বাঁ দিক থেকে অধীর চৌধুরী এবং নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
কংগ্রেস এবং বিজেপি বিরোধী দলগুলির জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংসদে কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেখানে লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকে টিপ্পনি কেটে হাত শিবিরের ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে চাঁচাছোলা আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী বললেন, অধীরকে দেখে তাঁর কষ্ট হয়। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা ‘কুয়োর ব্যাঙ’ বললেন অধীর।
সংসদে অধীরকে ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করে প্রায়শই কংগ্রেসকে নিশানা করেন মোদী। সোমবার লোকসভায় জবাবি ভাষণেও তেমনই ঘটনা ঘটল। গত লোকসভা ভোটের পর অধীরকে ‘ফাইটার’ বলেছিলেন মোদী। এ বার লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে মোদী বললেন, ‘‘অধীরবাবুকে দেখে কষ্ট হয়। তাঁকে পরিবারতন্ত্রের পুজো করতে হয়।’’
বস্তুত, লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় আসন রফা নিয়ে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের দড়ি টানাটানি এবং জোট নিয়ে জটের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরকেই নিশানা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। অধীর জানিয়েছেন, বাংলায় তাঁর লড়াই তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে। সেই লড়াই জারি থাকবে। সোমবার ‘ইন্ডিয়া’র ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জেনেবুঝে মোদী সেই প্রসঙ্গই যেন উস্কে দিলেন।
সংসদে মোদী যখন কংগ্রেসকে একের পর এক আক্রমণ করছেন, তখন তাঁর কথার মাঝে উত্তেজিত ভাবে কিছু বলতে যান অধীর। ঠিক সেই সময় মোদীর মন্তব্য, ‘‘শক্তিশালী বিপক্ষ খুব জরুরি। কিন্তু এখানে (কংগ্রেসে) পরিবারবাদ প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখুন, অধীর চৌধুরীর অবস্থা।’’ হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘আমাদের খড়্গেজি এই সদন থেকে অন্য সদনে ‘শিফ্ট’ করে গিয়েছেন। গুলামজি তো পার্টি থেকেই শিফ্ট করে গিয়েছেন।’’ মোদীর দাবি, গত ১০ বছরে শক্তিশালী বিরোধী বিজেপি পায়নি। এ নিয়ে কংগ্রেসকে একের পর এক আক্রমণ করেছেন। কখনও বলেছেন, ‘‘একই প্রোডাক্ট বার বার লঞ্চ করে করে কংগ্রেসের দোকানে তালা পড়ার সময় এসে গিয়েছে।’’ কখনও বলেছেন, ‘‘রাজনাথ সিংহ, অমিত শাহদের কোনও পার্টি নেই। দেশের গণতন্ত্রের জন্য পরিবারতন্ত্র রাজনীতি ভারী বিপজ্জনক। কোনও পরিবারের দু’জন থেকে ১০ জন রাজনীতিতে আসতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন তখনই ওঠে যখন সেই পরিবার গোটা দলটাকে চালায়।’’ মোদীর ওই কথার মধ্যে আরও এক বার প্রতিবাদ জানান অধীর। তখন বহরমপুরের সাংসদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর খোঁচা, ‘‘দাদার অভ্যাস যায়নি। বসে বসে ‘কমেন্ট’ করছেন। আমি কোন পরিবারতন্ত্রের কথা বলছি? কোনও পরিবার যখন দলের ঊর্ধ্বে চলে যায় তার কথা।’’ বস্তুত, মোদীর ইঙ্গিত, সনিয়া-রাহুল গান্ধীর সমস্ত সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হন অধীররা।
মোদী বলে যান, ‘‘কংগ্রেসের মানসিকতায় দেশের ক্ষতি হয়েছে। কারণ, কংগ্রেস কখনও দেশের সামর্থ্যে বিশ্বাস রাখেনি। নিজেদের শাসক মনে করে জনতাকে সব সময় ছোট করে এসেছে এরা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নেহরুজি বলেছিলেন হিন্দুস্তানের মানুষের বেশি পরিশ্রম করার অভ্যাস নেই। ইউরোপ, জাপান, চিন, রাশিয়া বা আমেরিকার মানুষজন যে ভাবে কাজ করেন, তা আমরা করি না। তিনি ভারতীয়দের অলস ভাবতেন। কম বুদ্ধিমান মনে করতেন। ইন্দিরা গান্ধীর ভাবনাও খুব বেশি আলাদা ছিল না। তিনিও এক বার লালকেল্লা থেকে বলেছিলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের অভ্যাস হল ভাল কাজ শেষ হলেই আত্মতুষ্টিতে ভুগি। কঠিন পরিস্থিতি এলে হাল ছেড়ে দিই।’’ এর পর অধীরের দিকে তাকিয়ে মোদী বলেন, ‘‘আজ কংগ্রেসকে দেখে মনে হয় দেশের মানুষ সম্পর্কে ওঁরা ঠিক মূল্যায়ন না করলেও নিজেদের দল নিয়ে সঠিক ভাবনাই ভেবেছেন।’’
সংসদে মোদীর ভাষণের পর সাংবাদিক বৈঠক করেন অধীর। সেখানে কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সব কিছু হতে পারলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রনায়ক হতে পারলেন না। এমন অশোভনীয় বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুনব, সেটা আশা করিনি। আসলে তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানেই রয়ে গিয়েছেন। আমরা আশা করেছিলাম, তিনি রাষ্ট্রনায়কের মতো এগোনোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু উনি কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকতে ভালবাসেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy