Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

ভোট যোগ হলে কি ঘুরবে খেলা, অপেক্ষায় ভগবানগোলা

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ১৯৫৭ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত ১৬টি নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএম জিতেছে ৬ বার করে। বাকি ৪ বার নির্দল বা অন্য দল।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

বিমান হাজরা
ভগবানগোলা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৪ ১০:৩৩
Share: Save:

তিন বছর আগের কথা। বিধানসভা ভোটের সময় এখানে তৃণমূলের প্রার্থী ইদ্রিস আলির বিরুদ্ধে দলের মধ্যেই ‘বহিরাগত’ বলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। ইদ্রিস কিন্তু রেকর্ড মার্জিনে জিতেছিলেন। এ বারে ইদ্রিসের মৃত্যুতে সেই আসনের উপনির্বাচনে দলের স্থানীয় নেতা রেয়াত হোসেন সরকারকে প্রার্থী করেছে শাসক দল। কিন্তু তাতেও দলে ক্ষোভ মেটেনি। ভোটের হাওয়ায় বরং ইঙ্গিত মিলছে, মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের প্রার্থী সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের আকর্ষণে ভগবানগোলা বিধানসভায় সুবিধা পেতে পারেন কংগ্রেস প্রার্থী আঞ্জু বিবি। সম্প্রতি ভগবানগোলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও সেলিমের যুগ্ম সভায় যে ভিড় হয়েছে, তাতে কংগ্রেসের কর্মীরাই অবাক। অধীরের দাবি, ‘‘এত ভিড় আমি ভগবানগোলায় দেখিনি। এই ভিড় মহম্মদ সেলিমের আকর্ষণে হয়েছে।’’

কিন্তু ভোটের জনসভায় ভিড়ের প্রতিফলন যে শেষ পর্যন্ত ভোটবাক্সে পড়বে, তা কেউই জোর দিয়ে বলতে পারেন না। ২০১৯ থেকে আঞ্জু ভগবানগোলা ২ ব্লকের কংগ্রেসের সভানেত্রী। ভাল সংগঠক, বক্তাও। তবে পরিচিত কম। শ্বশুরবাড়ি কংগ্রেসের পরিবার। সেই সূত্রে তিনি কংগ্রেসের সমর্থক। স্বামী একটি স্কুলে চাকরি করেন। শ্বশুরও এক সময় জেলা পরিষদের প্রার্থী হয়েছিলেন।

ভগবানগোলার রাজনীতিতে বরাবরই মূল লড়াই কংগ্রেস ও সিপিএমে। এই রেষারেষি এতটাই তীব্র যে, বাম-কংগ্রেসে উপরতলায় জোট হলেও কংগ্রেস সমর্থকেরা সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দিতে রাজি হন না কখনওই। ২০১৬ সালে তাই সিপিএম প্রার্থী মহসিন আলির বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হন আঞ্জু বিবি। তবে সিপিএম প্রার্থী যখন লক্ষ ভোট পেয়ে এক নম্বরে, আঞ্জুর ভোট প্রাপ্তি তখন ছিল মাত্র ৫১০। তবে ভগবানগোলা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রেরই অন্তর্গত এবং এ বারে সেলিম যে হেতু সেখানে প্রার্থী, তাই বামেদের ভোট তাঁদের পক্ষেই যাবে বলে আশায় কংগ্রেস। বামেদের স্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘‘এ বারে কংগ্রেসের প্রার্থী বামেদের ভোট পাবেন।’’

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ১৯৫৭ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত ১৬টি নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএম জিতেছে ৬ বার করে। বাকি ৪ বার নির্দল বা অন্য দল। ২০১৯-এর লোকসভায় ভগবানগোলা বিধানসভায় কংগ্রেস ও সিপিএম মিলিয়ে ভোট ছিল ৯৪ হাজারের বেশি। তৃণমূল একা পেয়েছিল ৯৩ হাজার। ২০২১ সালে ওই আসনে ১ লক্ষ ৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন ইদ্রিস। পঞ্চায়েত ভোটে ভগবানগোলার ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াই হয় কংগ্রেস–সিপিএমে। জেলা পরিষদে সেখানে কংগ্রেস দুই ব্লকে পায় ৭২,৭৯৩ ভোট, সিপিএম পায় ৫২,৭৪৬। দু’পক্ষ মিলে ১,২৫,৫৩৯ ভোট। আর তৃণমূল পেয়েছে ১,০১,৪৬৭ ভোট। এই হিসাবই সেলিমকে আস্থা দিচ্ছে, ভরসা জোগাচ্ছে আঞ্জু বিবিকেও।

তৃণমূলের দাবি, এই ব্যবধান এ বার অনায়াসেই পার করবে। তৃণমূলের প্রচারও ভালই। কংগ্রেস বরং প্রচারে পিছিয়ে। কিন্তু রেয়াতের পিছু ছাড়ছে না গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটা। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খানের হুঁশিয়ারি থেকে যা স্পষ্ট। তাহের সম্প্রতি বলেন, “ভগবানগোলা বিধানসভায় গদ্দার রয়েছে। কে কী করছে, কে অভিনয় করছে, আমাদের সর্বত্র নজর রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কারও করা হবে।”

তার পরেও ভগবানগোলার এক প্রবীণ তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘রেয়াতের যোগ্যতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলছেন না। কিন্তু কী এমন ঠেকা পড়ল দলের যে, রেয়াতকেই ব্লক সভাপতি, রেয়াতকেই জেলা পরিষদে প্রার্থী করে তাঁকে কর্মাধ্যক্ষ করতে হবে? তাঁকেই প্রার্থী করতে হবে বিধানসভায়? এক ব্যক্তি এক পদ নীতি কোথায় গেল দলের?” ক’দিন আগেই খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভগবানগোলায় সভা করে বলে গিয়েছেন সমস্ত দ্বন্দ্ব মেটাতে হবে। সেই থেকে প্রার্থী নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউই। প্রচারে যদিও দেখা যাচ্ছে না বহু পুরনো নেতাকে।

রেয়াতের দাবি, সব নেতাই তাঁর সঙ্গে থেকে প্রচার করছেন, জয় নিয়ে সংশয় নেই। কুঠিরামপুরে প্রচার শেষ করে রেয়াতের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর। বলছেন, “এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। মানুষ সর্বত্র তাদের ঘরের ছেলেকে নিয়ে সাড়া দিয়েছেন।” এই কড়া রোদে সভা, মিছিলের থেকেও রেয়াত পাড়ায় পাড়ায় কর্মী বৈঠকে জোর দিয়েছেন। প্রচারেও যে কিছুটা এগিয়ে, তা চোখে পড়ে ভগবানগোলার দেওয়ালগুলির দিকে তাকালেই। শাসক দলের পক্ষেও যে রায় যেতে পারে, তা স্বীকার করছেন কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক। তিনি মনে করেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডারে মহিলা ভোটাররা কিছুটা হলেও প্রভাবিত। হাজার ২০ পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে। লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় এটা।”

গেরুয়া শিবির এখানে অনেকটাই ম্লান। ভগবানগোলায় সংখ্যালঘু ভোটার ৮৫.৭%। ২০১১ সাল ২০২১ পর্যন্ত এই বিধানসভায় পর পর তিন বার মেহেবুব আলমকে বিজেপি প্রার্থী করে। প্রতি বারই জামানত জব্দ হয় তাঁর। এ বার তাই এলাকার এক মণ্ডল সভাপতি ভাস্কর সরকারকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁর দাবি এ বারে পরিস্থিতি বদলাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 TMC Spot Reporting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy