প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ‘কোটিপতি টেম্পোওয়ালাদের’ যোগ টেনে তাঁকে ‘পুতুল রাজা’ বলে আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। দিন তিনেক আগেই এক জনসভায় মোদী অভিযোগ করেছিলেন, অম্বানী-আদানিরা বস্তায় ভরে টেম্পোবোঝাই টাকা কংগ্রেসকে দিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে উত্তরপ্রদেশের এক সভা থেকে মোদীকে পাল্টা ‘টেম্পোওয়ালা কোটিপতিদের হাতের পুতুল রাজা’ বলে ব্যঙ্গ করলেন রাহুল। তিনি এক্স-হ্যান্ডলেও নিজের বক্তব্যের অংশ তুলে ধরে বলেন, ‘‘উনি প্রধানমন্ত্রী নন, রাজা। সংবিধান, সংসদ, মন্ত্রিসভার সঙ্গে ওঁর কোনও সম্পর্কই নেই!’’
চলতি নির্বাচনী প্রচারে মোদীর বিভিন্ন বক্তব্যকে নিশানা করে আজ কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও অভিযোগ করেছেন যে, মোদী প্রধানমন্ত্রী পদের গরিমা ক্ষুণ্ণ করেছেন। একই সঙ্গে রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় বিজেপি রাষ্ট্রপতিকে যেতে দেয়নি বলেও আজ অভিযোগ করেছেন প্রিয়ঙ্কা।
নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে হাতে গোনা কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীকে নিয়ম ভেঙে বহু সুবিধা দিয়েছেন বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে মোদীর অতি-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গৌতম আদানির গোষ্ঠীকে নিয়ম ভেঙে সুবিধা দেওয়া নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধী নেতারা। রাহুল-সহ বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, জঙ্গল, বিমানবন্দর, কয়লা খনি-সহ দেশের একাধিক সম্পদ আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য যাবতীয় নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন মোদী। এ নিয়ে যাঁরাই সরব হয়েছেন, তাঁদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের। এই অবস্থায় দিন কয়েক আগে এক নির্বাচনী জনসভায় মোদী অভিযোগ করেন, লোকসভার প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে রাহুল আর আদানি-অম্বানীদের নিয়ে মুখ খুলছেন না। যদিও কংগ্রেস একাধিক ভিডিয়ো প্রকাশ করে দেখিয়েছে, মোদীর ওই দাবি সত্য নয়। বরং রাহুল লোকসভার প্রচারে একাধিক বারই ওই দুই শিল্পপতির সঙ্গে মোদীর ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে সরব হয়েছেন।
মোদীর অভিযোগ ছিল, দুই শিল্পপতি ‘বস্তায় ভরে টেম্পোবোঝাই কালো টাকা’ কংগ্রেসকে পৌঁছে দিয়েছেন বলেই রাহুল ওঁদের ব্যাপারে নীরব থাকছেন। এর পরেই পাল্টা আক্রমণে নেমে রাহুল বলেন, ‘‘মোদী সে ক্ষেত্রে তাঁর হাতে থাকা ইডি-সিবিআইকে কেন ওই দুই শিল্পপতির বিরুদ্ধে তদন্তে নামাচ্ছেন না?’’ অন্য বিরোধী নেতারাও মোদীর ওই বক্তব্য নিয়ে সুর চড়িয়ে দুই শিল্পপতির সঙ্গে মোদীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন।
সেই আক্রমণের সূত্র ধরেই রাহুল গত কাল উত্তরপ্রদেশের এক সভায় মোদীকে ধনী শিল্পপতিদের হাতের পুতুল বলে ব্যঙ্গ করেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘মোদী তো রাজা! উনি প্রধানমন্ত্রী নন, উনি রাজা! মন্ত্রিসভা, সংসদ, সংবিধানের সঙ্গে ওঁর কোনও লেনাদেনা নেই। উনি ২১ শতকের রাজা এবং দু’তিন জন কোটিপতি, যাঁদের হাতে আসল ক্ষমতা তাঁদের মুখ!’’ নিজের এক্স-হ্যান্ডলেও কার্যত একই ভাষায় মোদীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘মোদী পুতুল রাজা, যাঁর সুতো ধরা আছে টেম্পোওয়ালা কোটিপতিদের হাতে।’’
এ দিকে ভোটের মধ্যেই মোদী এবং রাহুলকে মুখোমুখি প্রকাশ্যে বিতর্কসভায় বসার যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লোকুর, হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এ পি শাহ ও প্রবীণ সাংবাদিক এন রাম, তাতে সাড়া দিয়েছেন রাহুল। তিনি বলেছেন, মোদীর সঙ্গে যে কোনও দিন, যে কোনও জায়গায় বিতর্কে বসতে তিনি রাজি। কিন্তু মোদী এমন প্রকাশ্য বিতর্কে সাড়া দেবেন কি না, সে প্রশ্ন তুলে খোঁচা দিতে ছাড়েননি রাহুল। দুই নেতার মুখোমুখি বিতর্কে বসার এই বিষয়টি অনেকটা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মুখোমুখি বিতর্কে বসার মতো। রাহুল এ দিন তাতে সাড়া দেওয়ায় কিছুটা ক্ষুব্ধ ইন্ডিয়া-র শরিকদের কিছু নেতা। তাঁদের বক্তব্য, মোদী বরাবরই চান ভোটের ময়দানে ‘মোদী বনাম রাহুল’ বিষয়টাই প্রচারে তুলে ধরতে। তাতে দেশের অন্য বিরোধী নেতাদের গুরুত্ব কম করে দেখানো যায়। ইন্ডিয়া-র নেতাদের একাংশের বক্তব্য, রাহুল যেন ওই ধরনের প্রস্তাবে সাড়া না দেন। তা ছাড়া তিনি ইন্ডিয়া-র প্রধানমন্ত্রী মুখও নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy