(বাঁ দিকে) বাড়িতে বসে ভোট দিচ্ছেন দুবরাজপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুদর্শন মণ্ডল, সিউড়ি ৬ নং ওয়ার্ড এর ক্যাওটপাড়ার বাড়িতে বসে ভোট দিলেন সুলেখা ঘোষ (ডান দিকে)। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত এবং তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
মহিমা বিবি ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের কানাচি গ্রামের বাসিন্দা। বয়স ১০১। বয়সের ভারে চলাফেরার শক্তি হারিয়েছেন বৃদ্ধা। পরিজনদের সহযোগিতায় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোট গিয়ে ভোট দিতে যেতে কষ্ট হত। কিন্তু মঙ্গলবার বাড়িতে বসেই ভোট দিয়েছেন শতায়ু ওই বৃদ্ধা।
বয়সের ভারে অশক্ত শরীরে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো ভীষণ কষ্টদায়ক ছিল দুবরাজপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুদর্শন মণ্ডল বা সিউড়ির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লক্ষ্মীদাসী ধীবর, কীর্ণাহার পঞ্চায়েত এলাকার নবতিপর মেনকা রায়ের পক্ষেও। বুথে যেতে সমস্যা ছিল শারীরিক প্রতিবন্ধী বোলপুরের গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা বিমলা শিকদার। এ দিন বাড়িতে বসে ভোট দিয়েছেন সকলেই।
শুধু মহিমা বিবি, লক্ষ্মীদাসী বা সুদর্শন বা বিমলা নন, জেলায় মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটকর্মীরা ইচ্ছুক বহু প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ভোটারদের বাড়িতে পৌঁছে ভোট নিলেন। বাড়িতে বসে ভোট দিতে পেরে খুশি সকলেই। তাঁরা বলছেন এই বয়সে কী ভাবে গিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়াব। বাড়িতে এসে ভোট নেওয়ায় আমাদের কোনও কষ্ট পেতে হয়নি।
গত বিধানসভা নির্বাচন থেকে আশির বেশি বয়স্ক ভোটার ও প্রতিবন্ধী ভোটারদের (যাঁদের প্রতিবন্ধকতা ৪০ শতাংশের বেশি) কষ্ট লাঘবে তাঁদের বাড়ি গিয়ে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এ বারও সেই সুযোগ অব্যাহত রেখেছে কমিশন। তবে প্রতিবন্ধী ভোটার বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ভোটারদের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন না হলেও এ বার প্রবীণদের বয়সসীমা ৮০ থেকে বাড়িয়ে ৮৫ বছর করা হয়েছে।
বাড়িতে ভোটদানে ইচ্ছুকদের ১২-ডি ফর্ম পূরণ করে সম্মতি জানাতে হত নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই। প্রশাসন এই সুবিধা দিতে প্রস্তুতি শুরু করেছিল আগেই। জানা গিয়েছে, প্রায় ৪৪ হাজার বাড়িতে ফর্ম পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। যদিও মোটের উপর তার আট ভাগের এক ভাগই পোস্টাল ব্যালটে বা বাড়িতে ভোট দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জন। তাঁদেরই ভোট নেওয়ার কাজ চলছে।
নিয়ম অনুয়ায়ী নির্বাচনের দিন থেকে তিনদিন আগেই ইচ্ছুক প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের বাড়ি গিয়ে ভোট পর্ব শেষ করার কথা। জেলায় যেহেতু ১৩ তারিখ ভোট, তাই জেলায় ৭ থেকে ৯ মে তিন দিন ইচ্ছুকদের বাড়িতে গিয়ে ভোট নেওয়ার দিন স্থির হয়েছিল। সেই সূচি মেনেই মঙ্গলবার থেকে পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটি ব্লকে একাধিক দল বাড়িতে গিয়ে ভোট নিয়েছেন। প্রতিটি দলে উপস্থিত থেকেছেন দু’জন পোলিং অফিসার, বিএলও, পুলিশ কর্মী, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে ভিডিওগ্রাফারের ক্যামেরার নজরদারিতে।
যাঁরা বাড়িতে বসে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলেন তাঁরা খুশি। কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সকলেই। সিউড়ি ২ ব্লকের অবিনাশপুর অঞ্চলের ইমাদপুরের বাসিন্দা বিশ্বশোভা ঘোষ তাঁদেরই একজন। দু’দশক আগে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়া মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাঁর কোমরের নীচের অংশ অসাড়। এই অবস্থায় বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার থেকে বাড়িতে ভোটের ব্যবস্থা হলে অবশ্যই সুবিধা হবে বলে বলছেন তিনি। তবে মঙ্গলবার তিনি ভোট দেননি। বুধবার তাঁর বাড়িতে আসবে কমিশনের টিম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy