Advertisement
E-Paper

প্রচারে বিরোধী প্রার্থীর প্রশংসাও শুনেছে বাংলা

অবাক কাণ্ড, ‘গুরু’ প্রতিটি জনসভায় ‘শিষ্যের’ প্রশংসা করছেন। আবার, ভূপতি ‘গুরু’কে প্রণাম জানিয়ে বক্তৃতা করছেন। মানুষ অবাক। এ কেমন প্রচার!

(বাঁ দিকে) জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ এবং বিপ্লবী ভূপতি মজুমদার।

(বাঁ দিকে) জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ এবং বিপ্লবী ভূপতি মজুমদার। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৪ ০৮:১৬
Share
Save

সাত দফায় লোকসভা নির্বাচন চলছে। সোমবার পঞ্চম দফা হয়ে গেল। বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারে এ রাজ্যে যে ব্যক্তি-আক্রমণ চলে, তা বঙ্গ সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা নয়। বরং, ভোটের আবহেও যুযুধান পক্ষের সৌজন্যের অভাব হয়নি, এমন অনেক উদাহরণ আছে। এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যায়।

সেই নির্বাচনে চুঁচুড়া কেন্দ্রে সকলের নজর। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী ভাবধারার দুই প্রবাদপ্রতিম মানুষ প্রার্থী। স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশের রোষে হুগলি কলেজের চাকরি হারানো অধ্যাপক জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষকে হুগলি বিদ্যামন্দিরে শিক্ষক হিসাবে এনেছিলেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী ভূপতি মজুমদার। সেই ভূপতি কংগ্রেসের প্রার্থী। ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী বিপ্লবাচার্য জ্যোতিষচন্দ্র। তাঁকে ‘গুরু’ মানতেন ভূপতি।

অবাক কাণ্ড, ‘গুরু’ প্রতিটি জনসভায় ‘শিষ্যের’ প্রশংসা করছেন। আবার, ভূপতি ‘গুরু’কে প্রণাম জানিয়ে বক্তৃতা করছেন। মানুষ অবাক। এ কেমন প্রচার! কেউ কারও দোষ ধরছেন না! কেবল দলের ইস্তাহার নিয়ে বলছেন। এমনকি, নির্বাচনী সভায় ‘গুরু’ তাঁর স্নেহের ভূপতির বাঘা যতীনের সঙ্গে সখ্য, বিপ্লব, বিদেশে জেল জীবন, বিদ্যামন্দিরের ভূমিকা নিয়ে প্রশস্তি করছেন। তাজ্জব ব্যপার! মানুষ ঝগড়া করবে কী, সৌজন্য দেখেই অবাক!

ভোটে জিতলেন জ্যোতিষচন্দ্র। ডেকে পাঠালেন ভূপতিকে। ভূপতি এসে বললেন, ‘‘গুরুর জয় মানে শিষ্যর আনন্দ।’’ জ্যোতিষচন্দ্র বললেন, ‘‘আমি নয়, জিতেছে একটা মতাদর্শ। শোষিত মানুষের পক্ষে গিয়েছে রায়। আর তোমার সংগ্রাম তো শোষিতের জন্যই।’’ গুরুকে প্রণাম করলেন শিষ্য।

কয়েক বছর যেতেই জ্যোতিষচন্দ্র অসুস্থতার জন্য রাজনীতি ছাড়লেন। এর পরে চুঁচুড়া বিধানসভায় ভূপতি জিতেছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে। ‘গুরু’ আশীর্বাদ করছিলেন তাঁকে। ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী হয়ে শপথ নিয়ে ভূপতি ছোটেন গুরুকে প্রণাম করতে। কল্যাণী, হালিশহর, কোচবিহারের মতো শহর প্রতিষ্ঠায় বা সংস্কারে হাত দিলেন। দামোদর-ময়ূরাক্ষী ব্যারেজ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা নিলেন। সাজিয়ে তুললেন চুঁচুড়াকে। ইমামবাড়া হাসপাতাল, সাহাগঞ্জ আইটিআই কলেজ, হুগলি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ব্যান্ডেল সার্ভে স্কুল প্রাণ দিয়ে সাজালেন। গুরুর যোগ্য শিষ্য হিসেবে পথের ধুলো মেখেই কাটিয়ে দিলেন জীবন।

(তথ্য: পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Opposition Parties

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}