(বাঁ দিকে) উলুবেড়িয়ার দুয়ারিপাড়ায় তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমাবাজির তদন্তে পুলিশ। হাসপাতালে আহত সিপিএম কর্মীর বোন। আরামবাগের পূর্ব কেশবপুর গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় শান্তিতেই ভোট মিটেছে হাওড়া ও হুগলিতে। বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল হলেও সোমবার, ভোট চলাকালীন বড় কোনও অশান্তি হয়নি বললেই চলে। এ জন্য পুলিশ-প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশংসাও করেছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে, ভোটের পরেও বিক্ষিপ্ত হিংসায় কিন্তু লাগাম দেওয়া গেল না। গ্রামীণ হাওড়ার কয়েকটি এলাকা ও আরামবাগ মহকুমার একটি অঞ্চলে উঠল বোমাবাজি, বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ।
সোমবার গভীর রাতে উলুবেড়িয়ার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুয়ারিপাড়ায় তৃণমূল কর্মী তন্ময় পুরকাইতের বাড়ির দরজায় বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। তন্ময়ের কথায়, ‘‘একটা সময় বিজেপি করতাম। এখন তৃণমূল করি। সেই রাগেই বিজেপি এমন করেছে।’’ মঙ্গলবার সকালে উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তদন্ত শুরু হয়েছে। পাঁচলার বেলডুবিতে ২৭০ নম্বর বুথে সোমবার এজেন্ট বসানো নিয়ে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ঝামেলা হয়েছিল। তার জেরে ওই রাতেই তৃণমূল প্রধান রুহুল আমিনের বাড়িতে বিজেপি বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। রাতেই রুহুলের বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট করা হয়। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সরতেই ফের তাঁর বাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ।
বিজেপি অভিযোগ মানেনি। পুরুলিয়ার কাশীপুরে রোড শো শেষে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বিজেপি বোমাবাজি করবে, এটা কেউ বিশ্বাস করবে! দেখুন ওদের (তৃণমূলের) গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হয়েছে। মাল নিয়ে ভাগাভাগি। কে কত মাল,পয়সা কামাবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই। এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীকে পেটাচ্ছে।’’
মঙ্গলবার সকালে আবার শ্যামপুর বিধানসভার বিজেপির ৪৭ নম্বর বুথ সভাপতি বিবেকানন্দ পোল্লের পরিবারের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জখম হন এক শিশু-সহ পাঁচ জন। তাঁদের ভর্তি করানো হয় উলুবেড়িয়া হাসপাতালে। তাঁদের দেখতে যান হাওড়া গ্রামীণের বিজেপি সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অরুণউদয় পাল চৌধুরী। তাঁর দাবি, ‘‘হার বুঝেই তৃণমূল অত্যাচার শুরু করেছে।’’
এ দিন আইএসএফ ও তৃণমূলের বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়েছিল উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের রাজাপুরের তেহট্ট কাঁটাবেড়িয়া ২ নম্বর অঞ্চল। বাড়ি ভাঙচুরও করা হয় বলে অভিযোগ। বোমায় উভয় পক্ষের জখম ১০ জন উলুবেড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এলাকায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে আইএসএফ এই পঞ্চায়েত দখল করার পর থেকেই তাদের উপর অত্যাচার চলছে।
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে আইএসএফ। তাদের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলই তাদের উপর অত্যাচার করছে। হাওড়া জেলা আইএসএফের কার্যকরী সম্পাদক আফতাব মোল্লা বলেন, ‘‘ওটা একটি পারিবারিক বিবাদ। তাতে রাজনৈতিক রং দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ অকারণে আইএসএফ কর্মীদের গ্রেফতার করেছে।’’
জেলা জুড়ে ভোট পরবর্তী এই হিংসা নিয়ে হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘পুরো লোকসভা কেন্দ্রে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বেশিরভাগ জায়গায় বিজেপি এবং আইএসএফ নিজেদের মধ্যে গোলমালকে তৃণমূলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে।’’
অন্য দিকে, সোমবার রাতে হুগলির আরামবাগের মলয়পুর ২ পঞ্চায়েতের পূর্ব কেশবপুরে দুই সিপিএম কর্মীর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ইটের আঘাতে মির্জা রামিজ রিয়াজ নামে এক সিপিএম কর্মীর বোন তানজিনা বেগম আহত হন। তাঁর আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এ ছাড়া আফসার মল্লিক নামে আর এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতেও ইট-পাটকেল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। তাঁরা থানায় তিন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে আক্রান্তদের বাড়িতে যান সিপিএম প্রার্থী বিপ্লবকুমার মৈত্র। তাঁর কথায়, “বিরোধী দল করলে হামলার শিকার হতে হচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষ মেনে নেবেন না।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের আরামবাগ ব্লক সভাপতি শম্ভুনাথ বেরা বলেন, “ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। পাড়াগত ঝগড়াতে ঘটনাটি ঘটেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy