(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
কংগ্রেসের ইস্তাহারকে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী লাগাতার দাবি করে আসছেন, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে ওবিসিদের জন্য ধার্য সংরক্ষণ মুসলিমদের হাতে তুলে দেবে। সেই তথাকথিত ‘তোষণ রাজনীতি’ নিয়ে আক্রমণের নিশানায় নরেন্দ্র মোদী আজ আবারও জুড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করার রায় মানবেন না বলে জানিয়েছেন মমতা। সুদূর হরিয়ানার সভা থেকে সেই প্রসঙ্গ তুলে মোদী বললেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন হাইকোর্টের নির্দেশ মানবেন না। মুসলিমদের ওবিসি-র সংরক্ষণ দেবেনই। আসলে কংগ্রেস, তৃণমূল–সহ ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের পাশে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।”
বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছিল, ২০১০ সালের পরে যে সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট তৈরি হয়েছে, তাতে যথাযথ আইন মানা হয়নি। তাই ওই শংসাপত্র বাতিল করতে হবে। গত কালই মোদী বলেছিলেন, ‘‘আদালত ইন্ডিয়া জোটের গালে থাপ্পড় মেরেছে।’’ আজ মোদী আবার এই নিয়ে মুখ খুলে বললেন, “ইন্ডিয়া-জামাত জোট তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে যে ষড়যন্ত্র করেছে, বাংলায় হাইকোর্টের নির্দেশে তার পর্দা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। বাংলায় রাতারাতি এরা মুসলমানদের ওবিসি শংসাপত্র দিয়েছিল। ওবিসি-র জন্য নির্দিষ্ট সংরক্ষণ অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বণ্টন করছিল। আপনারা বলুন, আজ যদি আদালত না থাকত, তা হলে জনজাতি-দলিতরা কী করতেন?” এর পর তাঁর আশ্বাস, “আমি প্রতিটি তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসিভুক্ত মানুষকে ভরসা দিচ্ছি, যত দিন মোদী জীবিত রয়েছে কোনও মাই কা লাল তাঁদের সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। বঞ্চিত মানুষের অধিকারের চৌকিদার মোদী।”
উল্টো দিকে হাই কোর্টের রায়কে প্রথমেই ‘বিজেপির রায়’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা। রায় মানবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। এ দিন কলকাতার নির্বাচনী সভায় সেই অবস্থানে অনড় থেকেই মমতা বলেন, ‘‘কেন ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খেয়ে নিতে হয় ভোটের সময়? কয়েক জন বসে আছেন। বেরিয়েই বলছেন, আরএসএস করি। করো, কে বারণ করেছে! হঠাৎ করে একজন বললেন, ১৫ লাখ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল। না, বাতিল হবে না। গরমের ছুটি শেষ হলে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আপনি এ-তে খেলেছেন, আমি বি-তে খেলব। আপনি সি-তে খেলার চেষ্টা করলে আমি জ়েড-এ খেলব। খেলা হবে। ওবিসি-র মধ্যে হিন্দু, মুসলমান, তফসিলি, আদিবাসী সবাই আছে।’’
মমতাকে এই নিয়ে পাল্টা আক্রমণে বিঁধেছেন মোদীর পাশাপাশি জেপি নড্ডা এবং মিঠুন চক্রবর্তীও। বিজেপির নড্ডা আজ এক বিবৃতিতে বলেন, “সকলেই জানেন যে, পশ্চিমবঙ্গে মমতার সরকার ওবিসি কোটার অধীনে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করে ওবিসি সার্টিফিকেট এবং ওবিসি সংরক্ষণ দিয়েছিল, যা গত কাল কলকাতা হাইকোর্ট বাতিল করেছে।” পুরুলিয়ায় বিজেপির প্রচারে মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রায় মানব না, তা তো হয় না। আদালতের রায় আপনাকে মানতেই হবে।’’
ওবিসি রায়ের এই প্রসঙ্গকে যে মোদীরা তাঁদের বৃহত্তর মেরুকরণের রাজনীতির সঙ্গে জুড়ছেন, সে কথাও আজ উঠে আসে মমতার মুখে। তিনি দাবি করেন, ‘‘আসল কারণ কী জানেন? ক’দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, মুসলিমরা তফসিলিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেবে। এটা কখনও হয়? কেউ কারও অধিকার কেড়ে নিতে পারে?’’ মোদী যথারীতি ‘তোষণ রাজনীতির’ ধুয়ো তুলেই মমতা এবং কংগ্রেসকে পাশাপাশি বসিয়েছেন। বলেছেন, “কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোটের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। সে জন্যই তারা দেশের বিভাজন করেছে। ভারতকেও মুসলিম রাষ্ট্র বানাতে চায়। ইন্ডিয়া জোট সাম্প্রদায়িক, জাতপাতের রাজনীতি করে এবং পরিবারবাদী।”
আজ পঞ্জাবের পাটিয়ালার জনসভায়, সিএএ-র প্রসঙ্গ এনে শিখ আবেগকে জাগানোর চেষ্টা করে মোদী বলেছেন, “কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া সিএএ-র বিরোধিতা করছে। শিখরা যখন পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানে প্রতারিত হয়ে ফিরে আসেন, তখন তাঁদের কে সুরক্ষা দেবে?” সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় তিনি থাকলে কর্তারপুর সাহিব পাকিস্তানের হাতে যেত না। জানা গিয়েছে, পাটিয়ালায় ঢোকার রাস্তা আজ মোদীর জনসভার কারণে সকাল থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আন্দোলনরত কৃষকরা যাতে ঢুকে কালো পতাকা দেখাতে না পারেন। আজ দু’টি জনসভাতেই ‘কৃষক-দরদি’ মুখ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন মোদী। পাটিয়ালায় তাঁর বক্তব্য, “গত দশ বছরে রেকর্ড পরিমাণ ধান ক্রয় করেছে সরকার। ন্যৃনতম সহায়ক মূল্য আড়াই গুণ বাড়ানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy