Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024 Result

ধর্মের চেনা সমীকরণে ফলও এক ধাঁচেই

কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫৩ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। তার মধ্যে কৃষ্ণনগর শহর থেকেই প্রায় ২৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ ১০:০০
Share: Save:

গত লোকসভা ভোটের ফলাফলই যেন ‘কার্বন কপি’ করে দেওয়া হয়েছে!

গত বার কৃষ্ণগর কেন্দ্রে তৃণমূল ও বিজেপি যে বিধানসভা কেন্দ্রে যত ভোটে এগিয়ে ছিল, এ বারও প্রায় একই রকম ‘লিড’ পেয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, গত বারের মতো এ বারও ধর্মীয় পরিচয়ই অন্যতম নির্ণায়ক বিষয় ছিল। সেই অবস্থাটা পাল্টায়নি। ফলে ফলাফলও একই রকম রয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ৬৩ হাজার থেকে প্রায় ৫৭ হাজারের কাছাকাছি নেমেছে।

গত বার কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫৩ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। তার মধ্যে কৃষ্ণনগর শহর থেকেই প্রায় ২৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। এ বারও ওই কেন্দ্রে প্রায় ৫৩ হাজার ভোটেই পিছিয়ে থেকেছেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। পুর এলাকায় অবশ্য তাদের হাল গত বারের চেয়েও খারাপ হয়েছে। জেলার একমাত্র মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের কেন্দ্র কৃষ্ণনগর দক্ষিণে গত বার প্রায় সাড়ে সাত হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এ বার সেই ফারাক বেড়ে ১০ হাজারের কাছাকাছি চলে গিয়েছে। এই কেন্দ্রে হিন্দু ভোটের আধিক্য ও তৃণমূলের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা এর জন্য দায়ী বলে অনেকেই মনে করছেন। তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্রেও বিজেপির ‘লিড’ বেড়েছে। গত বার সেখানে বিজেপি মাত্র হাজার দুয়েক ভোটে এগিয়ে ছিল। এ বার তা বেড়ে প্রায় আট হাজারে দাঁড়িয়েছে। বিধায়ক তাপস সাহার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রবল গোষ্ঠী কোন্দলকে তার জন্য দায়ী করছেন দলেরই লোকজন।

ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্র বাদে চার কেন্দ্রেই ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এখনও জেলে। তার উপর সেখানে তৃণমূলের একাংশ প্রকাশ্যেই মহুয়া-বিরোধী বলে পরিচিত। সিপিএম প্রার্থী এস এম সাদি সেই কেন্দ্রেরই প্রাক্তন বিধায়ক। ফলে সেখানে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে বড় ফাটল ধরবে বলে অনেকেই মনে করেছিলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে গত বারের প্রায় ৩৬ হাজার ভোটের ‘লিড’ মোটে হাজার দুয়েক কমেছে। কালীগঞ্জ কেন্দ্রেও প্রবল দলীয় কোন্দল, মহুয়া বিরোধী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা, পঞ্চায়েত ভোটের সিপিএমের শক্তিবৃদ্ধি সত্ত্বেও তৃণমূলের ‘লিড’ কমেছে মাত্র ছয় হাজার মতো— গত বারের ৩৭ হাজারের জায়গায় এ বার প্রায় ৩১ হাজার।

নাকাশিপাড়া অবশ্য প্রায় একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে। এই কেন্দ্রে গত বার পাঁচ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিল তৃণমূল। এ বার তা বেড়ে প্রায় ছয় হাজার হয়েছে। সবচেয়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত চাপড়ায় গত বারের প্রায় ৪৯ হাজার ভোটের ‘লিড’ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৭ হাজারে। চাপড়ায় তৃণমূলের সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় আড়াআড়ি বিভক্ত। এক দিকে বিধায়ক রুকবানুর রহমান, আর অন্য দিকে মহুয়া-ঘনিষ্ঠ জেবের শেখের গোষ্ঠী। তা ছাড়া, বাম-কংগ্রেসের শক্তিবৃদ্ধি তো ছিলই। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ভোটের ঠিক আগে রুকবানুরকে দলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান করে দেওয়া কৌশল হিসাবে কাজে দিয়েছে। কারণ, সে ক্ষেত্রে দলের প্রার্থীকে জেতানোর দায়িত্ব অনেকটা তাঁর উপরেও বর্তেছে, যার অন্যথা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তাঁকে জবাবদিহি করতে হত।

সংক্ষেপে, নিজের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রাখতে পারাই ছিল এই কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের আসল চাবিকাঠি। পঞ্চায়েত ভোটে বাম-কংগ্রেস শক্তিবৃদ্ধি করেছিল ঠিকই, কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী-শাহেরা যত প্রচারে এসেছেন, সিএএ-এনআরসি নিয়ে যত চর্চা হয়েছে, আতঙ্কিত সংখ্যালঘুরা ততই তৃণমূল নেত্রীর পতাকাতলে আশ্রয় খুঁজেছেন বলে রাজনৈতিক
মহলের ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE