Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

তরজাই সার, খনির ধসে নেই পুনর্বাসন

ধসপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা চেয়ে ১৯৯৮ সালে সিপিএমের তৎকালীন সাংসদ হারাধন রায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থার নির্দেশ দেয়।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৩
Share: Save:

কোনও জায়গায় ধসে বাড়ি-সহ তলিয়ে গিয়েছেন মহিলা। কোথাও আবার বাড়ি উঠোনে ফাটল ধরায় ভূগর্ভে চলে গিয়েছেন তরুণী। এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রায় দু’দশক আগে দেশের শীর্ষ আদালত এই নির্দেশ দিয়েছিল। বছর পনেরো আগে প্রকল্প অনুমোদনও হয়। কথা ছিল, দশ বছরের মধ্যে খনি অঞ্চলের ধসপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে। হাতেগোনা কিছু পরিবার ছাড়া সেই পুনর্বাসন এখনও জোটেনি বেশির ভাগের কপালে। প্রতি ভোটের মতো এ বারও পশ্চিম বর্ধমানের খনি এলাকায় ফের বেধেছে এ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা।

ধসপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা চেয়ে ১৯৯৮ সালে সিপিএমের তৎকালীন সাংসদ হারাধন রায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থার নির্দেশ দেয়। এর পরে রাজ্য সরকারের তরফে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদকে (এডিডিএ) এই কাজের তদারকিতে ‘নোডাল এজেন্সি’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ২০০৯ সালে প্রকল্প অনুমোদিত হয়।

এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুনর্বাসনের জন্য চিহ্নিত প্রায় ২৯ হাজার বাড়ির জন্য কয়লা মন্ত্রক প্রায় ২,৬৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। ইসিএলের মাধ্যমে প্রথম কিস্তিতে পাওয়া টাকায় জামুড়িয়ার বিজয়নগর, অন্ডাল বিমাননগরী এলাকা ও বারাবনির দাসকেয়ারিতে দু’টি জায়গায় ১০,১৪৪টি বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়। সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকি বাড়ি তৈরি করতে আরও ১৪৫ হেক্টর জমি দরকার, যা পেতে সমস্যা হচ্ছে।

এডিডিএ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বিজয়নগরে ১৪০টি বাড়ি দেওয়া হয়েছে জামুড়িয়ার ছাতিমডাঙার বাসিন্দাদের। ওই এলাকার আরও ১৬ জনকে বিজয়নগরে বাড়ি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। টাকার অভাবে দীর্ঘদিন পুনর্বাসিত এলাকায় রাস্তা, বিদ্যুৎ, জলের ব্যবস্থার মতো নানা কাজ থমকে ছিল। ২০২৩ সালের মার্চে কয়লা মন্ত্রক দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ায় অন্ডাল বিমাননগরী এলাকায় ৪৮০টি বাড়ির পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হয়। সেখানে অন্ডালের হরিশপুর, কাজোড়া ধাঙরপট্টি, রানিগঞ্জের তিরাট পঞ্চায়েতের দরবারডাঙার এমন কিছু পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, যাবে নিজের জমিতে বাড়ি নেই।

হরিশপুরে ফাটল ধরা বাড়িতে বাস করা নরেশ মাঝি, সুরজিৎ চৌধুরী, বিশ্বজিৎ ঘোষেরা জানান, মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরেই জামবাদে খোলামুখ খনি লাগোয়া এলাকায় বাড়ি-সহ এক বধূ তলিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের কথা, “আর্থিক সঙ্গতি নেই বলে প্রাণের ভয় নিয়ে বেঁচে আছি।”

আসানসোলের বাম প্রার্থী জাহানারা খানের দাবি, পুনর্বাসনের অধিকার তাঁদের শ্রমিক সংগঠনের লড়াইয়ের ফসল। তাঁর অভিযোগ, “প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে জমির দালালদের মাধ্যমে অনেক বেশি টাকা খরচ করে জমি কেনা হয়েছে। ওই টাকায় আরও বেশি বাড়ি তৈরি করে বিলি করা যেত।” দীর্ঘদিন টাকা ফেলে রেখে সময় নষ্ট করার অভিযোগও তুলেছেন তিনি। বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শ্রীদীপ চক্রবর্তীও দাবি করেন, “কেন্দ্র প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার পরে ছ’বছর ফেলে রেখেছিল রাজ্য সরকার। ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা। এখনও অর্ধেকের বেশি বাড়ি নির্মাণই হয়নি। এর জবাব দিতে হবে।”

এডিডিএ-এর চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, কেন্দ্রের জন্যই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। তাঁর বক্তব্য, “আমরা যে জমি চিহ্ণিত করছি, ইসিএল সেখানে কয়লা আছে দাবি করে নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে না। অথচ, ঝাড়খণ্ডে ঝরিয়ায় পুনর্বাসনের জন্য রাজ্য সরকারের চিহ্নিত জমিতে নির্মাণকাজে বিসিসিএল কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে না। তা ছাড়া, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা যতটা পাঠানোর কথা, তার থেকে অনেক কম পাঠানো হয়েছে।”

ইসিএল সূত্রের দাবি, পরবর্তী কিস্তির টাকা পেতে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী সমীক্ষা করে খরচের হিসাব পাঠাতে হয়। তা করতে দেরি করায় দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে দেরি হয়েছে। জমি সংক্রান্ত অভিযোগও মানতে চাননি ইসিএলের এক কর্তা।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Coal Mine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy