ধুবুলিয়ার মাঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
কৃষ্ণনগরের সভা থেকে সিএএ নিয়ে রাজ্যবাসীকে আবার সতর্ক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ধুবুলিয়ার সুকান্ত স্পোর্টিং ক্লাবের মঞ্চে সভা করেন মমতা। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে আয়োজিত সেই সভা থেকেই সিএএ প্রসঙ্গে সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি। রবিবার তাঁর বার্তা ছিল বিশেষ করে মতুয়াদের উদ্দেশে। মতুয়াদের বিজেপির পাতা ‘ফাঁদে’ পা না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, বিজেপি মিথ্যা কথা বলে মানুষকে ভোলাতে চাইছে। সেই ‘ফাঁদে’ পা দিলে মতুয়ারা নিজের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনবেন।
সভামঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘এখানে আসতে গিয়ে আমি একটা পোস্টার দেখলাম। তাতে লেখা ‘সিএএ’ (ক্যা)। সিএএ নিয়ে ওরা একটা কমিটি তৈরি করেছে, তাতে সেন্সাসের লোকও আছেন। কেন সেন্সাসের লোক রেখেছে? ওদের মিথ্যা কথায় ভুলবেন না।’’ এর পরই মতুয়াদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, ‘‘মতুয়া ভাইবোনেরা, যাঁরা বিজেপির মিথ্যা কথায় ভুলছেন, ভাবছেন নিজেদের অধিকার পেয়ে গেলেন। পাসপোর্ট কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার দেয়। রাজ্য সরকার দেয় না। আমরা অত্যাচার করি না। অত্যাচার করে কেন্দ্র। আসলে সিএএ হল মাথা। তার ল্যাজা হল এনআরসি। সিএএ করলেই এনআরসিতে পড়ে যাবেন।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার পাল্টা আক্রমণ, ‘‘বিজেপি নেতারা কেন সিএএতে আবেদন জানাচ্ছেন না? ওঁদেরও বলুন, আবেদন করতে। যে-ই করবে, বিদেশি হয়ে যাবে। এটা মাথায় রাখবেন। গত পরশুও মণিপুরে সিএএ নিয়ে দু’জনকে খুন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন বাঙালিও ছিলেন। কিছু দিন আগে সোনারপুরে এক যুবক সিএএ নিয়ে চিন্তা করতে করতে মারা গিয়েছেন। অসমেও কত লোক মারা গিয়েছেন। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। আপনারা আমার উপর আস্থা রাখুন। মোদীর গ্যারান্টি জিরো।’’
মমতা আরও বলেন, ‘‘আমি বাংলায় সিএএ করতে দেব না, এনআরসি করতেও দেব না। কাউকে নতুন করে উদ্বাস্তু হতে দেব না।’’ মতুয়াদের উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, ‘‘আপনারা কি নিজের সর্বনাশ নিজে করতে চান? যদি না চান, আমাদের ভোট দিন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনাদের তো ভোটের অধিকার আছে, ভোট দেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার পান, কৃষক ভাতা পান, আপনাদের ছেলেমেয়েরা সবুজসাথী পায়। স্কুলে যায়। কেউ কেউ মাদ্রাসা বা অন্য কোথাও যায়। মনে রাখবেন, আমরা থাকলেই এগুলোও থাকবে। দরকার হলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু বিজেপি এলে একটা কথাও বলতে পারবেন না। বিজেপি দাঙ্গাবাজ। ওদের কাজ মিথ্যা বলে মতুয়া ভোট ভাঙা। তাই বিপদে পড়তে না চাইলে আমাদের ভোট দিন। ১২ বছর আমরা আছি, কারও উপর অত্যাচার করিনি। নিজেদের স্বার্থেই আমাদের ভোট দিন। সিএএ, এনআরসি বন্ধ করতে চাইলে আমাদের ভোট দিন। কেউ আপনাদের নাম লেখাতে চাইলে বলে দেবেন, আমাদের নাম লেখা আছে। নতুন করে নাম লেখাব না। লেখালে যে নাম ছিল তা-ও কেটে যাবে।’’
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ দেশ জুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু করেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিএএ আইন পাশ করিয়েছিল তারা। তবে আইনে পরিণত হলেও প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে সিএএ-র ধারা-উপধারা যুক্ত হয়নি। ফলে বাস্তবে এই আইন কার্যকরও হয়নি। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে সেই আইন চালু করার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র। সিএএ অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। বিজেপি প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, সিএএ-তে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না। বরং নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছে এই আইন। তবে তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলি শুরু থেকেই সিএএ-র বিরোধিতা করে এসেছে। তাদের বক্তব্য, সিএএ-র মাধ্যমেই দেশের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ছক কষেছে বিজেপি। রবিবার ধুবুলিয়াতেও সেই সুরেই মতুয়াদের সাবধান করলেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy