গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মথুরাপুরের তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদার এবং তাঁর স্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শিলি হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েও এফআইআর দায়ের না করায় মথুরাপুর থানার ওসিকে শো-কজ় করল কলকাতা হাই কোর্ট। হালদার দম্পতির বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের উন্নয়নের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ এনে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষ্ণচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের বর্তমান বিজেপি প্রধান অনুপকুমার মিস্ত্রি। তারই ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ।
শুক্রবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের পর্যবেক্ষণ, ‘‘অন্য বিষয়ে অনুসন্ধান না করেই এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। আর এখানে পুলিশ অনুসন্ধান করার যুক্তি দেখিয়ে অপরাধমূলক অভিযোগ ঝুলিয়ে রেখেছে।’’ হাই কোর্টের প্রশ্ন, এক মাসের বেশি সময় ধরে অভিযোগ পড়ে রয়েছে। এত দিনেও ওসি কেন এফআইআর করেননি, ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে তা জানাতে হবে। আগামী ৬ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
হাই কোর্টে অনুপের আর্জি ছিল, মামলার তদন্তভার সিবিআই এবং ইডিকে দেওয়া হোক। তাঁর অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান থাকাকালীন শিলি একই জায়গায় বার বার কাজের বরাত দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ব্যাপারে জেলাশাসক, এসডিও, বিডিও-কে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকেও জানিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, তার পর থেকেই হুমকি আসছে।
সূত্রের খবর, এক সময়ে মথুরাপুর-১ ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ছিলেন বাপিই। ২০১৮-তে ওই পঞ্চায়েতটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় শিলিকে পঞ্চায়েতের প্রধান করা হয়। বিরোধীদের দাবি, খাতায়-কলমে শিলি প্রধান হলেও বকলমে বাপিই পঞ্চায়েতের কাজকর্ম সামলাতেন। ২০২৩-এর ভোটের পরে ওই পঞ্চায়েত দখল করে বিজেপি। তার পর থেকেই শিলির কাজের খতিয়ান নেওয়া শুরু হয়। তাঁর সময়কালে ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
অনুপের অভিযোগ, ৩৮-৪০টি কংক্রিটের রাস্তা ও নিকাশি নালা তৈরির বরাত বণ্টন করে টাকা তুলে নিলেও কোনও কাজই হয়নি! বিচারপতি সেনগুপ্তকে তিনি জানান, প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি দেখে বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে তাঁকে। শুক্রবার রাজ্য জানায়, ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনুসন্ধানের পরেই আইন মোতাবেক পদক্ষেপ করা হবে। পুরো বিষয়টি এলাকার বিডিও দেখছেন। রাজ্যের এই যুক্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রাথমিক ভাবে অপরাধের প্রমাণ মিলছে। তার পরও হঠাৎ এই ঘটনায় এত অনুসন্ধানের প্রয়োজন পড়ল কেন? যেখানে থানা অভিযোগ নেয়নি বিডিও কী করতে পারেন? ভূপতিনগরের মামলায় দেখেছি অভিযুক্তের স্ত্রীর বক্তব্য শুনেই এফআইআর দায়ের করে দিয়েছিল পুলিশ।’’
সেই সঙ্গে বিচারপতি সেনগুপ্তের মন্তব্য, ‘‘ওই সব অভিযোগের তথ্য, নথি নষ্ট করে দেওয়ার জন্য সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে কি না সন্দেহ রয়েছে। রাজ্যের যদি মনে হয় এতে অপরাধের কোনও ইঙ্গিত নেই তবে খোলা এজলাসে তা পড়া হোক। ফলে ওসির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?’’
বাপি এবং শিলির বিরুদ্ধে গত ৭ মার্চ থানায় অভিযোগ করেছিলেন বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান অনুপ। তাঁর আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারির সওয়াল— তথ্য-সহ প্রমাণ দেওয়ার পরেও এফআইআর দায়ের করতে চায়নি পুলিশ। উল্টে তাঁর মক্কেলকে হুমকি দেওয়া হয়। সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপারকে আদালত নির্দেশ দেয়, কোনও ভাবেই অভিযোগকারীর নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। যদিও বাপি আগেই দাবি করেছেন, রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে সক্রিয় হয়েছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy