(বাঁ দিক থেকে) মানিক সরকার, বিপ্লব দেব, প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ, সুদীপ রায়বর্মণ। —ফাইল চিত্র।
ত্রিপুরার দু’টি আসনেই জিতল বিজেপি। পদ্মশিবিরকে রুখতে জোট করেছিল সিপিএম কংগ্রেস। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হল না। দু’টিতেই বিপুল ভোটে জিতল বিজেপি।
গত লোকসভা ভোটেও ত্রিপুরার দু’টি আসনেই জিতেছিল পদ্মশিবির। তবে এ বার দুই কেন্দ্রেই প্রার্থী বদল করেছিল তারা। পশ্চিম কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। তিনি কংগ্রেসের আশিস সাহাকে ছ’লক্ষ ভোটে পরাস্ত করেছেন। পূর্বে বিজেপির টিকিটে লড়েন কৃতী সিংহ দেববর্মা। যিনি সম্পর্কে তিপ্রা মথা প্রধান তথা রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যোতকিশোর দেববর্মার বোন। সিপিএমের রাজেন্দ্র রিয়াংকে চার লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাস্ত করেছেন কৃতী। গত বিধানসভা ভোটের মতো এ বার লোকসভা নির্বাচনেও ত্রিপুরায় বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল। পশ্চিম কেন্দ্রে জোটের কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন আশিস সাহা। আর পূর্ব কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন রাজেন্দ্র রিয়াং।
ত্রিপুরা পশ্চিম লোকসভা মূলত বাঙালি অধ্যুষিত। পূর্ব লোকসভার সিংহভাগ এলাকাতেই জনজাতি অংশের বাস। যে কারণে ত্রিপুরা পূর্ব লোকসভাটি জনজাতি সংরক্ষিত। শেষ ছ’বছরে ত্রিপুরার রাজনীতির সমীকরণে বিবিধ বদল এসেছে। সেই বদলের আবার দু’টি দিক রয়েছে। এক, শাসক থেকে বামেরা প্রায় প্রান্তিক বিরোধী শিবিরে পরিণত হয়েছে। দুই, নতুন শাসক বিজেপির অভ্যন্তরীণ বদল এবং পদ্মশিবিরে মন্থন জারি থেকেছে। বদল এসেছে বিজেপির শরিকি রাজনীতিতেও।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ত্রিপুরার দু’টি আসনেই সিপিএম ছিল তৃতীয় স্থানে। তার পাঁচ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৪ সালে দুই আসনেই সিপিএমের ভোট ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। ২০১৯ সালে সেটাই নেমে আসে ১৫ এবং ১৯ শতাংশে। অর্থাৎ, পাঁচ বছরের মধ্যে কমবেশি সময়ে ৪৫ শতাংশ ভোট হ্রাস পায়। ২০১৯ সালে দুই আসনেই কংগ্রেস ছিল দ্বিতীয়। তাদের ভোট ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। ৬ শতাংশ থেকে বিজেপির ভোট ২০১৯ সালে পৌঁছেছিল পূর্ব ত্রিপুরায় ৪৬ শতাংশে এবং পশ্চিম কেন্দ্রে ৫১ শতাংশে। এ বার বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোট দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। বিজেপি পেয়েছে ৭১ শতাংশ ভোট।
বিপ্লবকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি থেকে সরিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ মানিক সাহাকে সেই জায়গায় বসিয়েছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। মানিকের জায়গায় রাজ্যসভার সাংসদ করে পাঠানো হয়েছিল বিপ্লবকে। বছর দেড়েক আগে যখন আগরতলা এ হেন ঘটনায় আলোড়িত, তখন প্রায় রটেই গিয়েছিল, বিপ্লবকে ‘ত্রিপুরাছাড়া’ করে দিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। উল্লসিত ছিল দলে বিপ্লব-বিরোধী গোষ্ঠীও। কিন্তু দেখা যায়, সেই বিপ্লবকেই ফের লোকসভায় প্রার্থী করে ত্রিপুরায় ফিরিয়ে এনেছে দল। বিদায়ী মন্ত্রিসভার রাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিককে টিকিট না দেওয়াটাও ছিল এ বারের ত্রিপুরার ভোটে বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য। পূর্ব কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা যে টিকিট পাবেন না, তা বছরখানেক আগেই স্পষ্ট ছিল। তবে প্রতিমা যে বাদ পড়বেন, তা অনেকেরই ধারণার মধ্যে ছিল না।
তবে যে ভাবে তিপ্রা মথা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল থেকে সরকারের শরিক হয়ে গিয়েছিল চার মাস আগে, তা সম্ভবত গত ছ’বছরে ত্রিপুরার রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় চমক। যে অনিমেষ দেববর্মা ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, তিনিই হয়ে যান মন্ত্রী! বাংলায় শুভেন্দু অধিকারী গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভায় যোগ দিলে যেমন হবে। তা-ও আবার লোকসভা নির্বাচনের অব্যবহিত আগে। জনজাতিদের মধ্যে একদা সিপিএমের গণসংগঠন গণমুক্তি পরিষদের নিরবচ্ছিন্ন প্রভাব ছিল। কিন্তু সেই প্রভাব কমতে থাকে ২০১৮ সাল থেকে। উঠে আসে আইপিএফটি নামক দলটি। যে দল ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে বাম সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময়ে ছিল বিজেপির শরিক। কিন্তু ক্রমে সেই দল গুটিয়ে যেতে যেতে কার্যত উঠেই গিয়েছে। সেই ফাঁকা জায়গাতেই মাথা তুলেছে তিপ্রা মথা।
রাহুল গান্ধীর একদা আস্থাভাজন প্রদ্যোত ২০২০ সালে কংগ্রেস ছেড়ে মথা তৈরি করেন। তৈরি হওয়ার চার মাসের মধ্যে সেই দল একক শক্তিতে স্বশাসিত জেলা পরিষদ দখল করেছিল। ত্রিপুরার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালদের অনেকে এ-ও বলেন, আইপিএফটিকে দুর্বল করতে বিজেপির দাক্ষিণ্যেই মথার জন্ম হয়েছিল। যদিও মথার দাবি, জনজাতিদের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যেই তাদের দল তৈরি হয়েছে। গোড়ায় তারা বিজেপি-বিরোধী থাকলেও এখন তারা সরকারের শরিক। তিপ্রা মথা সরকারে শামিল হওয়ায় ত্রিপুরায় প্রধান বিরোধী দল এখন সিপিএম। পরিস্থিতি বিবেচনা করে মানিক সরকারের রাজ্যেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যেতে এক প্রকার বাধ্যই হয়েছিল সিপিএম। কিন্তু তাতেও যে রক্তক্ষরণ থেমেছে তা নয়। পাশাপাশিই রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy