—প্রতীকী ছবি।
—নব্বইয়ের দশকে চার লক্ষ টাকার মূল্য বোঝেন তো?
—তা বুঝি!
—তাহলেই ভাবুন, এই ব্যবসা করে ওই পরিমাণ টাকা হঠাৎ জোগাড় করা কত কষ্টের ছিল। কিন্তু ঘরের মানুষকে তো মরতে দিতে পারি না। অগত্যা...নগাঁও শহরের অভিজাত বাঙালি, ব্যবসায়ী পরিবার। সংস্কৃতিমনস্ক বলে পরিচিত। তা সেই বাঙালি পরিচয়ই কাল হয়েছিল আলফার রমরমার সময়ে। তৎকালীন দুঁদে জঙ্গি ১৯৯২ সালে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পরিবারের বড় ভাইকে। নাগাড়ে দৌরাত্ম্যের জেরে, এক সময়ে এখানকার ব্যবসা বন্ধ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে যাওয়ার কথাও ভাবছিলেন তাঁরা। আর এক বাঙালি ব্যবসায়ী পরিবারের ক্ষোভ, ১৯৯৬ সাল থেকে টানা অস্ত্র দেখিয়ে মোটা টাকা আদায় করেছে ওই জঙ্গি। সেই টাকায় এখন তার প্রাসাদোপম ঘরবাড়ি।
কংগ্রেসের সুভদ্র, শিক্ষিত সাংসদ প্রদ্যোৎ বরদলৈয়ের বিরুদ্ধে বিজেপির বাজি সুরেশ বরা। বর্তমানে তাঁর পরিচয় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী! ১৯টি যানবাহন, ৪০টি জমি ও চারটি বাড়ির মালিক সুরেশ ১৯৯১ সালে আলফায় যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন এরিয়া কমান্ডার। ২০০১ সালে প্রফুল্ল মহন্তর আমলে তিনি আত্মসমর্পণ করে অগপ-য় যোগ দেন। মহন্তর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। আবার ২০০৬ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ঘনিষ্ঠ হন তৎকালীন মন্ত্রী রকিবুল হুসেনের। মহন্তর বিরুদ্ধে বিধানসভায় লড়েন তিনি। তাঁর অতীত জেনেও আক্রমণ শানাতে অপারগ কংগ্রেস। কারণ, ১৭ বছর কংগ্রেস তাঁকে মাথায় তুলে রেখেছিল। গত বছর নভেম্বরে জেলা কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। যোগ দেন বিজেপিতে।
নওগাঁওয়ের এক অধ্যাপকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বললেন, “শিক্ষিত বাঙালি প্রদ্যোৎকেই পছন্দ করবেন। পুরোনো বাঙালি, যাঁরা আলফা কমান্ডার সুরেশের দাপটে নাজেহাল হয়েছেন, তাঁরাও হয়তো ভোট দেবেন না তাঁকে। কিন্তু তার পরেও আসন ধরে রাখা কঠিন হবে প্রদ্যোতের। কারণ, সীমানা পুনর্বিন্যাসের জেরে নগাঁওয়ের জনবিন্যাস বদলে গিয়েছে। গত বার ইউডিএফ এখানে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে না লড়ায় সুবিধা পেয়েছিলেন প্রদ্যোৎ। এ বার কংগ্রেসের ভরসা সংখ্যালঘু ভোটেও ভাগ বসাতে হাজির ইউডিএফের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম।” তাই সংসদে গত পাঁচ বছরে রাজ্যের জন্য সবচেয়ে সরব ও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার পরেও প্রদ্যোতের জয় নিয়ে নিশ্চিন্ত নয় কংগ্রেস।
নগাঁও বাঙালি সম্মিলনী বরাবরই নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রেখেছে। এ বার অবশ্য সরকারের তরফে এক কোটি টাকা অনুদান মিলেছে তহবিলে। সেখানকার এক সদস্য বলছিলেন, “ভোট ভাগাভাগি অন্যতম কারণ হলেও পাল্লা বিজেপির দিকে ঝুঁকে থাকার আরও এক বড় কারণ, নব্য হিন্দুত্ববাদ। যার জেরে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় অসমিয়া বা হিন্দিভাষীরা নয়, দলে দলে বাঙালি গাড়ি-বাইক নিয়ে সোল্লাস-মিছিল হাঁকিয়েছিল। সেখানে রামের নামে যত না জয়ধ্বনি হয়েছে, মোদীর নামে জয়ধ্বনি হয়েছে তার দ্বিগুণ।”
শহরের এক ধ্রুপদী গায়ক বলেন, “ওই সময়ে ঘরে-ঘরে ওড়া গেরুয়া পতাকা দেখে নিজের শহরকে গো-বলয়ের শহর বলে ভ্রম হচ্ছিল। এখনকার বর্তমান প্রজন্ম আগের কথা জানে না। তারা সকলে যুগের হাওয়াতেই গা ভাসিয়েছে। এই রামের নামে ভর করেই নগাঁও দখল করতে পারে বিজেপি।”
কার্যত সেই কৌশলই নিয়েছে পদ্ম শিবিরও। বিশেষ করে বাঙালি এলাকায়, যেখানে সুরেশ বরার অতীত নিয়ে আপত্তি রয়েছে, সেখানে প্রচারে বলা হচ্ছে, স্থানীয় প্রার্থী বড় কথা নয়, ভোট তো দিচ্ছেন মোদীকে, আপনাদের রক্ষাকর্তাকে। পুরনো বাঙালিদের অনেকেই বলছেন, ‘চার বারের সাংসদ রাজেন গোঁহাইয়ের সংসদে তেমন সক্রিয়তা না থাকলেও জনপ্রিয়তা ছিল। তিনি থাকলে বিজেপিকেই ভোট দিতাম। কিন্তু এখন দোলাচলে পড়েছি।’ শোনা গেল, রাম ও মোদীনামে যেখানে কাজ হচ্ছে না, সেখানে প্রচ্ছন্ন ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিলের চেষ্টাও চলছে।
ওই ওষুধ ব্যবসায়ী বলছিলেন, “বড় জ্যাঠার সঙ্গে কী হয়েছিল জেনেও বর্তমানে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই বিজেপিকে ভোট দেবেন জানি। বলবেন, আমরা তো মোদীকে
ভোট দিচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy