প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার প্রথম বাংলায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিক এবং মনোজ টিগ্গার সমর্থনে সভা করেছেন তিনি। সভামঞ্চ থেকে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন বাংলার শাসকদল এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের সভায় একটি বিষয় অনুপস্থিত ছিল— ঝড়। চার দিন আগে রবিবার বিকেলে আচমকা ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। চার জনের মৃত্যুও হয়েছে। ঘটনার দিন উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বৃহস্পতিবার কোচবিহারে গিয়ে লাগোয়া দুই জেলায় হওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে একটি শব্দও খরচ করতে দেখা গেল না প্রধানমন্ত্রীকে। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। নিন্দাও করেছে শাসক তৃণমূল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ছায়া দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন।
তবে মোদী বলতে ওঠার ঠিক আগেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ঝড়ের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘জলপাইগুড়িতে ঝড়ে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। যে সমস্ত ভাইবোনেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের পাশে আছে বিজেপি।’’ সুকান্ত উল্লেখ করলেও ঝড়ের প্রসঙ্গই উঠল না মোদীর বক্তৃতায়।
রবিবার বিকেলে জলপাইগুড়িতে ঘূর্ণিঝড় হয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় জলপাইগুড়ি শহর এবং মালবাজারের বিস্তীর্ণ অংশ। চার জনের মৃত্যু হয়। সে দিন রাতেই এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) ঝড় নিয়ে পোস্ট করেছিলেন মোদী। লিখেছিলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি-ময়নাগুড়ি এলাকায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু পরিবার। অনেকেই তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। রাজ্যের আধিকারিকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ সহায়তা দিতে বলেছি। সাহায্য করছেন বিজেপি কর্মীরাও।’’ অনেকেই মনে করেছিলেন, বাংলায় এসে মোদী এই ঝড়-পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা দেবেন। বিশেষত, জলপাইগুড়ি নিয়ে মমতা যে ভাবে ঝাঁপিয়েছেন, তার দিকে তাকিয়ে মোদীর কাছ থেকেও তৎপরতা আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ঝড় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতায় দলের কর্মীরাই অনেকে হতাশ।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনুর কটাক্ষ, ‘‘বাংলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে হোক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে হোক। আমপানের সময়েও মোদী বাংলার প্রাপ্য টাকা দেননি। সিকিমে তিস্তার বন্যার সময়ে সেখানকার সরকার টাকা পেল, কিন্তু বাংলায় সমপরিমাণ ক্ষতি সত্ত্বেও এখানে টাকা পাঠায়নি কেন্দ্র। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়কেও ছেড়ে কথা বলছে না মোদী সরকার।’’
ঘূর্ণিঝড়ে জলপাইগুড়িতে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উড়ে গিয়েছে ঘরের চাল। নষ্ট হয়েছে চাষের জমি। গাছ পড়ে অনেক রাস্তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন চার জন। আহতের সংখ্যা ছিল শতাধিক। দুর্যোগের খবর পেয়ে সে দিন রাতেই চার্টার্ড বিমানে জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন মমতা। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি ঝড়-বিধ্বস্ত জলপাইগুড়ি ঘুরে দেখেন। মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। আহতদের দেখতে রাতে হাসপাতালেও গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড়ের প্রভাব পড়েছিল আলিপুরদুয়ার জেলাতেও। সেই জেলাতে গিয়েও মমতা পরিস্থিতির তদারকি করেন। ঝড়ের পর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে মমতাই প্রথম উত্তরবঙ্গে পৌঁছন। গত কয়েক দিন উত্তরবঙ্গেই থেকে গিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার কোচবিহার থেকে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী শুরু করেছেন ভোটের প্রচার।
ঝড়ের খবরে মমতার তৎপরতাকে ভোটের প্রচারে ইস্যু করেছে তৃণমূল। তারা প্রচার করেছে, যখন আর কেউ উত্তরবঙ্গে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেনি, তখন সব বাধা পেরিয়ে তাদের দলনেত্রী সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন। এমনকি, সে দিন রাতে জলপাইগুড়িতে রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা বালুরঘাটের বিজেপি প্রার্থী সুকান্তের অনুপস্থিতি নিয়ে আলাদা করে প্রশ্ন ওঠে। কারণ, তিনি ওই সময়ে নিজের কেন্দ্রেই ছিলেন, যেখান থেকে জলপাইগুড়ির দূরত্ব ঘণ্টাচারেক মাত্র। সুকান্ত তো দূর, শুভেন্দু অধিকারীও জলপাইগুড়িতে পৌঁছন সোমবার বেলার দিকে, মমতার অন্তত ১৩ ঘণ্টা পরে। ফলে জলপাইগুড়ির ঝড়-পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম থেকেই কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে বিজেপি। তাদের কোনও বড় মাপের নেতা রাতে উত্তরবঙ্গে পৌঁছননি।
অন্য দিকে, নিজের তৎপরতা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবারের প্রচার-সভা থেকে একাধিক বার আওয়াজ তুলেছেন মমতা। আলিপুরদুয়ারের সভামঞ্চে উঠেই তিনি বলেন, ‘‘ঝড়ের খবর পেয়ে আমার মন কাঁদছিল। তাই আর অপেক্ষা করিনি। ছুটে গিয়েছিলাম। সে দিন রাতে চিকিৎসকেরা কেউ ঘুমাননি। প্রশাসনও জেগেছিল। আমি ভোর ৪টেয় চালসায় গিয়েছি।’’ সে দিন রাতে কখন, কী ভাবে, কী করেছিলেন, বিস্তারিত জানিয়েছেন মমতা। সেই পরিস্থিতিতে একই এলাকায় প্রচারে গিয়ে ঝড় নিয়ে মোদীর নীরবতা বিজেপিকে খানিক অস্বস্তিতে ফেলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy