Advertisement
Back to
Abhijit Gangopadhyay

মমতাকে নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য: কমিশনকে জবাব দিতে তৈরি অভিজিৎ, ‘যা ঘটেছে সম্পূর্ণ ভাবে জানাব’

পূর্ব মেদিনীপুরের বিজেপি সূত্রে খবর, তৃণমূল সমাজমাধ্যমে অভিজিতের যে বক্তব্য ভাইরাল করেছে এবং সুতাহাটার জনসভায় বিজেপি প্রার্থী আসলে যা বলেছেন, তার মধ্যে ‘বিস্তর ফারাক’।

(বাঁ দিকে) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ১১:৩৪
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য নিয়ে নির্বাচন কমিশনের শো-কজ়ের জবাব দিতে প্রস্তুত তমলুক কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই কমিশনকে পাঠানোর জন্য জবাব ‘ড্রাফ্‌ট’ (খসড়া) করে ফেলেছেন তিনি। কাজ প্রায় শেষের দিকে। রবি বা সোমের মধ্যেই তিনি নিজের জবাব নির্বাচন কমিশনকে পাঠিয়ে দেবেন বলে আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি।

মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে অভিজিতের বিরুদ্ধে। কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতিকে নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। বৃহস্পতিবার ‘এক্স (সাবেক টুইটার)’ হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে তৃণমূল। তাতে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে ‘কুৎসিত এবং অশালীন’ ভাষায় আক্রমণ করেছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ। বুধবার হলদিয়ার চৈতন্যপুরে একটি সভা ছিল তমলুকের বিজেপি প্রার্থীর। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে তিনি নাকি বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তুমি কত টাকায় বিক্রি হও?’’ হলদিয়ার ওই সভার একটি ভিডিয়োও প্রকাশ্যে এসেছে। (যদিও আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি।) সেই ভিডিয়োতে অভিজিৎকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘তৃণমূল বলছে, রেখা পাত্রকে কেনা হয়েছিল ২০০০ টাকায়! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তুমি কত টাকায় বিক্রি হও? তোমার হাতে কেউ ৮ লক্ষ টাকা গুঁজে দিলে চাকরি হয়, কেউ ১০ লক্ষ টাকা দিলে রেশন হাওয়া হয়ে যায়! কেন তোমার দাম ১০ লক্ষ টাকা? তুমি কেয়া শেঠকে দিয়ে মুখে মেকআপ করাও বলে? আর রেখা পাত্র গরিব মানুষ, লোকের বাড়িতে কাজ করে, আমাদের প্রার্থী। সে জন্য তাঁকে ২০০০ টাকায় কেনা যায়?’’

এই নিয়েই অভিজিতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্যের জন্য তমলুকের পদ্মপ্রার্থীর বিরুদ্ধে কমিশনের দ্বারস্থও হয় তৃণমূল। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘অশালীন’ ভাষায় আক্রমণ করে ‘নিম্নরুচি’র পরিচয় দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি। নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি মামলা শুরু করতে হবে কমিশনকে। বিজেপি প্রার্থীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কোনও জনসভা, রোড-শোতে বা একান্ত সাক্ষাৎকারে যোগদানে তাঁকে বিরত রাখতে হবে। এর পরেই গত শুক্রবার অভিজিৎকে শো-কজ় করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে অভিজিৎকে তাঁর ওই আচরণের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। এ-ও জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন ওই মন্তব্যের জন্য অভিজিতের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে না।

তবে প্রাক্তন বিচারপতি কি কমিশনকে এই নিয়ে জবাব দিতে প্রস্তুত? এই নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে অভিজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি কমিশনকে জবাব দিতে প্রস্তুত। জবাবের চিঠি তিনি ইতিমধ্যেই ‘ড্রাফ্‌ট’ করে ফেলেছেন। রবিবার বিকেল বা সোমবার সকালে তিনি ওই চিঠি কমিশনে পাঠিয়ে দেবেন বলেও জানিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। যদিও কমিশনের জবাবে তিনি কী যুক্তি দিচ্ছেন, তা স্পষ্ট করেননি অভিজিৎ। তবে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যা ঘটনা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ ভাবে আমি কমিশনে জানাচ্ছি।’’ কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই তিনি তাঁর জবাব পাঠাতে চলেছেন বলেও জানিয়েছেন অভিজিৎ।

তবে পূর্ব মেদিনীপুরের বিজেপি সূত্রে খবর, তৃণমূল সমাজমাধ্যমে অভিজিতের যে বক্তব্য ভাইরাল করেছে এবং চৈতন্যপুরের জনসভায় বিজেপি প্রার্থী আসলে যা বলেছেন, তার মধ্যে ‘বিস্তর ফারাক’। জেলার বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, দুটো আলাদা ভিডিয়ো দেখলেই স্পষ্ট হবে যে তৃণমূলের আইটি সেল অভিজিতের বলা বিভিন্ন মন্তব্যের অংশ জুড়ে জুড়ে (এডিট করে) একটা ভিডিয়ো তৈরি করেছে এবং সেই ভিডিয়োই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছে। প্রকারান্তরে তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তমলুকের বিজেপি প্রার্থী এমন কোনও মন্তব্য করেননি যা ‘অশালীন’। যদিও সেই বিষয়ে নিজে কিছু বলেননি অভিজিৎ। নির্বাচন কমিশনকে তিনি যে চিঠি পাঠাবেন, সেখানেই সব স্পষ্ট করে লেখা থাকবে বলে প্রাক্তন বিচারপতি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, প্রচার চলাকালীন আচরণবিধি-বহির্ভূত মন্তব্যের জন্য ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবিরকেও শো-কজ় করেছিল কমিশন। তিনি তাঁর জবাবও দিয়েছিলেন। তবে কমিশন তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট নন। কমিশনের তরফে তাঁকে ‘সেন্সর’ করা হয়েছে। অর্থাৎ, লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন আর কোনও প্রচারসভায় বক্তৃতা করতে পারবেন না তিনি। কিন্তু প্রাক্তন বিচারপতির জবাবে কি কমিশন সন্তুষ্ট হবে? অভিজিতের স্পষ্ট মন্তব্য, ‘‘এটা আশা-নিরাশার ব্যাপার নয়। যা ঘটেছে এবং যে ভাবে ঘটেছে, তা আমি কমিশনকে জানাব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy