পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে কোন বিধানসভা এলাকায় কত লিড, চলছে জোর চর্চা পুরুলিয়ায়। নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়া শহরের একটি চায়ের ঠেক। সকাল সকাল তখনও সে ভাবে জমে ওঠেনি আড্ডা। পাতলা ভিড়ে চায়ের কাপ হাতে খবরের কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে চা বিক্রেতাকেই প্রশ্ন করে বসলেন এক ব্যক্তি, “কে জিতছে?” মুচকি হেসে বিক্রেতার জবাব, “সবারই তো ওই একই প্রশ্ন! সবুর করুন, ৪ জুনই জানতে পারবেন।”
শুধু পুরুলিয়া শহরই নয়। মানবাজার থেকে কাশীপুর, বাঘমুণ্ডি থেকে পাড়া—সর্বত্র সকাল থেকে বিকেল, চায়ের কাপে কার্যত ঝড় তুলছে একটাই প্রশ্ন। কে জিতছেন পুরুলিয়া আসনে! হাটে-বাজারে পরিচিত খদ্দেরদের কাছেও হেঁয়ালিতে প্রশ্ন ছুড়ছেন বিক্রেতারা, এ বারে কোন ফুল—বড় না ছোট! রাজনৈতিক শিবিরেও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কোন বিধানসভায় কার লিড থাকবে, রীতিমতো হিসেব কষে আন্দাজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে ঘাসফুল থেকে পদ্ম, দুই শিবিরেরই দাবি, জোর টক্কর হলেও শেষ হাসি হাসবেন তারাই।
পাঁচ বছর পিছিয়ে যাওয়া যাক। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে রাজনৈতিক আঙিনায় তুলনায় নবীন বিজেপির জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো দু’লক্ষের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের মৃগাঙ্ক মাহাতোকে। সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো ও ফরওয়ার্ড ব্লকের বীরসিংহ মাহাতোরাও। বছর দুয়েক পরে, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও জেলার ন’টির মধ্যে ছ’টি আসন জিতে নেয় গেরুয়া শিবির। শতাংশের বিচারে বিজেপি ৪১.৩৪ ও তৃণমূল ৪০.৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সংযুক্ত মোর্চার দিকে গিয়েছিল ১২.০৪ শতাংশের সমর্থন। তৃণমূল শিবিরের যদিও দাবি, অঙ্কের বিচারে ছ’টি আসনে হার স্বীকার করতে হলেও গেরুয়া শিবিরের চেয়ে মোটেই পিছিয়ে নেই। ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে বিজেপির চেয়ে ১৪,০৯২ ভোটে পিছিয়ে রয়েছে তারা, যা এক শতাংশেরও কম। ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলও আশা জাগাচ্ছে তৃণমূল শিবিরে। পুরুলিয়া লোকসভা এলাকার আওতাধীন ৩২টি জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট যেখানে ৫,৩৮,৯৮০, বিজেপির দিকে গিয়েছিল ৩,৫৯,৩৮৩টি ভোট।
বিগত নির্বাচনগুলির এই সব ফল সামনে রেখে ঘাসফুলের পক্ষে বাজি ধরছেন অনেকেই। বিপক্ষ মতও রয়েছে। তাদের যুক্তি, ২০১৯-এর ভোটে সব হিসেবই উল্টে দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। ভোট শতাংশের হিসাবে ২০১৪-এ প্রাপ্ত ৫.৮৬ শতাংশ থেকে বিজেপি পৌঁছে গিয়েছিল ৪৯.২৮ শতাংশে। লক্ষণীয় ভাবে ভোট কমে গিয়েছিল বাম ও কংগ্রেস, দুই শিবিরেরই।
ফরওয়ার্ড ব্লক আলাদা লড়লেও ভোটের ময়দানে এ বার এক সঙ্গে রয়েছে কংগ্রেস ও বাম। রয়েছে আদিবাসী কুড়মি সমাজের প্রার্থীও। গত পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে দেখলে, বাম-কংগ্রেসের সম্মিলিত ভোট এবং আদিবাসী কুড়মি সমাজ সমর্থিত নির্দলদের ভোট মেলালে সংখ্যাটা তিন লক্ষ পার করে। সেই ভোটের কতটা তারা ধরে রাখতে পারছে, তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে পুরুলিয়ার ফল, মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তবে জয়ের ব্যবধান যে গত বারের মতো দু’লক্ষ ছাড়াবে, মানছেন না বিজেপির অতি বড় সমর্থকও। পদ্ম শিবিরের বরং দাবি, সাতটির মধ্যে অন্তত চারটি বিধানসভায় ‘লিড’ থাকবে তাদের। অন্য দিকে, পুরুলিয়া বাদে বাকি ছ’টি বিধানসভাতেই ‘লিড’ দেখছে ঘাসফুল শিবির। কার হিসেব শেষমেষমিলল, উত্তর মিলবে ৪ জুন ভোটবাক্স খোলার পরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy