—প্রতীকী চিত্র। —ফাইল চিত্র।
এক সময়ে এই এলাকা সন্ত্রাসের জন্য বার বার উঠে আসত শিরোনামে। ভোটের আবহে খুন-জখম-বোমাবাজির অভিযোগ বাড়ত। সেই দিন গিয়েছে। মঙ্গলকোটে এখন আর সেই সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে না। গত এক দশকে এলাকায় প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য ঘাসফুল শিবিরের। ভোটের লড়াইয়ে তাদের সামনে সে ভাবে মাথা তুলতে দেখা যায়নি বিরোধীদের। তা সত্ত্বেও ‘চাপা সন্ত্রাস’ বন্ধ হয়নি তাদের নেতা-কর্মীদের উপরে, অভিযোগ বিরোধীদের। বছর দুয়েক আগে থেকে আবার এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খানিক বদল এসেছে। রাজ্যের শাসকদলের তরফে যিনি এই এলাকা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতেন, সেই অনুব্রত মণ্ডল গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে রয়েছেন তিহাড় জেলে। তাঁর অনুপস্থিতিতে এ বার লোকসভা ভোটে এই এলাকায় কী চিত্র তৈরি হয়, তৈরি হয়েছে আগ্রহ।
পূর্ব বর্ধমানের এই বিধানসভা এলাকাটি রয়েছে বীরভূমের বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে। তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, এই অঞ্চলে দলের মাথাব্যথা ‘গোষ্ঠীকোন্দল’। দলের বেশ কয়েক জন কর্মী গত কয়েক বছরে খুন হয়েছেন। সেগুলিতে অভিযুক্তদের তালিকায় দলেরই নেতা-কর্মীদের নাম উঠে এসেছে। দলের একাংশের দাবি, এলাকার ক্ষমতা দখল এবং অজয়ের বালি কারবারের নিয়ন্ত্রণ— মূলত এই দুইয়ের লড়াইয়েই কোন্দল।
মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকায় অতীতে বরাবর সিপিএমের দাপট ছিল। বাম জমানায় বেশ কিছু তৃণমূল কর্মীকে খুন, বাড়িতে আগুন লাগানোর মতো অভিযোগ উঠেছে পর পর। তবে একটা সময় থেকে দলের রাশ হাতে নিতে শুরু করেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত। কিন্তু ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটেও সামান্য ব্যবধানে মঙ্গলকোট কেন্দ্রে হেরে যায় তৃণমূল। পরের বিধানসভা ভোটে অবশ্য জয়ী হয় তৃণমূল। অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দলের ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর নেতৃত্বে তার পর থেকে নানা ভোটেই জয়যাত্রা ধরে রেখেছে তৃণমূল।
তবে তৃণমূলের নানা সূত্রের দাবি, অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরে দলের কর্মীদের মনোবল কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছিল। তবে তা সামলেই গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল বড় জয় পায়। যদিও বিরোধীদের দাবি, অনুব্রত ওরফে কেষ্টর পথ অনুসরণ করেই ‘নীরব সন্ত্রাস’ হাতিয়ার করে বিরোধীদের ভোটের মাঠে প্রায় নামতেই দেওয়া হয়নি। কয়েক দিন আগে বীরভূমে দলের সভায় এসে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেষ্টর প্রশংসা করেন। তবে মঙ্গলকোটের সংগঠন দেখার জন্য বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখকে দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় রাজনীতিতে কাজল কেষ্ট-বিরোধী বলে পরিচিত ছিলেন। এই আবহে, লোকসভা ভোটে তৃণমূলের রণকৌশল কী হবে, সে নিয়ে জল্পনা বাড়ছে এলাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মঙ্গলকোটের নতুনহাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, “প্রায় এক দশক ধরে এখানে তৃণমূল একচ্ছত্র ভাবে রাজত্ব করছে। বিরোধী বলে কার্যত কিছু নেই। তা সত্ত্বেও তৃণমূলের কয়েক জন নেতা খুন হয়ে গিয়েছেন। এ সব নিয়ে মানুষের মনে তো প্রশ্ন রয়েছেই।’’ এলাকার আর এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির নানা কাজে দুর্নীতির অভিযোগ, অবৈধ বালি কারবারের রমরমা রয়েছে। আবার এলাকায় উন্নয়নও হয়েছে। তাই ভোট কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে কেউই খুব নিশ্চিত নয়।’’
বিজেপির অভিযোগ, অনুব্রতর নেতৃত্বে যে সন্ত্রাস চলত, তাতে বিরোধীরা মাথা তুলতে পারত না। প্রতিবাদ করলেই নানা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হত। অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরেও বিরোধীদের উপরে সন্ত্রাস পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তবে মানুষ এখন সরব হচ্ছেন, দাবি বিজেপির। দলের বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী পিয়া সাহা বলেন, “গত লোকসভা ভোটের তুলনায় এ বার আমাদের প্রতি মানুষের সমর্থন আরও বেড়েছে। তাই এখানে আমিই এগিয়ে থাকব।’’
বামেদের অবশ্য দাবি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ তাদেরই বেছে নেবেন। সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধান বলেন, “মঙ্গলকোটে বরাবর আমাদের ভাল শক্তি রয়েছে। তৃণমূলের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেও মানুষ রাস্তায় নেমে আমাদের সমর্থন করছেন। জয় আমাদের হবেই।’’
বিরোধীদের অভিযোগ আমল দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের প্রার্থী অসিত মাল বলছেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে আমরা এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন করেছি। ও দিকে, বিজেপি দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে। সিপিএম গুরুত্ব হারিয়েছে। তাই এ বারও মানুষ আমাকেই নির্বাচিত করবেন।’’
কেষ্ট-হীন মঙ্গলকোটে একই
রকম ঘাসফুল ফোটে কি না, নজর এখন সে দিকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy