূমিকাই নিতে চান না সবহারাদের দল।

মহিলাচালিত ইমা বাজারেও দোকানিদের গলায় একই সুর। বিনীতা দেবী, রমলা দেবীরা ফানেখ, চাদর, শালের পসরা গোছাতে গোছাতে বলছিলেন, ভোটের কোনও পরিবেশই নেই এখানে। প্রার্থীদের মুখও দেখতে চাই না। খাস ইম্ফলে বিজেপির পরিস্থিতি বেজায় বেগতিক। তাই হয়তো হঠাৎ করেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চলা মেইতেইদের তথাকথিত রক্ষাকারী, প্রভাবশালী ও সশস্ত্র আরাম্বাই টেঙ্গল বাহিনী শনিবার নির্বাচনী প্রচারবিধি ঘোষণা করে বলে দিল, অশান্ত পরিস্থিতিতে কোনও প্রার্থীর প্রচার সভা, বনভোজন, পতাকা উত্তোলনের দরকার নেই।

এ ভাবে লাঠি না ভেঙে সাপ না হয় মারা গেল। কিন্তু দলের ‘কোটার’ ভোট সব নোটায় পড়লে শাসকের শেষ রক্ষা হবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কায় পদ্মপক্ষ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Manipur PM Narendra Modi BJP Spot Reporting

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।