Advertisement
E-Paper

নির্দল কুড়মি লড়লে ছাই কার পাতে? 

রবিবারই তৃণমূল রাজ্যের সব আসনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে। বিজেপি ২০টি আসনে ঘোষণা করেছে তারও আগে। পুরুলিয়া কেন্দ্রে দুই প্রধান দলেরই প্রার্থী কুড়মি সম্প্রদায়ের।

An image of vote

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রশান্ত পাল 

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৪ ০৯:০৩
Share
Save

কুড়মিদের শুধু আর ভোটার ভাবলে হবে না। এমনই দাবি করে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো ঘোষণা করেছেন, নিজেদের দাবি আদায়ে তাঁরা লোকসভা ভোটে লড়াইয়ে নামবেন। সে ক্ষেত্রে কুড়মি সম্প্রদায়ের ভোট কি পুরুলিয়ার কোনও রাজনৈতিক দলই পাবে না? না কি কুড়মিরা রাজনৈতিক ভাবাদর্শেই ভোট দেবেন? কুড়মিরা তাঁদের প্রার্থী ঘোষণা না করলেও এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে পুরুলিয়ায়।

জনজাতির স্বীকৃতি-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে মূলত রাজ্যের জঙ্গলমহলে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে কুড়মিদের কয়েকটি সংগঠন। রবিবার পুরুলিয়ার ছড়রার (হুলহুলি টাঁড়) সামাজিক আন্দোলনের (মহা জুড়ুআহি) মঞ্চ থেকে লোকসভা ভোটে লড়ার কথা ঘোষণা করেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতৃত্বাধীন একাধিক কুড়মি সংগঠনের সম্মিলিত মঞ্চ।

সামাজিক সংগঠন হলেও ভোট যুদ্ধে লড়ার স্বপক্ষে অজিতের যুক্তি, ‘‘এতদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে কুড়মি সম্প্রদায়ের নেতারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও তাঁরা আমাদের জাতিসত্তার দাবির বিষয়টি নিয়ে নীরবই থেকেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে দাবি তুলে ধরতে হলে আর কারও মুখাপেক্ষী থেকে নয়। নিজেদের দাবি নিজেদেরই তুলে ধরতে হবে। তাই ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত।’’

রবিবারই তৃণমূল রাজ্যের সব আসনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে। বিজেপি ২০টি আসনে ঘোষণা করেছে তারও আগে। পুরুলিয়া কেন্দ্রে দুই প্রধান দলেরই প্রার্থী কুড়মি সম্প্রদায়ের। তবে বাম-কংগ্রেস-সহ নানা দলের প্রার্থী ঘোষণা বাকি। তবুও কুড়মিরা পৃথক ভাবে ভোট-যুদ্ধে নামলে বড় দলগুলির কার লাভ, কার ক্ষতি তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেছে বিভিন্ন মহল।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনে কুড়মিদের একটা বড় অংশের ভোট পেয়ে সাংসদ হন বিজেপির জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। কারণ, তখন কুড়মিদের আন্দোলন ছিল রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিপক্ষে। তাদের দাবি ছিল, রাজ্য কেন্দ্রকে ফারদার জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট দিচ্ছে না। কুড়মি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের পাল্টা দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার দায় এড়াচ্ছে। ওই রিপোর্ট তারা চাইলেই ভারতীয় নৃতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কাছ থেকেই সংগ্রহ করতে পারে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় এসে জানিয়েছেন, কুড়মিদের জনজাতি দাবির সঙ্গে তিনি কার্যত সহমত।

আবার অনেকের মতে, কুড়মিরা একসময়ে সড়ক ও রেল অবরোধ করলেও, গত সেপ্টেম্বরে দু’রাজ্যে তাদের আন্দোলন ছিল মূলত রেল অবরোধ-কেন্দ্রীক। যা কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী। অর্থাৎ কুড়মিদের বড় অংশের মনোভাব বিজেপি-বিরোধী হতে পারে। যদিও বিজেপি তা মানেনি। আন্দোলনকারীরাও স্পষ্ট কিছু জানায়নি।

তবে সাবধানী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও নেতৃত্ব। বিজেপি প্রার্থী তথা সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘ওই মঞ্চ কিন্তু সমস্ত কুড়মিদের মঞ্চ নয়। কুড়মিদের কয়েকটি সংগঠনের মঞ্চ। ওদের সিদ্ধান্তে ভোটে আমাদের কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মনে রাখতে হবে, কুড়মিদের মধ্যেও বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ রয়েছেন।’’

পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর প্রশ্ন, ‘‘ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত কি সমগ্র কুড়মি জাতির? কারণ এর বাইরেও কুড়মিদের আরও সংগঠন রয়েছে। রবিবারের ওই সমাবেশে অন্য জেলা ও অন্য রাজ্যের কুড়মিরাও ছিলেন।’’ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক প্রদীপ রায় জানান, আগামী পাঁচ বছর দেশ কী ভাবে চলবে, দেশের সংবিধান অক্ষুণ্ণ থাকবে কি না, মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে কি না— এ রকম নানা প্রশ্নের উপরে লোকসভা ভোট হয়।’’

যদিও আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতোর দাবি, ‘‘কুড়মিরাই এখানে নির্ণায়ক-শক্তি। আমাদের প্রার্থীরাই জিতবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kurmi Lok Sabha Election 2024

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}