উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরায় নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেস প্রার্থী কানহাইয়া কুমার। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
ভোটের মুখে মেরুকরণের তীব্র হাওয়া বার বার অতীতকে উস্কে দিয়ে অস্বস্তিতে ফেলে চলেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির কংগ্রেস প্রার্থী কানহাইয়া কুমারকে।
‘‘প্রত্যেকের একটা প্রাণ ভোমরা থাকে জানেন তো’’— বলেই ভরসন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন রবীন্দ্র কুমার। দু’হাত দূরে মঞ্চ হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে কানহাইয়া ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ভজনপুরা মেন মার্কেটে প্রচারের শেষবেলায় কেজরী এসেছেন উত্তর-পূর্ব কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে। দশ হাত চওড়া গলিতে ক্রমশ ভিড় নামছে দেখে নিজের দোকানেও শাটার নামিয়ে দেন রবীন্দ্র। তত ক্ষণে শাটার নেমে গিয়েছে পাশের হোসিয়ারি বা ডেকরেটার্সের দোকানে। নিজের দোকানে শেষ তালাটি ভাল করে টেনে, নিশ্চিত হয়ে ফের খেই ধরলেন রবীন্দ্র। বললেন, ‘‘ওই যে বললাম প্রাণ ভোমরা। কেজরীওয়ালের প্রাণভোমরা আবগারি দুর্নীতিতে আটকে, আর কানহাইয়ার টুকরে টুকরে গ্যাং-এ। দিল্লির বুকে দাঁড়িয়ে ভারতকে টুকরো করার যে দাবি কানহাইয়া ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে উঠেছিল, তা মিথ্যে প্রমাণিত হলেও সেই অতীত আজও কানহাইয়ার পিছু ছাড়েনি।’’ মুচকি হেসে ভিড়ে মিশে গেলেন রবীন্দ্র।
টানা আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পরে কানহাইয়া যখন মঞ্চে উঠলেন, তখন গোটা এলাকা জুড়ে শব্দব্রহ্ম। এক দিকে তাঁর সমর্থনে জয়ধ্বনি, অন্য দিকে প্রায় সম-ডেসিবেলে আওয়াজ উঠেছে মোদী-মোদী। কানহাইয়াকে কটাক্ষ করে ‘ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে’-স্লোগান উঠতে থাকে ইতি-উতি। বিজেপির এ ধরনের আক্রমণের সামনে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন কানহাইয়া। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যদি দোষীই হই, তা হলে পুলিশ কেন আমায় ছেড়ে দিল। কেন ১০ বছরে আমায় গ্রেফতার করা হল না।’’ সমস্যা হল, কানহাইয়া যত ওই কথা বলছেন, তত তাঁর বিরুদ্ধে দেশবিরোধিতার অভিযোগ এনে সরব হচ্ছে বিজেপি। লক্ষ্য মেরুকরণ। স্থানীয় আপ নেত্রী রেখা শর্মার কথায়, ‘‘বিজেপির কাছে সাম্প্রদায়িকতা ছাড়া কোনও বিষয় নেই। আমরা উন্নয়নের কথা বলছি। আর বিজেপি বিভাজনের। স্থানীয় মানুষ ঠিক করবেন একজন শিক্ষিত ব্যক্তিকে ভোট দেবেন, না কি ‘রিঙ্কির পাপা’ মনোজ তিওয়ারিকে। (মনোজের গাওয়া ‘রিঙ্কিয়া কে পাপা’ গানটি এতটাই জনপ্রিয় যে, বিরোধীরাই কটাক্ষ করে নয়, বিজেপি নেতারাও তাঁকে ‘রিঙ্কিয়া কে পাপা’ বলে ডেকে থাকেন।)
গত এক দশক ধরে জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ কানহাইয়া। দিল্লির জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসাবে প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন তিনি। ২০১৬ সালে সংসদে হামলাকারী আফজল গুরুর সমর্থনে জেএনইউ-তে হওয়া একটি সভায় ‘ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে’ বলে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কানহাইয়া ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। যদিও তদন্তে প্রমাণিত হয় ওই স্লোগান কানহাইয়া বা তাঁর সঙ্গীরা দেননি। ভিডিয়োটিতে জালিয়াতি করা হয়েছে। আফ্রিকান স্টাডিজ নিয়ে পিএইচডি করা কানহাইয়া ২০১৯ সালে বিহারের বেগুসরাই থেকে সিপিআইয়ের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ে হেরে যান। পরে কংগ্রেসে যোগদান ও এ বার দিল্লি থেকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।
মেরুকরণের হাওয়াতেই ভরসা রেখেছেন দু’বার উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে জিতে আসা মনোজ। দিল্লির অধিকাংশ আসনে বিজেপি প্রার্থী পরিবর্তন করলেও, এই আসনে পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের ভোটের কথা মাথায় রেখে গায়ক তথা অভিনেতা মনোজের উপরেই ভরসা রাখা হয়েছে। এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে বড় অংশই হলেন উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের। যাঁদের দিল্লিতে পূর্বাঞ্চলীয় বলা হয়। কানহাইয়া যেমন বিহারের তেমনি মনোজও উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বাসিন্দা। ভোজপুরি ওই গায়ক এক দিকে মেরুকরণের তীব্র হাওয়া ও অন্য দিকে পূর্বাঞ্চলীয় ভোট ব্যাঙ্কে ভর করে ফের লোকসভায় জিতবেন, আশা দলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy