গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটপর্বের মাঝেই সমস্ত ভোটের বুথে ইভিএমের ফলের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মিলিয়ে দেখার আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ভিভিপ্যাট পদ্ধতির মাধ্যমে কাগজের স্লিপ-সহ বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) পাওয়া ভোটের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের (ক্রস-ভেরিফিকেশন) দাবিতে ওই আর্জির শুনানির পরে শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ। তবে বেঞ্চ জানিয়েছে, ভোটের ফলঘোষণার সাত দিন পরে নির্দিষ্ট অঙ্কের ‘ফি’ জমা দিয়ে ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনার আবেদন জানানো যেতে পারে।
আদালত শুক্রবার দু’টি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। রায় ঘোষণা করে, বিচারপতি খান্না নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন, স্ট্রংরুমে রাখা ইভিএমে প্রতীক লোড করার পরে ৪৫ দিনের জন্য প্রতীক লোড করার জন্য ব্যবহৃত ইউনিটগুলি সিল করে সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানকারী প্রার্থীদের অনুরোধে ফলাফল ঘোষণার পর ইভিএম মাইক্রোকন্ট্রোলার (যার মাধ্যমে ভিভিপ্যাট স্লিপ মেলে) যাচাই করার অনুমতিও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের নিশানা করেন। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা এত দিন ইভিএম নিয়ে কান্নাকাটি করত। তাদের সপাটে চড় মেরেছে সুপ্রিম কোর্ট। এ বার ওদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’
দেশের ১০০ শতাংশ বুথে ইভিএমের ফলের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মেলানোর দাবির বিরোধিতা আগেই করেছিল নির্বাচন কমিশন। তারা বলেছিল, সমস্ত বুথে ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মিলিয়ে দেখতে হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া আবার ব্যালট পেপারের জমানায় পিছিয়ে যাবে। গত বুধবার এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চও কিছুটা কমিশনের সুরেই কথা বলে। শীর্ষ আদালত জানায়, তারা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপও করতে পারে না। সেই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই শুক্রবার এ সংক্রান্ত রায় ঘোষণা করেছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি খন্নার মন্তব্য, ‘‘অন্ধভাবে অবিশ্বাস অযৌক্তিক সন্দেহের জন্ম দিতে পারে।’’
প্রসঙ্গত, ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হল কি না, ভিভিপ্যাট স্লিপের মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ রয়েছে ভোটারের। কিন্তু নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে কাজ করা সংস্থা, অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের (এডিআর) অভিযোগ, প্রতিটি বিধানসভায় ২০০টি ভিভিপ্যাট মেশিন থাকলেও পাঁচটির বেশি গণনাই করা হয় না! সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলার শুনানিতে এডিআরের আইনজীবী নিজ়াম পাশা গত সপ্তাহে বলেন, ‘‘ভিভিপ্যাট স্লিপ সংগ্রহ করে ব্যালট বাক্সে ফেলার সুযোগ দেওয়া উচিত ভোটারদের। জালিয়াতির সম্ভাবনা আটকাতে প্রতিটি ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনা করা উচিত।’’
সংস্থার আর এক আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এই মামলার শুনানিতে জানিয়েছিলেন, ইউরোপের অধিকাংশ দেশই ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট করাতে শুরু করেছে। ফলে ভারতেও ব্যালটে ফিরে যাওয়া যেতে পারে, অথবা ভিভিপ্যাট স্লিপ ভোটারদের হাতে দেওয়া হোক। তাঁরা সেটি ব্যালট বাক্সে জমা করবেন। কিন্তু সেই ব্যবস্থায় ভোটারের পছন্দের গোপনীয়তা রাখার গণতান্ত্রিক অধিকার বজায় থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি খন্না।
ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর সেই ভোট সঠিক জায়গায় পড়ল কি না, তা দেখিয়ে দেয় ভিভিপ্যাট। ভোট দেওয়ার সাত সেকেন্ডের মধ্যে একটি কাগজ প্রার্থীর নাম প্রতীক-সহ বেরিয়ে আসে মেশিন থেকে। তবে সেই কাগজ প্রার্থীদের হাতে যায় না। জমা হয় একটি পাত্রে। এত দিন নিয়ম ছিল, প্রতিটি এলাকা থেকে যে কোনও পাঁচটি বুথ বেছে নিয়ে সেখানে ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজের হিসাব মিলিয়ে দেখার। বিরোধী দলগুলি এবং বিভিন্ন নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সংস্থা ১০০ শতাংশ বুথে এই পদ্ধতি চালু করার আবেদন জানিয়েছিল।
গত বুধবার এই মামলার শুনানিতে নির্বাচন কমিশনকে চারটি প্রশ্ন করেছিল সুপ্রিম কোর্ট—
১. সমস্ত ভিভিপ্যাটেই কি মাইক্রো কন্ট্রোলার ইনস্টল করা আছে?
২. এই মাইক্রো কন্ট্রোলারকে কি এক বারই প্রোগ্রাম করা যায়?
৩. নির্বাচন কমিশনের কাছে কতগুলি সিম্বল লোডিং ইউনিট রয়েছে?
৪. নির্বাচনী হলফনামা জমা দেওয়ার সময় ৩০ দিন। আর সমস্ত রেকর্ড ৪৫ দিন পর্যন্ত মজুত করা থাকে। এই ভ্রম সংশোধন করা দরকার।
বেঞ্চ এই চার প্রশ্নের জবাব চেয়ে বলেছে, ‘‘আমরা এই উত্তরগুলি জানতে পারলে আমাদের হাতে সমস্ত তথ্য থাকবে সঠিক রায় দেওয়ার জন্য।’’ শুক্রবার এল সেই ‘সঠিক রায়’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy