মেমারির একাংশে দেওয়াল লিখন। —নিজস্ব চিত্র।
দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের নাম। সেই দেওয়ালেই ফিকে হয়ে গিয়েছে আগে আঁকা ঘাসফুল। এক মাস পার করেও ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদের নাম দেওয়ালে ফুটে ওঠেনি। প্রার্থী এলাকায় প্রচারে গেলে ব্লকের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেককে দেখাও যায়নি। যা নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি বিরোধীরা।
মেমারি ২ ব্লকের ন’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সাতটি মন্তেশ্বর বিধানসভার মধ্যে পড়ছে। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার মধ্যে রয়েছে মন্তেশ্বর। গত বিধানসভা ভোটে মন্তেশ্বরে তৃণমূল ৫০ শতাংশের বেশ ভোট পেয়েছিল। তার পরেও মেমারি ২ ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত নিয়ে ‘চিন্তা’ যাচ্ছে না তৃণমূলের। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ‘চিন্তা’র শুরু পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই। প্রথমে ব্লক সভাপতি পাল্টে বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এক জনকে করা হয়। তারপরে পঞ্চায়েত ভোটের ত্রিস্তরে প্রার্থীপদেও প্রাধান্য পান বিধায়ক-গোষ্ঠীর লোকজন। প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মহম্মদ ইসমাইলকে জেলা পরিষদেও প্রার্থী করা হয়নি। তারপর থেকেই দলের একটা অংশ কার্যত ‘বসে গিয়েছে’। এখনও পর্যন্ত দল তাঁদের মাঠে নামাতে পারেনি। ফলে, ব্লকের বিভিন্ন দেওয়ালে প্রার্থীর নামও লেখা হয়নি। আবার প্রার্থী প্রচারে গেলেও ব্লকের নেতাদের একাংশকে দেখা যায়নি।
ওই ব্লকের সাতগেছিয়া বাজারের দোকানদার তৃণমূলের এক কর্মীর দাবি, “ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী আমাদের দলছুট করে দিয়েছে। প্রচারে ডাকার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেনি। মাত্র আড়াইশো-তিনশো জন মিলে প্রার্থীকে নিয়ে মালম্বা থেকে সাতগেছিয়া পর্যন্ত সারাদিন ধরে প্রচার করল।” তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকেই মেমারি ২ ব্লকের একটা বড় অংশে বিজেপি বেড়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের পরে দলের ফাটল বাড়তে থাকায় বিজেপি অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে। মেমারির রাধাকান্তপুর মোড় থেকে মন্তেশ্বর রোড ধরে সাতগেছিয়া পর্যন্ত, বেশ কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় বিজেপির পতাকা দেখা গিয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের পতাকা চোখে পড়ছে না বলে অনেকেই দাবি করছেন।
ওই ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে বিজেপি প্রার্থীর নাম লেখা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি প্রচারও করছে বিজেপি। সেখানে এখনও তৃণমূল দেওয়াল লেখা শেষ করতে পারল না কেন? রাধাকান্তপুর মোড়ে ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে ওই এলাকার এক যুবক বলেন, “দেওয়ালও লিখতে গেলে এক গোষ্ঠীকে বাধা দিচ্ছে অন্য গোষ্ঠী। এক গোষ্ঠী প্রতীক আঁকছে তো অন্য গোষ্ঠী দেওয়ালে চুন করে দিচ্ছে। সে জন্য দেখবেন, পঞ্চায়েতের প্রার্থীদের নামের উপর চুন করা আছে, কিন্তু লোকসভার প্রার্থীর নাম লেখা হয়নি। আর দু’পাশে থাকা প্রতীকের রং ফিকে হয়ে যাচ্ছে।” বিধায়ক ঘনিষ্ঠ, মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল গফ্ফরের যদিও দাবি, “প্রচারে ভাল লোক হয়েছিল। দেওয়াল লেখাও হচ্ছে। সবাই এক সঙ্গে কাজ করছি। কোনও অসুবিধা নেই।”
তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদও কোনও দ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি। বরং তাঁর দাবি, “এলাকায় কোনও কাজ করেননি বিজেপির বিদায়ী সাংসদ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেনি।” তিনি হুড খোলা গাড়িতে আবার কখনও পায়ে হেঁটে জনসংযোগ করেছেন। তাঁর প্রচারে মন্ত্রীকে দেখা যায়নি। ছিলেন না ইসমাইলও।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রী রমজানের জন্য আরবে গিয়েছেন। আর ইসমাইল চিকিৎসার জন্য বাইরে ছিলেন। বিজেপির নেতা অমল বাগ বলেন, “তৃণমূলের একটা গোষ্ঠী কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে। দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সে জন্য অনেক গ্রামে তৃণমূল দেওয়াল লেখার কর্মী পাচ্ছে না।”
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের যে প্রচারে পড়ছে তা মেনে মেনে নিচ্ছেন দলের জেলার নেতারাও। দলের এক নেতা বলেন, “ওই ব্লকে নির্বাচনী কমিটি গঠন করে সবাইকে দলের কাজে যুক্ত করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy