অর্জুনকে উপদেশ পার্থের। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নামার আগে সখা অর্জুনকে উপদেশ দিয়েছিলেন কৃষ্ণ। যাঁর আর এক নাম পার্থসারথি। লোকসভার যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যারাকপুরের অর্জুন সিংহও তেমনই উপদেশ পেলেন তাঁর সখা বা বন্ধু পার্থ ভৌমিকের কাছ থেকে। তফাত এটুকুই, কুরুক্ষেত্রে অর্জুনের পাশে ছিলেন তাঁর বন্ধু তথা ‘পার্থ’ কৃষ্ণ । ব্যারাকপুরের রণক্ষেত্রে অর্জুন এবং পার্থ দাঁড়াতে পারেন শত্রুপক্ষ হিসাবে। অন্তত মঙ্গলবার তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্জুন। যার জবাব দিয়েছেন পার্থও।
ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূলের লোকসভা ভোটের টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ অর্জুন মঙ্গলবারই আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন, তিনি তৃণমূল ছাড়ছেন। একই সঙ্গে অর্জুন এ-ও বলেছেন, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হওয়া পার্থের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে নামতেও তিনি প্রস্তুত। অর্জুন বলেন, ‘‘পার্থ আমার ভাল বন্ধু। কিন্তু দুনিয়ার অনেক জায়গাতেই বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর লড়াই হচ্ছে। তাই আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হবে না। মোদীজি বলতেন কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করা উচিত নয়।’’ অর্জুনের এই মন্তব্য শোনার পরই ‘বন্ধু’ পার্থের পরামর্শ, বার বার দল বদলালে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে পারেন ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ। যা তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে প্রভাব ফেলতে পারে।
পার্থ বলেন, ‘‘অর্জুন বুদ্ধিমান ছেলে। আমার মনে হয় না বার বার দল বদল করে ও নিজেকে অবিশ্বাসের পাত্র করে তুলতে চাইবে। এটা নিম্নরুচির পরিচয়। তবে গোটাটাই ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি তো এ নিয়ে কিছু বলতে পারি না। যা বলার রাজনৈতিক ভাবে বলব।’’
প্রসঙ্গত, ব্যারাকপুর বরাবরই ‘পাখির চোখ’ অর্জুনের। অন্য দিকে, বাংলার রাজনীতির কারবারিরা জানেন, অর্জুন এবং পার্থ এক রাজনৈতিক দলের সদস্য হলেও জেলা রাজনীতির অঙ্কে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সদস্য। গত লোকসভা ভোটে যে ব্যারাকপুরে টিকিট না পেয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন তৎকালীন ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন, সেই ব্যারাকপুরে তৃণমূল টিকিট দিয়েছে পার্থকে। স্বাভাবিক ভাবেই অর্জুন ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
মঙ্গলবার একটি টিভি সাক্ষাৎকারে অর্জুনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘দেড় বছর আগে আমাকে যা বলে দলে ফেরানো হয়েছিল, তা পালন করা হয়নি। তৃণমূলে আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, তাই দল আমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, দলের উপর আমার ভরসা, বিশ্বাস ভেঙে গিয়েছে।’’
উল্লেখ্য, গত রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে তৃণমূল তাদের ৪২ জন লোকসভা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। তার মধ্যে অর্জুনের নাম ছিল না। মঞ্চে উপস্থিত অর্জুনকে পরে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘‘দল আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাকতা করেছে।’’ মঙ্গলবার তাঁকে ফিরহাদ হাকিম ফোন করে ‘ললিপপ’ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও মন্তব্য করেন অর্জুন। সূত্রের খবর, ফিরহাদ তাঁকে তাপস রায়ের ছেড়ে যাওয়া আসনে বিধানসভায় দাঁড় করিয়ে বিধায়ক এবং মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে অর্জুনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যেটা আমার ছিল, তা-ই দেওয়া হল না। অন্য কিছু নিয়ে কী করব? আমি এখানে কিছু পাওয়ার জন্য আসিনি। ব্যারাকপুরের মানুষের হয়ে কাজ করতে এসেছি।’’ মঙ্গলবার এর জবাব দিয়েছেন ফিরহাদও। তিনি বলেন, ‘‘অর্জুনকে আমি যা বলেছি, দলের অনুমতিক্রমেই বলেছি। ও তখন বলেছিল, এ সব ভেবো না, আমি দলেই আছি।’’ মঙ্গলবার যদিও অর্জুন স্পষ্ট জানিয়েছেন তাঁর দলে না থাকার কথা। সেই প্রসঙ্গেই পেয়েছেন ‘সখা’ পার্থের বিশেষ পরামর্শ। তবে সেই পরামর্শ তিনি নিলেন কি না, তা সময়ই বলবে বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy