নরেন্দ্র মোদী এবং জগন্নাথ সরকার। —ফাইল চিত্র।
কখনও কৃষ্ণগঞ্জের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে নাম জড়িয়েছে, কখনও আবার ভাইরাল চ্যাট (সে সবের সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) ঘিরে বিতর্ক। সাম্প্রতিক সংযোজন— কল্যাণী এমসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম উঠে আসা। দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। এত সব কিছুর পরেও আসন্ন লোকসভা ভোটে মতুয়া অধ্যুষিত নদিয়ার রানাঘাটে সেই জগন্নাথ সরকারেই ভরসা রাখল বিজেপি।
আবার প্রার্থী হওয়া নিয়ে জগন্নাথ বলেন, ‘‘গত বছর যে ব্যবধানে ভোটে জিতেছি, তার চেয়েও বেশি ব্যবধানে জিতব এ বার। মানুষ জগন্নাথ সরকারে নয়, মোদী সরকারে বিশ্বাসী।’’
নানাবিধ বিতর্কের জেরে এ বার জগন্নাথকে প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়ে জেলায় দলের অন্দরে জল্পনা ছিল। দলের একাংশের যুক্তি ছিল, জগন্নাথ প্রার্থী হলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিতে পারে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রার্থী হিসাবে মতুয়া নেতা তথা রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর নাম ভাসছিল। মুকুট-ঘনিষ্ঠদের মত ছিল, তরুণ চিকিৎসক হিসাবে রানাঘাটে বিধায়ক যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। পাশাপাশি, মতুয়া ভোটের পুরোটাই ভোটবাক্সে টেনে আনতে পারবেন মুকুটমণি। আবার পাল্টা অভিমতও রয়েছে। দলের অনেকের বক্তব্য, মুকুটমণিও যে একেবারে ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র, তা বলা যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে এমসে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ তুলেও সরব হয়েছিল তৃণমূল। তা ছাড়া, গত বারের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী রূপালি বিশ্বাসকে জগন্নাথ দু’লাখেরও বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন। এই সব বিষয় নজরে রেখেই হয়তো কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি দলীয় নেতৃত্ব। তা সত্ত্বেও এ বারের ভোটে জগন্নাথ প্রার্থী হওয়ায় রানাঘাটে জেতা নিয়ে সন্দিহান দলের একাংশই।
নবদ্বীপ, রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণ, চাকদহ, কৃষ্ণগঞ্জ ও শান্তিপুর— এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। দলীয় সূত্রে খবর, গত বিধানসভা ভোটে ওই সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে এক মাত্র নবদ্বীপেই পিছিয়ে ছিল বিজেপি। পরে উপনির্বাচনে শান্তিপুরও দখল করে তৃণমূল। ওই সূত্রের দাবি, জগন্নাথ প্রার্থী হওয়ায় রানাঘাটের একটি অংশে তো বটেই, কৃষ্ণগঞ্জেও অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে অন্তত ৩০ শতাংশেরও বেশি মতুয়া ভোট রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে তার প্রায় পুরোটাই বিজেপির দখলে গিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ও গত বছরের পঞ্চায়েতে মতুয়া ভোট অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয় রাজ্যের শাসকদল।
দলের একাংশের মত, গত বারের মতো এ বারও মতুয়া ভোট বাক্সে পড়বে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে কেন্দ্রের সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) নীতির উপর। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতাদের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে যে, লোকসভা ভোটের আগেই দেশে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তবে শনিবার কৃষ্ণনগরের সভায় সিএএ নিয়ে মোদী কিছু না বলায় তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। ভোটের আগে যদি শেষ পর্যন্ত সিএএ চালু না হয় দেশে, সে ক্ষেত্রে তৃণমূল মতুয়া ভোটে ভাগ বসাতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন দলের অনেকে।
লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্র নিয়ে রাজ্যের শাসকদল আশাবাদী। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে একটা বড় অংশের মানুষের সমর্থন পেয়েছি আমরা। সংখ্যালঘু ও তফসিলি জাতির ভোটারেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সুবিধা পেয়েছেন। প্রত্যেকেই এ বার তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy