কাজল শেখ। —ফাইল চিত্র।
‘লিড’ দিতে হবে কমপক্ষে ৬০ হাজার ভোটের, কেতুগ্রামে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাধিপতি ফায়েজুল হক ওরফে কাজল শেখ এমনই নিদান দিলেন সোমবার। এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিরোধী দলের নেতারা। তাঁদের আশঙ্কা, বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে তাঁর ‘গড়’ কেতুগ্রামের দখল নিতে চাইছেন কাজল। তাঁর নিদানে ভোট-সন্ত্রাসের ইঙ্গিত রয়েছে। যদিও এই আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলে দাবি কাজলের।
গরু পাচার মামলায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই গ্রেফতার করার পরে দলে উত্থান ঘটেছিল তাঁর ‘কট্টর বিরোধী’ বলে পরিচিত কাজলের। দীর্ঘদিন দলে কার্যত ব্রাত্য থাকা কাজলকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের জেলা কোর কমিটিতে ঠাঁই দেওয়ায় তাঁকে অনুব্রতের বিকল্প বলেও ভাবতে শুরু করেছিলেন অনেকে। কাজলকে বীরভূম জেলা পরিষদের সভাপতি করে তাঁর গুরুত্ব দলে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। পরে অবশ্য তাঁকে কোর কমিটি থেকে ছেঁটে দেওয়া হয়। যে কেতুগ্রামে একসময় শেষ কথা ছিলেন অনুব্রত, সেখানে এখন তৃণমূল পর্যবেক্ষক করেছে কাজলকে।
এ দিন কাজল কেতুগ্রাম ১ ব্লক সভাপতি তরুণ মুখ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কার্যত দাপিয়ে বেড়ান কেতুগ্রামের নানা এলাকা। তিন-চারটি জায়গায় ঘেরা জায়গায় কর্মিবৈঠক এবং পরে পথসভা করেন। সকাল ১০টা নাগাদ কাজল প্রথমে পালিটা অঞ্চল সভাপতি ও বুথ কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, কী ভাবে ভোট করতে হবে, তা নিয়ে কর্মীদের সঙ্গে ঘণ্টা দুই আলোচনা করেন তিনি। পরে সেখান থেকে বেরুগ্রাম অঞ্চল সভাপতি ও বুথ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সিজগ্রামে ঘরোয়া বৈঠক করেন। গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে কোন বুথে দলীয় প্রার্থী কত ভোট পেয়েছিলেন, তা কর্মীদের কাছে জানতে চান। রাজ্যের নানা প্রকল্প, বিশেষ করে লক্ষ্মীর ভান্ডারকে হাতিয়ার করে বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন। পাশাপাশি, ভোটের তিন দিন আগে থেকে বুথ কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে প্রতিটি সদস্যকে ‘আরও বেশি সক্রিয়’ হয়ে ওঠার পরামর্শ দেন। নির্দেশ দেন ‘ভোট মেশিনারিকে’ পুরোপুরি কাজে লাগানোর। বিকেল ৪টে নাগাদ বেরুগ্রামে পথসভা করেন তিনি। সেখানে নিজের দাদা তথা কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহনেওয়াজকে পাশে বসিয়ে কাজল ঘোষণা করেন, কেতুগ্রাম বিধানসভা এলাকা থেকে কমপক্ষে ৬০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকবেন বোলপুরের দলীয় প্রার্থী অসিত মাল।
বীরভূম ছেড়ে কেন কেতুগ্রামে? কাজলের জবাব, “দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) আমাকে কেতুগ্রাম বিধানসভায় দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই আমাদের প্রার্থীকে কেতুগ্রাম থেকে ৬০ হাজার ভোটে জিতিয়ে আনার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। আমার দাদা কেতুগ্রামের তিন বারের বিধায়ক। উন্নয়নের প্রচুর কাজ করেছে।’’ বিরোধীদের আশঙ্কা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা গণতন্ত্রকে সম্মান করি। কোনও সংগঠন না থাকায় বিরোধীরা সন্ত্রাসের ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ভোটে ওদের কোনও অসুবিধা হলে আমাকে ফোন করে জানাবেন। সমস্যা মিটে যাবে। এমনকি, ওদের বুথে এজেন্ট দিয়েও সহযোগিতা করতে রাজি আছি।” সঙ্গে জুড়ে দেন, “দিদি আমার উপরে ভরসা রাখেন বলেই আমাকে বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি করেছেন। ওখানে আমাদের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।” শেখ শাহনেওয়াজ বলেন, “আমার ভাই ভাল সংগঠক। কর্মীরা সবাই ভালবাসেন। কেতুগ্রামের দলীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে দলের শক্তি বাড়াতে নানা কর্মসূচিতে আসবে ভাই। তাতেই বিরোধীরা ভয় পেয়েছে।”
বিরোধীদের দাবি, ৬০ হাজার লিডের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়ার অছিলায় কাজল কেতুগ্রামে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছেন। একদা অনুব্রতের ‘গড়’ কেতুগ্রামে থাবা বসানোকেই পাখির চোখ করেছেন তিনি। কেতুগ্রামের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক তমাল মাঝির অভিযোগ, “অনুব্রতের মতো সন্ত্রাসের আর এক নাম কাজল শেখ। কী ভাবে তিনি ৬০ হাজার ভোটে জেতাবেন বলে ভোটের আগে জানিয়ে দিচ্ছেন? কাজল ভোট লুটের চেষ্টা করবেন। বাস্তবে এমন হলে মানুষ জবাব দেবেন।” বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক অটল বালার দাবি, “কাজল শেখ এখানে সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করেছে। পুলিশ নিরপেক্ষ হলে তৃণমূলকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy