Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

হাসিমুখে কুশল বিনিময়ে যুযুধান দুই প্রবীণ, সৌজন্যের কাছে হারল তিক্ততা

কামারহাটিতে ইদ উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক লড়াইকে কয়েক মুহূর্তের জন্য দূরে রেখে সৌজন্যের এমনই ছবি দেখা গেল দমদম লোকসভা কেন্দ্রের দুই প্রার্থীর মধ্যে।

দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় ও সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী, ইদের নমাজে একসঙ্গে কামারহাটির ছাইগাদা ময়দানে।

দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় ও সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী, ইদের নমাজে একসঙ্গে কামারহাটির ছাইগাদা ময়দানে। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১৫
Share: Save:

আচমকাই পিঠে হাত। কানে ভেসে এল, ‘‘কী সুজনবাবু, খুব ঘুরছেন তো।’’ শুনেই পিছন ফিরে পিঠে হাত রাখা তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়কে দেখে হেসে ফেললেন সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘সৌগতদা নাকি, শরীর ভাল তো? সুস্থ থাকবেন।’’

বৃহস্পতিবার সকালে কামারহাটিতে ইদ উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক লড়াইকে কয়েক মুহূর্তের জন্য দূরে রেখে সৌজন্যের এমনই ছবি দেখা গেল দমদম লোকসভা কেন্দ্রের দুই প্রার্থীর মধ্যে। পরে বর্ষীয়ান দুই নেতাই বলেছেন, ‘‘রাজনীতির বাইরেও তো ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকে। সেটা বজায় রাখাটাই সংস্কৃতি।’’

এ দিন অনুষ্ঠানটি ছিল কামারহাটি পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের ছাইগাদা ময়দানে। জানা যাচ্ছে, পুরসভার এক থেকে সাত নম্বর ওয়ার্ড সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত। ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫৭ হাজার। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছেই ওই এলাকা এক রকম ‘পাখির চোখ’। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে ওই এলাকায় প্রথম স্থানে ছিল সিপিএম। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে কামারহাটির ওই সাতটি ওয়ার্ড মিলিয়ে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে চলে যায় সিপিএম। এক নম্বরে উঠে আসে তৃণমূল।

রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ওই ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে শাসকদল যেমন মরিয়া, তেমনই ফের নিজেদের অবস্থান এক নম্বরে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম-ও। তাই ভোটারদের মনে জায়গা করে নিতে এ দিন সকালের ওই অনুষ্ঠানে দু’পক্ষের দুই প্রার্থীই উপস্থিত ছিলেন। যদিও এ দিন কোনও রাজনীতির বিষয় ছিল না বলেই দাবি করেছেন সৌগত-সুজন।

তবে, ভোটের প্রচারে এক পক্ষ অপর পক্ষকে এক হাত নিতে ছাড়ছেন না। কখনও সৌগত দাবি করছেন, ‘‘কোথাও জিততে না পেরে সুজন শেষে দমদমে এসেছেন।’’ পাল্টা হিসাবে সুজন প্রশ্ন তুলছেন, ১৫ বছরের সাংসদ সৌগতের কাজ নিয়ে।

কিন্তু এ দিন ছিল অন্য ছবি। সুজন-সৌগত একে অপরের হাত ধরে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করলেন। আবার সুজনের সঙ্গে থাকা, কামারহাটির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরতেও দেখা গেল সৌগতকে। পরে তিনি বলেন, ‘‘সুজন ও মানসের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। তাই দেখা হলে কথা তো হবেই। আমরা সকলেই চাই, ভোটটা শান্তিপূর্ণ ভাবে হোক।’’

অন্য দিকে, প্রাক্তন বিধায়ক মানসও জানাচ্ছেন, ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি ছাইগাদা ময়দানের ইদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। এ বারেও তেমনই গিয়েছিলেন, দলীয় প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে। মানস বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বিষয়ে মতানৈক্য থাকলেও আমরা পরস্পরকে সম্মান করি। তেমনটাই আজও করেছি।’’ সুজনও বলছেন, ‘‘বিধায়ক, সাংসদ থাকার সময়েও সৌগতবাবুর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল। আর, তেমনই কারও সঙ্গে দেখা হলে ভাল থাকবেন, শরীর সুস্থ রাখবেন, এটা বলাটাই সংস্কৃতি।’’

তবে, কামারহাটির ওই সাতটি ওয়ার্ডে নিজেদের জায়গা ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী মানস। তাঁর কথায়, ‘‘ওই এলাকার সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক এ বার আমাদের সঙ্গে থাকবে। তোলাবাজি, মস্তানি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে স্থানীয় মানুষ বিরক্ত। আগে প্রচার করতে না পারলেও এ বারে ওই সাতটি ওয়ার্ডে ভাল ভাবে প্রচারে নেমেছি।’’ যদিও শাসকদলের দাবি, সময়ই কথা বলবে। অন্য দিকে, এ দিন আলমবাজারেও ইদের অনুষ্ঠানে পাশাপাশি দেখা গেল বরাহনগর বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্যকে। দু’জনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দিলেন সাক্ষাৎকারও।

যদিও এই সৌজন্য বিনিময় নিয়ে কটাক্ষ করে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত বলেন, ‘‘সৌজন্য বিনিময়ের গল্প বলে লাভ নেই। আসলে সিপিএম ভোট কাটাকুটি করে তৃণমূলকে জেতাতে চাইছে, সেটাই স্পষ্ট হল। তবে, লাভ হবে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy