গোয়ালপোখরে ভোট প্রচারে রায়গঞ্জ লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। পাশে মন্ত্রী গোলাম রব্বানি। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর সম্পর্কে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানির মন্তব্যে কার্যত ‘অস্বস্তিতে’ পড়লেন রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণ প্রচার সারেন গোয়ালপোখরে। সঙ্গে ছিলেন রব্বানি। সূত্রের দাবি, সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় কংগ্রেস প্রচার করছে, কৃষ্ণ জয়ী হয়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন। তার ‘জবাব’ দিতে গিয়ে রব্বানি বলেন, ‘‘কৃষ্ণ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আয়কর দফতর দিয়ে হানা দিয়ে ওঁর দেড়শো কোটি টাকা জরিমানা করে। তার পরেও তিনি বিজেপির দিকে ঝোঁকেননি।’’
প্রচার-ভাষণে রব্বানি আরও বলেন, ‘‘দল টিকিট দেওয়ার আগে কৃষ্ণকে বলেছিলাম, শুভেন্দু আবার চক্রান্ত করে হানা দেওয়ার ভয় দেখালে বিজেপিতে যাবেন না তো? কৃষ্ণ আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পরে রব্বানিদা, আপনিই অভিভাবক!’ কাজেই, দলবদলের প্রশ্নই আসে না।’’
সূত্রের দাবি রব্বানির এমন মন্তব্যে দলের অনেকের মনে পড়ে গিয়েছে রমেশ সিপ্পির ‘শোলে’। সেখানে পাত্র হিসাবে বীরু কেমন, বাসন্তীর মাসিকে জয়ের বোঝানোর চেষ্টার দৃৃশ্যটি! কিংবা বাংলা ব্যাকরণের ব্যজস্তুতি। রব্বানি পরে তাঁর মন্তব্যের ‘ব্যাখ্যা’ দিলেও, অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের মন্তব্যে ক্ষতি দলেরই।
গত মে মাসে বিধানসভার পিএসি চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কল্যাণীর অফিস ও বাড়িতে হানা দেয় আয়কর দফতর। কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। কিন্ত আয়কর দফতর থেকে এ বিষয়ে ব্যবসায়ীর নাম-ঠিকানা-পরিচয় না দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, উত্তরবঙ্গের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়ে দেড়শো কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলেননি। কিন্ত এ দিনের ভোট-প্রচারে রব্বানি সেই প্রসঙ্গই তুলে আনায় বিব্রত হয়েছেন অনেকে। কৃষ্ণের অবশ্য দাবি, ‘‘আমার উপর এত চাপ থাকার পরেও আমি যে বিজেপিতে যাইনি, সেটাই বলতে চেয়েছেন রব্বানিদা। আমায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ্য মনে করেছেন। দল বদলের প্রশ্নই ওঠে না। বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছেন না বলে ভয় পেয়ে অপপ্রচার করছেন।’’ কৃষ্ণ বলেন, ‘‘আয়কর দফতর হানা দিয়েছিল। বাড়ি বা অফিস থেকে কিছুই পায়নি। জরিমানার প্রশ্নই আসে না।’’ রব্বানির বক্তব্য নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, “আয়কর হানা নিয়ে প্রকাশ্যে বলা ঠিক হয়নি। তবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, কৃষ্ণ জয়ী হয়ে বিজেপিতে যাবেন না।’’জেলার এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘রব্বানির বক্তব্য রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে।’’ অন্য দিকে, বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার বলেন, ‘‘রব্বানি ঠিক বলেছেন। আয়কর হানা আর জরিমানার আসল তথ্য তুলে ধরেছেন।’’
কিন্তু কেন এমন বললেন রব্বানি? সে প্রশ্নের উত্তরে পরে তিনি বলেছেন, ‘‘কৃষ্ণ বিধায়ক হয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে বলেছিলেন, সাত দিনের মধ্যে কৃষ্ণের বাড়িতে ইডি-আয়কর হানা দেবে। সেটা হয়েওছিল। বিজেপি চক্রান্ত করে তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে হানা দিচ্ছে। একই হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল কৃষ্ণকে। আমি সেটাই বলতে চেয়েছি।’’
এ দিন সন্ধ্যায় রায়গঞ্জের বিধানমঞ্চে কর্মিসভা করে তৃণমূল। সেখানে প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী, উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল, মন্ত্রী গোলাম রব্বানি প্রমুখ হাজির ছিলেন। সেখানে রব্বানি বলেন, ‘‘দলের কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করলে দল ব্যবস্থা নেবে।’’ তৃণমূল কানাইয়ালালকে প্রার্থী না করায় অনুগামীদের ‘হতাশার’ প্রসঙ্গ কর্মিসভায় ওঠে। মঞ্চ থেকে কানাইয়া, রব্বানি ও কৃষ্ণ কর্মীদের এক জোট হয়ে ভোটে লড়ার নির্দেশ দেন। কানাইয়ালাল ও কৃষ্ণ দাবি করেন, প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলে ‘দ্বন্দ্ব’ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy