কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। —ফাইল চিত্র।
দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে লোকসভা নির্বাচনে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। শনিবার আবার দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দার্জিলিং লোকসভা থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি। তার পরেই বিষ্ণুপ্রসাদের বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ জানিয়েছে দার্জিলিংয়ের বিজেপি। রবিবার বিষ্ণুপ্রসাদ বলেছেন, “৫ এপ্রিল স্ক্রুটিনি পর্ব সম্পন্ন হয়ে গেলে আমি পুরোদমে প্রচারে নামব। পাহাড়ের মানুষের দাবিকে মান্যতা দিতেই আমি প্রার্থী হয়েছি। তাই পাহাড়ের তিনটি বিধানসভার পাশাপাশি সমতলের চারটি বিধানসভাতেও আমি প্রচারে যাব।” তিনি আরও বলেন, “আমাকে বিজেপিতে যোগদান করানোর সময় পৃথক রাজ্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে যখন ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখনও সেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। দার্জিলিংয়ের মানুষ পরপর তিন বার বিজেপি সাংসদদের জিতিয়েছেন। তা সত্ত্বেও তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন নিজেদের দাবি থেকে। তাই আমাকে পাহাড়ের মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ভোটে দাঁড়াতেই হবে।” তবে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের নীরব অবস্থানের পাশাপাশি পাহাড়ের ভূমিপুত্রকে প্রার্থী না করার বিষয়টিও তাঁর বিদ্রোহের অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন বিষ্ণুপ্রসাদ। ২০০৯ সাল থেকে পরপর চার বার দার্জিলিংয়ের বাইরের নেতাদের পাহাড়ে প্রার্থী করা নিয়ে বিস্তর আপত্তি রয়েছে তাঁর। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে যশোবন্ত সিংহ, ২০১৪ সালে সুরিন্দর সিংহ আহলুওয়ালিয়া এবং ২০১৯ সালে রাজু বিস্তা দার্জিলিংয়ের সাংসদ হন। এ বারও রাজুকেই ফের মনোনয়ন দিয়েছে বিজেপি। তাতেই আপত্তি বিষ্ণুপ্রসাদের।
পাহাড়ের সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন কালচিনির বিজেপি বিধায়ক বিশাল লামা। মনোনয়ন দাখিলের আগে বেশ কয়েক বার বিষ্ণুপ্রসাদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন তিনি। অনুরোধ করেছিলেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি প্রার্থী রাজুর বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা না দিতে। কিন্তু মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়ে অনড় ছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ। শনিবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর বিজেপির পাহাড়ের সংগঠনের নেতারা বিষয়টিতে রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন। ঘটনাচক্রে, রবিবার উত্তরবঙ্গে আসছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সংগঠন অমিতাভ চক্রবর্তী। মূলত তাঁর কাছেই বিষ্ণুপ্রসাদের বিষয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হবে।
দার্জিলিং লোকসভা এলাকার পাহাড় এবং সমতলের নেতারা এখনও বিষ্ণুপ্রসাদের বিষয়টিকে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবেই দেখছেন। তাঁরা চান না, বিজেপি নেতৃত্ব বিষ্ণুপ্রসাদের বিরুদ্ধে কোনও কঠিন পদক্ষেপ করুন। তবে রাজ্য বিজেপির একাংশের কথায়, ‘‘যদি বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিষ্ণুপ্রসাদকে ভোটে লড়তেই হয়, তবে তিনি বিধায়ক পথ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভোটে লড়াই করুন। তাতে বিজেপি নেতৃত্বের আপত্তি নেই।’’ কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ককে নিয়ে ‘অস্বস্তি’ কোনও নতুন ঘটনা নয়। বিধানসভাতে অম্বেডকর মূর্তির নিচে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ধরনা দিয়েছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ। গত তিন বছরের বিধায়ক থাকাকালীন বারবার গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সরব হয়েছেন। এমন কার্যকলাপ সত্ত্বেও কখনও তাঁর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেননি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর এখন বিষয়টি আর বিরোধী দলনেতার হাতে নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও যে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না, সে বিষয়ে মনস্থির করেই ফেলেছেন বিষ্ণুপ্রসাদ। দার্জিলিং লোকসভায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ এপ্রিল। মনোনয়ন প্রত্যাহারপর্ব সম্পন্ন হলে নির্বাচনী প্রতীক পাবেন তিনি। তারপরেই পুরোদমে প্রচারে নামবেন বলে জানিয়েছেন। পাহাড়ের বিজেপি নেতৃত্ব চাইছেন তেমন পরিস্থিতি হওয়ার আগেই রাজ্য নেতৃত্ব এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে বিষ্ণুপ্রসাদকে নিরস্ত করুন। তাঁর মনোনয়নের পর শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ জানিয়েছিলেন, মনোনয়নপর্ব সম্পন্ন হওয়ার আগেই বিষ্ণুপ্রসাদের সঙ্গে বিজেপির যাবতীয় সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত সেই বিষয়ে কোনও ইঙ্গিত মেলেনি বলেই বিজেপি সূত্রে খবর। মনোনয়ন দাখিলের পরেও যে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি, তা-ও সাফ করে দিয়েছেন বিষ্ণুপ্রসাদ। আপাতত কার্শিয়াংয়ের বিদ্রোহী বিধায়ককে নিয়ে তৈরি হওয়া সঙ্কট এখন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের কোর্টে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy