রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিজেপির হাত থেকে হুগলি কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করেছে তৃণমূল। কিন্তু বিধানসভাভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে সাতটির মধ্যে তিনটি বিধানসভাতেই (চুঁচুড়া, সপ্তগ্রাম ও বলাগড়) পিছিয়ে শাসকদল।
কেন?
শুরু হয়েছে ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের পিছিয়ে পড়া নিয়ে পর্যালোচনা। স্থানীয় নেতারা মূলত যে তিনটি কারণকে সামনে আনছেন, তার মধ্যে যেমন রয়েছে নেতাদের একাংশের দলবিরোধী কাজ, তেমনই বাম-কংগ্রেসের কিছু ভোট বিজেপিতে যাওয়া এবং বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের ‘ফাঁদে’ কিছু মানুষের পা দেওয়া।
ওই তিন বিধানসভার মধ্যে তৃণমূল সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে চুঁচুড়ায়। এখানে ৮ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এ ছাড়া বলাগড়ে প্রায় ৬ হাজার এবং সপ্তগ্রামে আড়াই হাজারের মতো ভোটে পিছিয়ে ২ নম্বরে রয়েছে তৃণমূল।
বুধবারই এলাকার বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি, দলীয় নেতৃত্ব এবং পুরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে হারের কারণ পর্যালোচনায় বসেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। এই বিধানসভার আওতাধীন সাতটি পঞ্চায়েতের মধ্যে চারটিতেই পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। বিধায়ক জানান, চুঁচুড়া স্টেশন সংলগ্ন কোদালিয়া ১ ও ২ পঞ্চায়েতে যথাক্রমে ৪ হাজার এবং ১৮০০, ব্যান্ডেলে ১২০০, দেবানন্দপুরে প্রায় ৫০০ ভোটে পিছিয়ে পড়েছে দল। তাঁর দাবি, কলোনি এলাকার অনেকেই বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের জেরে তৃণমূলকে ভোট দেননি। পাশাপাশি, বাম-কংগ্রেসের বেশির ভাগ ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। যার জেরেই এই ফল।
অসিত বলেন, ‘‘২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে চুঁচুড়ায় প্রায় ২১ হাজার ভোটে আমরা পিছিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু দু’বছর পরের বিধানসভা নির্বাচনে সেই ২১ হাজারের মতো ভোটে আমরা জিতেছি। ’২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে ৮ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকাটা আমরা অনায়াসে কাটিয়ে উঠব।’’
তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলাগড়ে ভোট পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৪৬৫। লকেটের ঝুলিতে গিয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার ৪১২। হারের কারণ হিসেবে দলের একাংশ গোষ্ঠীকোন্দলকে দায়ী করছেন। তাঁদের দাবি, গোষ্ঠীর লড়াই বারবার প্রকাশ্যে আসায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। ভোটের বাক্সে তার প্রভাব পড়েছে।
বলাগড়ে তৃণমূলের ২০-২৫ হাজার ভোটে ‘লিড’ থাকবে বলে প্রচার পর্বে দবি করেছিলেন এখানে দলের নির্বাচন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শ্যামাপ্রসাদ রায় বন্দ্যোপাধ্যায়। লকেটের পিছিয়ে পড়া নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘দলের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে সমাজমাধ্যমে দলবিরোধী মন্তব্য করেছেন। যা ভাল ভাবে নেনয়নি মানুষ। প্রভাব পড়েছে ভোটে। গুপ্তিপাড়া ১, জিরাট প্রভৃতি পঞ্চায়েতে প্রায় আড়াই হাজারের মতো ভোটে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।’’
জিরাট পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান তপন দাস বলেন, ‘‘নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পরেও সংগঠনে জোর ছিল না। ভোটগ্রহণের দিন পনেরো আগে থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত কর্পোরেট সংস্থা জোর করে কাজ চাপিয়ে দেওয়ায় অনেকটা ক্ষতি হয়েছে।’’
সপ্তগ্রাম বিধানসভার আওতাধীন একমাত্র পুরসভা বাঁশবেড়িয়া। কয়েকটি পঞ্চায়েতের পাশাপাশি এতদিন গেরুয়াশূন্য বাঁশবেড়িয়ার ২২ টি ওয়ার্ডের সিংহভাগেই এ বারের নির্বাচনে থাবা বসিয়েছে বিজেপি। যার জেরে পুর এলাকায় প্রায় ১২ হাজার ভোটে পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের পুরপ্রধান আদিত্য নিয়োগী বলেন, "মতুয়াদের ভোট আমরা পাইনি। পাশাপাশি, পুর এলাকায় কারখানা বন্ধ থাকায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে।’’ হারের কারণ, পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান। এলাকার বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত অবশ্য দলেরই একাংশের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁর মতে, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেসের ভোটও বিজেপিতে গিয়েছে। পাশাপাশি, দলে থেকেও অনেকেই দলের বিরুদ্ধে ভোট করিয়েছেন। তাঁদের চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে নামের তালিকা পাঠাব। ভুল শুধরে বিধানসভায় ভাল ফল করব।’’
বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য তাদের ভোট বিজেপির দিকে যাওয়ার ‘তৃণমূলী-তত্ত্ব’ মানেনি। তিন বিধানসভায় এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান লক্ষ্যের তুলনায় অনেকটাই কম বলে দাবি হুগলিতে বিজেপির নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক সুবীর নাগের। তাঁর মতে, ‘‘তৃণমূলের তুলনায় বিজেপি সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হলেও ওই তিন কেন্দ্রে যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছিল। অনেককেই বোঝাতে পেরেছি। তাই আশানুরূপ না হলেও ওই তিন কেন্দ্রে আমরা এগিয়ে গিয়েছি।’’
তথ্য: সুদীপ দাস, সুশান্ত সরকার ও বিশ্বজিৎ মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy