শ্রীরামপুর গণনা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে।
রাজ্যের যে ক’টি আসন নিয়ে এ বারের লোকসভা ভোটে আশাবাদী ছিল সিপিএম, তার মধ্যে অন্যতম শ্রীরামপুর। দলীয় নেতৃত্ব ধরে নিয়েছিলেন, তিন বারের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবেন দলের প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। কিন্তু তা হল না।
মঙ্গলবার সকালে ইভিএমে গণনা যত এগিয়েছে, লাল তত ফিকে হয়েছে। লড়াই সীমাবদ্ধ থেকেছে সবুজ আর গেরুয়ার মধ্যে। একই ভাবে হুগলি এবং আরামবাগেও সিপিএম কার্যত ধর্তব্যের মধ্যেই আসেনি। অর্থাৎ, হুগলিতে বামেদের হাত এ বারেও শূন্য।
সিপিএম নেতৃত্ব মানছেন, এই ফল তাঁদের কাছে ‘অপ্রত্যাশিত’। হুগলি জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের দিক থেকে এই ফল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এমন নয় যে জেলার সব আসনে আমরা জেতার আশা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের প্রচারে মানুষের যে সাড়া আর উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছিলাম, তাতে শ্রীরামপুর লোকসভার যা ফল, তা আমাদের ভাবনার সঙ্গে একেবারেই মিলছে না।’’ পোড়খাওয়া বামনেতার পর্যবেক্ষণ, মানুষকে ‘পড়তে’ কোথাও তাঁদের ভুল হয়ে গিয়েছে।
বিকেলে এক সিপিএম কর্মী বলছিলেন, রিষড়ার কোনও কোনও বুথে তাঁরা দুই অঙ্কেও পৌঁছতে পারেননি। এমন ফলে তাঁরা যে হিসেব মেলাতে পারছেন না, বলাই বাহুল্য। ইভিএমে সমস্যা? খটকা লাগছে। কিন্তু প্রশ্ন তোলার জোরালো প্রমাণ নেই।
দীপ্সিতার নিজের কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া, কথাবার্তায় মনে হয়েছিল অন্য রকম ফল হবে।’’ এর সঙ্গেই সিপিএমের এই তরুণ মুখ জোর গলায় জানিয়ে দিয়েছেন, লড়াই-আন্দোলনের ময়দান থেকে সরছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা আমাদের দেখে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছেন, এজেন্টদের গায়ে হাত দিয়েছেন, তাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা যাতে ঘুষ না দিয়ে কলেজে ভর্তি হতে বা চাকরি পেতে পারেন, সে জন্য আমরা রাস্তায় থাকতাম। ভোটে জিতলে লোকসভায় দাঁড়িয়ে বলতাম, এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আগের মতোই বলব।’’ হেরেও চোয়াল শক্ত সিপিএম প্রার্থীর।
সিপিএমের নেতাদের একাংশের বিশ্লেষণ, গোটা দেশেই প্রবল বিজেপি বিরোধী হাওয়া কাজ করেছে। সেই ক্ষেত্রে বিরোধী হিসেবে তাঁরা মানুষের মধ্যে আস্থা বা ভরসার জায়গা তৈরি করতে পারেননি। সেই কারণে হুগলি এবং আরামবাগের ফলও আশানুরূপ হয়নি।
হুগলির সিপিএম প্রার্থী মনোদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘সামগ্রিক পরিস্থিতির বিচারে আমাদের ফল অপ্রত্যাশিত। বুথভিত্তিক ফলাফল হাতে এলে, কারণ পর্যালোচনা করা হবে।’’ আরামবাগে দলের ফলাফল নিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের বিশ্লেষণ, ‘‘আমাদের ভোট বাড়বে ভেবেছিলাম। বাড়েনি। সংখ্যালঘু এবং তফসিলি ভোট পুরোটাই তৃণমূল পেয়েছে। সর্বোপরি, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প প্রভাব ফেলেছে।’’
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল মুখপাত্র স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ বার ছিল সংবিধান রক্ষার লড়াই। মানুষ বিজেপির মুখের উপর জবাব দিয়েছে। হুগলির তিনটি আসনেই মানুষ তৃণমূলকে জিতিয়েছে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী প্রকল্পে জন্য।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষ জানে, বাম এবং কংগ্রেসের মতো শক্তি রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে প্রকৃত লড়াই দিতে পারবে না। তাই বাম-কংগ্রেসের থেকে গোটা রাজ্যেই মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’’
(তথ্য সহায়তা: পীযূষ নন্দী ও সুদীপ দাস)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy