Advertisement
Back to
Election Campaign

বিপক্ষকে প্যাঁচে ফেলতে ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ বাজছে দিকে দিকে, এ বার ভোটে নতুন ভিডিয়ো-যুদ্ধ

তালিকায় রয়েছে আরও অনেক নাম। শুভেন্দু অধিকারী, তাপস রায়, অর্জুন সিংহের মতো যে নেতারা দলবদল করেছেন, তাঁদেরই পুরনো কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

Old video & audio clippings of TMC and BJP candidates are spreading on social media

অর্জুন সিংহ, মুকুটমণি অধিকারী, সুজাতা মণ্ডল, হিরণ চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ২২:২৩
Share: Save:

প্রচারের রং বদলায় ভোটে ভোটে। ‘সং’-ও বদলায়! বাংলায় এ বারের লোকসভা ভোটের অন্যতম থিম সং হতেই পারে ‘পুরানো সেই দিনের কথা’! তৃণমূল এবং বিজেপির একাংশের কর্মী-সমর্থকেরা যে ভাবে পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে শুরু করেছেন সমাজমাধ্যমে, তা এ ভাবে অতীতে কখনও দেখা যায়নি। কথায় বলে ‘শব্দ ব্রহ্ম’। সেই ‘শব্দ’ই নানান দল বদলানো বা না-বদলানো প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন দু’পক্ষের সমাজমাধ্যমের সৈনিকেরা। কথা এক বার মুখ থেকে বেরিয়ে গেলে তা আর ফেরানো যায় না। আর হাতে হাতে ফোনের এই জমানায় তা যে কী ভাবে ‘স্থায়িত্ব’ অর্জন করে ফেলে, স্বীকার করুন বা না-করুন, মালুম হচ্ছে অনেকেরই।

অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় এখন বিজেপির বিধায়ক। তাঁকে এ বারের লোকসভায় ঘাটাল আসনে প্রার্থী করেছে বিজেপি। হিরণ ২০১৩ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তখন তিনি তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে যে সব ‘ভাল ভাল’ কথা বলেছিলেন, সেই ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সমাজমাধ্যমে। যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘দিদি আমায় সুযোগ দিয়েছেন। তাই তাঁকে ধন্যবাদ। আমাদের কাছে তো লড়াইয়ের অপর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।’’

বিজেপিও শিবিরও পিছিয়ে নেই। তারা আবার বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের পুরনো ভিডিয়ো ছড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুক কিংবা এক্সে (সাবেক টুইটার)। সুজাতা ছিলেন বিষ্ণুপুরের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ তথা এ বারের প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের স্ত্রী। এখন তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালের ভোটে আদালতের নির্দেশে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে প্রবেশই করতে পারেননি সৌমিত্র। স্বামীর হয়ে পুরো প্রচারে ছিলেন সুজাতাই। সেই সময়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চোখাচোখা আক্রমণ শোনা যেত সুজাতার মুখে। সেই সব পুরনো কথাই নতুন করে ছড়াতে শুরু করেছে সমাজমাধ্যমে। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সুজাতা। তখনও আইনত সৌমিত্র-সুজাতা ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। তার পর তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। গত বিধানসভায় আরামবাগ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সুজাতা। তবে তাঁকে হারতে হয়েছিল। এখন তিনি বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য। তাঁর পুরনো ভিডিয়ো সামনে আসা নিয়ে বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা বলেন, ‘‘বিজেপির নিজেদের প্রার্থী নিয়ে বলার কিছু নেই। ওরা কোনও উন্নয়নের কথা বলতে পারছে না। গুণধর সাংসদের কথাও বলতে পারছে না। তাই আমাকে নিয়ে পড়েছে। এ সব করে কোনও লাভ হবে না।’’

বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকারের (যিনি এ বার লোকসভা ভোটেও প্রার্থী) পুরনো একাধিক অডিয়ো এবং ভিডিয়ো ক্লিপও ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। কোথাও তিনি বিজেপির সাংসদ তথা প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর সম্পর্কে মন্তব্য করছেন, কোথাও আড্ডাচ্ছলে ‘কুকথা’। এই সব ভিডিয়ো বা অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করে দেখেনি।

তালিকায় রয়েছে আরও অনেক নাম। শুভেন্দু অধিকারী, তাপস রায়, অর্জুন সিংহের মতো যে নেতারা দলবদল করেছেন, তাঁদেরই পুরনো কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছ‌ে। অর্জুন এঁদের মধ্যে অগ্রণী। তিনি পাঁচ বছরে দু’বার তৃণমূল ছেড়ে দু’বার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। দোলের দিন রসিকজনেদের কেউ কেউ অর্জুনের ছবি দিয়ে মিম ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘রং মাখুন, কিন্তু রং বদলাবেন না’। ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন এ সব প্রসঙ্গ উঠতেই বলছেন, ‘‘তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। তাই এই সব করছে। কবে কোন কথা কী প্রেক্ষাপটে বলেছিলাম তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে না। এখন আমি যদি এনডিএ-এর শরিক থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো কথা টানি, তা কি যুক্তিযুক্ত হবে? তৃণমূল যে কায়দা নিয়েছে, তার প্রভাব ভোটে পড়বে না।’’

বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী গত ৭ মার্চ কলকাতায় তৃণমূলের মিছিলে জোড়াফুলের পতাকা নিয়েছিলেন। তার পর তাঁকেই রানাঘাট লোকসভায় প্রার্থী করে দিয়েছে শাসকদল। সেই তিনি বিজেপিতে থাকালীন সিএএ নিয়ে যা যা বলেছিলেন, তা-ও নতুন করে ছড়াতে শুরু করেছে।

এই প্রচার কি দু’দলের কাছেই ব্যুমেরাং হচ্ছে? এই ধরনের প্রচারের কি আদৌ কোনও অভিঘাত রয়েছে ভোটে? তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মানুষ দেখেন কারা, কী কারণে দলবদল করছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থে? না কি কোনও লড়াইয়ের জন্য, দীর্ঘ দিন কোণঠাসা থাকার কারণে? এই প্রচার হবেই। কিন্তু মানুষও বুঝবেন কে কী কারণে দল বদলেছে। হিরণ আর সুজাতার বিষয় এক নয়। তবে যাঁরা কোণঠাসা হতে হতে, মর্যাদা না পেয়ে দলবদল করেন, তাঁদের বিষয়টা ভিন্ন।’’ বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় কি তা হলে উত্তর কলকাতায় এগিয়ে থাকবেন? কুণালের জবাব, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী ঘোষণা করার পর দলের সবাই নেমে পড়েছেন। উত্তর কলকাতায় তৃণমূল জিতবে। গত বারের মতো ব্যবধানেই জিতবে। তবে আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই। কারণ যিনি বিজেপির প্রার্থী, তিনি তৃণমূল কর্মীদেরও কাছের।’’

বিজেপি মুখপাত্র রাজর্ষি লাহিড়ী মনে করেন না, পুরনো দিনের কথা টেনে প্রচার আদৌ ভোটে কোনও অভিঘাত তৈরি করতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা রাজ্যের মানুষ জানেন কারা চুরি করেছেন, কী কী চুরি করেছেন আর সেই চোরেরা কোন দল আলো করে রয়েছেন।’’

সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ীর বক্তব্য, ‘‘এই প্রচার হচ্ছে বাইনারি তৈরির চেষ্টা করতে। এটা ভুলে গেলে চলবে না, এখনও পর্যন্ত যে প্রার্থিতালিকা বেরিয়েছে, তাতে অনেক বিজেপির লোক তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন, আবার অনেক তৃণমূলের লোক বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। খাতায়-কলমে যিনি বিজেপির বিধায়ক, তিনিই আবার লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE