Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

কাজ রাখতে চাই নেতার শংসাপত্র, নালিশ বিজেপির

সমস্যাটা যে নতুন এমন নয়। বাম আমলেও এমন অভিযোগ উঠত। বিরোধী রাজনীতিতে বিশ্বাসী অনেকেই কর্মক্ষেত্রে লাল পতাকা ধরতেন।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৪ ০৮:৫৭
Share: Save:

পাড়ায় গেরুয়া। কাজের জায়গায় সবুজ। প্রথমটা ব্যক্তিগত বিশ্বাস, ভালবাসা। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পুরোটায় পেটের দায়। ভোটের মুখে দ্বৈত সত্তার এমনই ঠিকা শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি চরমে উঠছে শিল্পশহর হলদিয়ায়।

বিজেপির অভিযোগ, রীতিমতো হুমকি দেওয়া হচ্ছে ঠিকা শ্রমিকদের একাংশকে। কার্যত দেওয়া হচ্ছে ফতোয়া। অভিযোগ, তৃণমূলের তরফে নাকি এ কথা বলা হচ্ছে, এলাকায় যে দলের হয়ে কাজ করেন না সংশ্লিষ্ট বু‌থ সভাপতির কাছ থেকে লিখিয়ে‌ আনতে হবে। শংসাপত্র দেখে সংশয় দূর হলেই ঠিকাশ্রমিকের চাকরি বহাল থাকবে। নচেৎ নয়। অভিযোগ কি সত্যি? তমলুক সাংগঠনিক জেলার আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি চন্দন দে বলেন "বিষয়টি জানা নেই খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

সমস্যাটা যে নতুন এমন নয়। বাম আমলেও এমন অভিযোগ উঠত। বিরোধী রাজনীতিতে বিশ্বাসী অনেকেই কর্মক্ষেত্রে লাল পতাকা ধরতেন। আসলে জীবিকার সঙ্গে জুড়ে থাকে জীবন। কর্মক্ষেত্রে স্রোতের উল্টেোদিকে হাঁটলে ঝক্কি পোহাতে হয় বেশি। সংখ্যাগুরুর দলে ভিড়ে মিশে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেন অনেকে। রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে আপস করেন এটা ভেবে সেখানে তো আর তাঁর ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন না।

হলদিয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে। সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের দিন কুড়ি আগে বুথে বুথে জোরদার প্রচারের পরিকল্পনা করেছে শাসকদল। মিছিল মিটিং পাড়া বৈঠক ইত্যাদিতে ভিড় বাড়ানোর জন্য শিল্প কারখানার ঠিকা শ্রমিকদের পেতে চাইছে তৃণমূল। বলা হচ্ছে কারখানায় শাসকদলের সংগঠন করার পাশাপাশি নিজ নিজ বুথ এলাকায় শাসকদলের প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে হবে। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কোনও রাজনৈতিক দলের শাখা সংগঠন তার সদস্যদের সে নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু গোল বেধেছে শর্ত জোড়ায়। শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, কারখানার নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যে যার এলাকা থেকে বুথ সভাপতি ওয়ার্ড সভাপতি বা অঞ্চলের নেতা থেকে তৃণমূলের কর্মী শংসাপত্র নিয়ে আসতে হবে। আর তা না আনতে পারলে? শ্রমিকদের ওই অংশের অভিযোগ, বলা হয়েছে, সেই সংশাপত্র না আনতে পারলে চাকরি থাকবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাসকদলের এক বুথ সভাপতি বলেন, "এলাকাতে বিজেপির হয়ে কাজ করে আর কারখানার ভেতরে ঢুকলেই তৃণমূলের পতাকা বাধে। এই দ্বিচারিতা দল মানতে চাইছে না। নিজের দাবি দাওয়া সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ তৃণমূলের সংগঠনে করবে আর বাড়িতে এসে বিজেপি করবে এটা দল মেনে নেবে না।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘দলের নেতৃত্ব বসে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রত্যেক এলাকার বুথ ও ওয়ার্ড সভাপতি থেকে শংসাপত্র নিয়ে আসতে হবে শ্রমিককে। আমার কাছে এসেছে অনেকে। আমি দেখে নিচ্ছি কে তৃণমূল করে আর কে করে না।" তৃণমূলের এক ওয়ার্ড সভাপতি বলেন,"আমার কাছে ১০-১২ জন এলাকার যুবক শংসাপত্র নিতে এসেছিল। আমি বলেছি আগে আমাদের সংগঠনের সাথে যুক্ত হও। কাজ কর। মিছিল মিটিংয়ে যাও। তার পরেই মিলবে শংসাপত্র।" স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টিকে প্রচারের হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বলেন ," তৃণমূলের আমলে শ্রমিকরা কখনও ভাল ছিল না। বারবার ভোট বাক্সে তার প্রমাণ মিলে্ছে। শিল্প শহরে শ্রমিক নেতারা শ্রমিক শোষণ করেন। তাঁর শ্রমিক দরদী নন। এ বারেও ভোটে সেটা প্রমাণ হবে। শাসক দল এত ভয় পেয়েছে, তাই ফতোয়া জারি করেছে।"

রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, ২০১৬ এবং ২০২১ সালে রাজ্যে সবুজ ঝড় উঠলেও হলদিয়া বিধানসভাতে বিরোধীরা জয়ী হয়েছে পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। এর কারণ শ্রমিক নেতাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে শিল্প শহরের শ্রমিকদের একাংশ। হলদিয়া বিধানসভার অধিকাংশ ভোটার শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। ২০১৬ সালে হলদিয়া বিধানসভাতে জিতেছে সিপিএম এবং ২০২১সালে জিতেছে বিজেপি।

হলদিয়ার ভোটারদের মধ্যে স্থায়ীদের পাশাপাশি রয়েছেন ঠিকা শ্রমিকরা। কর্মক্ষেত্রে যাঁদের অনিশ্চয়তা তুলনায় বেশি। তবে ফতোয়ার বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও শুরু হয়েছে গুঞ্জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন," এই ফতোয়া জারির ফলে শ্রমিকরা আরও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। কোথায় উচিত তাদের দুঃখ, কষ্ট সুবিধা-অসুবিধার কথা বসে মিটিয়ে আমাদের দলে অন্তর্ভুক্তি করা উল্টে এইরকম হুঁশিয়ারির ফল আরো খারাপ হতে পারে বলে আমার আশঙ্কা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Haldia contractual workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy