—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ছিল রুমাল, হল বেড়াল। বা কাউকে মগডালে তুলে ফেলে দেওয়া হল নীচে। এ ভাবেই বিষয়টা দেখছেন কেউ কেউ। মঙ্গলবার দিন শেষে মনে হচ্ছে, যে-ই জিতুক, হারুক— ভরাডুবি এগ্জ়িট পোল বা বুথ-ফেরত সমীক্ষারই।
২০২৪-এর লোকসভা ভোট গণনার দিনটি অনেকেরই মনে গেঁথে থাকবে, এগ্জ়িট পোল-খ্যাত ‘অ্যাক্সিস পোল ইন্ডিয়া’-র কর্ণধার প্রদীপ গুপ্তের জন্য। বুথ-ফেরত সমীক্ষায় এনডিএ-কে ‘৪০০ পার’ আসন দিয়েছিলেন প্রদীপেরা। টিভি চ্যানেলে তাঁকে এ দিন অঝোরে কাঁদতে দেখা গিয়েছে।
মানুষ মাত্রেরই ভুল হয়! অতীতে অনেক ভোটের ফল প্রদীপেরা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়েছিলেন। এ বারের বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও তাঁদের সব অঙ্ক ভুল হয়নি বলে টিভি সাংবাদিকেরা প্রদীপকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, দু’হাতে চোখ ঢেকে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন প্রদীপ।
ভোট বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশেই বেশির ভাগ ‘এগ্জ়িট পোল’-এর মুখ পুড়েছে। রাজনৈতিক কর্মী প্রসেনজিৎ বসু এই বুথ-ফেরত সমীক্ষার কেলেঙ্কারির অপরাধীদের সাজার দাবি তুলে নির্বাচন কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট এবং সেবি-কে বিষয়টি দেখার আর্জিও জানিয়েছেন।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী মনে করেন, “বুথ-ফেরত সমীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে অনেক স্বচ্ছতা দরকার।” দেশের প্রাক্তন সংস্কৃতি সচিব তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার বেশির ভাগ বুথ-ফেরত সমীক্ষককে ‘গোদি পোলস্টার’ আখ্যা দিয়ে ইচ্ছাকৃত মিথ্যার বেসাতি করার অভিযোগ এনেছেন। জহরের অভিযোগ, “ওঁরা বিপাকে পড়েছেন বুঝেই মোদী-শাহ শেয়ারবাজার নিয়ে পূর্বাভাস করেছিলেন। শেয়ারের পতনে ছোট শেয়ার কারবারিদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি হল। আর বিজেপি-ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতিদের পোয়া বারো।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলছেন, “এত বড় দেশের বুথ-ফেরত সমীক্ষাগুলির পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকেই। কেউ এক কোটি লোককে দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছে বললেও অত খরচ বিশ্বাসযোগ্য নয়। তা ছাড়া নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতিও স্পষ্ট নয়। সুতরাং এ সব মূলত বিনোদন।” ভোটের আগের দিনই শুভময় বলেন, “এগ্জ়িট পোল যা-ই বলুক, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রবণতা খতিয়ে দেখে বিজেপি তৃণমূলের থেকে বেশি আসন পেলে অবাক হব!” ফল প্রকাশের পরে তিনি বলছেন, “মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গে এগ্জ়িট পোলের ভুল ধরতে পেরেছিলাম। তবে উত্তরপ্রদেশ আমাকেও অবাক করেছে। অযোধ্যায় বিজেপির হার বোঝাচ্ছে, ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতিই এ দেশে সব সময়ে শেষ কথা বলে না।”
সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো নীলাঞ্জন সরকারও বলছেন, “বুথ ফেরত সমীক্ষার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতায় খামতি রয়েছে। অনেকে ভোটার তালিকা ধরে র্যান্ডম স্যাম্পলিং বা নমুনা সংগ্রহ করেন। কিন্তু কার কাছ থেকে কী তথ্য এল, তার সবটা জনসমক্ষে ফাঁস করেন না। কে উত্তর দিলেন না বা ঘুরিয়ে উত্তর দিলেন, এ সবও বিশ্লেষণ করা দরকার।” তবে এ বারের বুথ ফেরত সমীক্ষাকে চক্রান্ত বলতে রাজি নন নীলাঞ্জন। তাঁর মতে, বিজেপির পক্ষে বা বিপক্ষে আগেও পূর্বাভাসে ভুল হয়েছে।
তবু বুথ-ফেরত সমীক্ষার হারকে দেশের গণতন্ত্রের জয় বলে দেখছেন দীপেশ। তাঁর মতে, “এই নিরপেক্ষ ভোটের জন্য বিজেপিরও কৃতিত্ব প্রাপ্য। অনেক পড়শি দেশের তুলনায় ভারতের ভোট ব্যবস্থা অবাধ, এটা তো প্রমাণ হল!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy