Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

নোটিসের পরেও ঘুরিয়ে মেরুকরণ

বিরোধী শিবির বলছে, এ বার তাঁর পক্ষে হাওয়া নেই বুঝে মোদী মেরুকরণের মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণেও মোদীর সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রইল।

শুক্রবার মালদহের নিত্যানন্দপুরে নির্বাচনী প্রচার মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তীর-ধনুক তুলে দিচ্ছেন মালদহ উত্তরের বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু। পাশে মালদহ দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। ছবি: জয়ন্ত সেন।

শুক্রবার মালদহের নিত্যানন্দপুরে নির্বাচনী প্রচার মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তীর-ধনুক তুলে দিচ্ছেন মালদহ উত্তরের বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু। পাশে মালদহ দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। ছবি: জয়ন্ত সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও মালদা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১৮
Share: Save:

সরাসরি কিছু শব্দ ব্যবহার করলেন না। তবে মেরুকরণের হাতিয়ারে শান দেওয়া বজায় থাকল।

ভোটের প্রচারে ধর্মের জিগির তোলায় নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। বৃহস্পতিবারই নির্বাচন কমিশন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার কাছে সে বিষয়ে কৈফিয়ত চেয়েছে। তার পরে আজ পশ্চিমবঙ্গে মালদায় প্রচারে গিয়ে মোদী ফের অভিযোগ তুললেন, কংগ্রেস সাধারণ মানুষের সম্পত্তি তাদের ‘ভোটব্যাঙ্ক’-এর মধ্যে বিলিয়ে দিতে চাইছে। দাবি করলেন, কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে সংখ্যালঘু তোষণের প্রতিযোগিতা চলছে। শুধু এই প্রসঙ্গে সরাসরি ‘মুসলমান’ শব্দটির ব্যবহার এড়ালেন।

বিরোধী শিবির বলছে, এ বার তাঁর পক্ষে হাওয়া নেই বুঝে মোদী মেরুকরণের মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছিলেন। আজ দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণেও মোদীর সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রইল। শুধু নির্বাচন কমিশন কৈফিয়ত চাওয়ায় মোদী কিছুটা আড়াল রেখে মেরুকরণ করলেন। কিন্তু ওবিসি-দের সংরক্ষণ কংগ্রেস মুসলমানদের দিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা বজায় রাখলেন, অভিযোগ তাঁদের। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার বলেন, “নির্বাচন কমিশন যদি তা না থামায়, তা হলে ঘুরিয়ে, পেঁচিয়ে, এটা বাড়তেই থাকবে।”

রাজস্থানের বাঁসওয়াড়ায় গত রবিবার মোদী বলেছিলেন, ‘আগে যখন কংগ্রেসের সরকার ছিল, তখন বলেছিল, দেশের সম্পত্তিতে প্রথম অধিকার মুসলমানদের। এর অর্থ ওরা সম্পত্তি এককাট্টা করে যারা বেশি সন্তানের জন্ম দেয়, যারা অনুপ্রবেশকারী, তাদের বিলি করবে। এরা আপনাদের মঙ্গলসূত্রও রাখতে দেবে না।’ বিরোধী দলগুলি কমিশনে অভিযোগ করেছে, মোদী ধর্মের জিগির তুলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা ভেঙেছেন।

মোদী আজ মালদায় সরাসরি কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম না করলেও একই সুরে দাবি করেছেন, ইন্ডিয়া মঞ্চের ‘মারাত্মক অভিসন্ধি’ হল— মহিলা, আদিবাসী ও গরিবদের বিরুদ্ধে মারাত্মক আইন এনে, মহিলাদের মঙ্গলসূত্র, আদিবাসী মহিলাদের গয়না এবং গরিবদের সম্পত্তি যাচাই করবে। টাকা-পয়সা, সোনা-রুপো, জমি সব কব্জা করে নেবে আর তাদের ‘ভোটব্যাঙ্ক’-কে দিয়ে দেবে। রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে মোদী বলেন, কংগ্রেসের ‘শাহজাদা’ বিদেশ থেকে এক্স-রে মেশিন নিয়ে এসেছে এবং সারা দেশের সবার এক্স-রে করে দেবে।

কংগ্রেস ও তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে নিয়ে এসে মোদীর অভিযোগ, তৃণমূল ও কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের মধ্যে ‘ঝগড়া’ দেখালেও বাস্তবে দু’দলের আচার-ব্যবহার একই রকম। তৃণমূল ও কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার, তোষণের রাজনীতি। কংগ্রেসের অভিসন্ধি নিয়ে তৃণমূল একটি কথাও বলছে না। মালদার পরে বিহারে প্রচারে গিয়েও মোদী একই অভিযোগ করেন। বিহারে তৃণমূলের বদলে আরজেডি কংগ্রেসের অভিসন্ধি দেখেও চুপ করে রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ তুলেছেন।

কংগ্রেসের দাবি, মোদী শুধু মেরুকরণ করছেন না, কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। কংগ্রেস সম্পত্তি পুনর্বণ্টন করতে চায়, উত্তরাধিকার কর বসাতে চায় বলে মিথ্যে অভিযোগ তুলছেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদী কি এ ভাবেই কমিশনকে বুড়ো আঙুল দেখাবেন? জহর বলেন, “নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার মাধ্যমে দুর্বল নোটিস দিয়েছে কমিশন। যদি রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদবকে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নোটিস পাঠানো যেতে পারে, তা হলে মোদী নন কেন? তিনিও তো সাংসদ পদের প্রার্থী। যদি নির্বাচন কমিশনকে ঘৃণার সংজ্ঞা অভিধান খুলে খুঁজতে হয়, তা দুর্ভাগ্যজনক।”

মোদী আজ কংগ্রেস ও তৃণমূলের তুলনা টেনে বলেছেন, “তৃণমূল সরকার বাংলায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের এনে বসানোর কাজ করছে। ওই অনুপ্রবেশকারীরা আপনাদের জমি দখল করাচ্ছে। আর কংগ্রেস আপনাদের সম্পত্তি ভোটব্যাঙ্কে বিলির কথা বলছে। আপনার অবর্তমানে আপনার সম্পত্তির উপর ৫৫ শতাংশ কর বসানোর পরিকল্পনা করছে। আপনার জীবনভরের রোজগার আপনার অবর্তমানে ছেলে বা মেয়ে পাবে না, তার অর্ধেকের বেশি কংগ্রেস বাজেয়াপ্ত করে নেবে।”

কংগ্রেস যখন জাতগণনার দাবি তুলে জনসংখ্যায় ভাগ অনুযায়ী সংরক্ষণের কথা বলছে, তখন মোদী আজ ফের অভিযোগ করেন, কংগ্রেস তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি-দের সংরক্ষণে বাধা তৈরি করছে। কর্নাটকে কংগ্রেসের সরকার রয়েছে। সেখানে তারা অনেক আগেই ওবিসি সংরক্ষণে সমস্ত মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। কংগ্রেস পাল্টা যুক্তি দিয়েছে, ওবিসি সংরক্ষণে অনগ্রসর মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয় জেডিএস সরকারের আমলে। এখন জেডিএস কর্নাটকে বিজেপির শরিক।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 BJP Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy