মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দলের একাংশের প্রতি মানুষ যে বিরক্ত, বুধবার বুদবুদের তিলডাঙায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথা কিছুটা আক্ষেপের সঙ্গেই বলেছিলেন। তাঁর এই বার্তার পরেই গলসিতে দলের যুযুধান দুই ‘গোষ্ঠী’ কাছাকাছি এসেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
সভামঞ্চে তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই মুখ্যমন্ত্রী জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আমি জানি আপনারা কারও কারও প্রতি বিরক্ত। কিন্তু মনে রাখবেন, তৃণমূলের কারও কারও প্রতি বিরক্ত থাকলেও, আপনারা নিশ্চয়ই আমার প্রতি বিরক্ত নন। তৃণমূলের প্রার্থীর প্রতি বিরক্ত নন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে দলের প্রাক্তন গলসি ব্লক সভাপতি জাকির হোসেনকে প্রথমে দেখা যায়নি। তৃণমূল সূত্রে খবর, কেউ পাশ থেকে সে কথা মমতার কানে তুলে দেন। এর পরেই মঞ্চে ডেকে পাঠানো হয় এত দিন নিজেকে কার্যত আড়ালে রাখা জাকিরকে। শুধু তাই নয়, জাকিরের কানে কানে কিছু কথা বলতেও দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। তার পরেই জাকিরের শরীরী ভাষায় বদল লক্ষ্য করা যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দলের জেলা কার্যালয়ে জাকির এবং দলে তাঁর ‘বিরোধী’ বলে পরিচিত গলসির বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুইকে একই বৈঠকে দেখা গিয়েছে। তবে দলনেত্রীর বুধবারের মন্তব্য নিয়ে দুই নেতা মন্তব্য করেননি। কাল, শনিবার জেলায় সভা করার কথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সভায় তার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাকির বলেন, “আমি কেমন আছি এটাই দিদি জানতে চেয়েছিলেন।” কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী? তাঁর দাবি, “দলনেত্রী আমাকে কিছু বলতেই পারেন। তা বলে আমি সেটা বলে বেড়াব কেন!” ‘কোন্দল’-প্রসঙ্গ উঠতেই তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোনও দ্বন্দ্ব নেই। আগেও দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পালন করেছি। আগামী দিনেও করব।” আর বিধায়কের দাবি, “দ্বন্দ্ব মিডিয়ার বানানো। আমাদের লক্ষ্য গলসি বিধানসভা থেকে দলীয় প্রার্থীকে লিড দেওয়া।” তৃণমূলের গলসি ১ ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। কোন্দল বলে কিছু নেই।”
প্রসঙ্গত, ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোট থেকেই নেপাল-জাকির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। জাকিরের অনুগামীরা অভিযোগ তেলেন, জনার্দনের সম্মতিতে তাঁদের টিকিট থেকে বঞ্চিত করেছেন বিধায়ক। ভোটের পরেই দ্বন্দ্বের অভিঘাতে দলের একের পর এক অঞ্চল কার্যালয়ে তালা ঝোলে। ঘাগড়া, পুরসা, পারাজ-সহ বেশ কিছু এলাকায় দু’পক্ষের অশান্তিও বাধে। জাকির ও নেপালকে এক মঞ্চে দেখা যাচ্ছিল না বেশ কয়েক মাস। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে জাকির ও তাঁর অনুগামীদের গা-ছাড়া মনোভাব দেখে চিন্তায় পড়েন নেতৃত্ব।
এরই মধ্যে পারাজের অঞ্চল তৃণমূল কার্যালয় খোলাকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ঘটে। জাকিরের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত মফুল শেখ ওরফে বাপিকে গাছে বাঁধার অভিযোগ ওঠে অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। জাকিরের আর এক ‘অনুগামী’ মনোহর সুজাপুরের স্বপন মল্লিককেও মারধরে অভিযোগ ওঠে বিধায়কের ‘অনুগামী’ পার্থ মণ্ডলের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। স্বপনকে বর্ধমান মেডিক্যালে দেখতে গিয়েছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। এর পরেই সিঁদুরে মেঘ দেখে তৃণমূল।
এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায় আপাতত দলে শান্তি ফিরেছে। তবে তা কতদিন স্থায়ী হয় তা দেখার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy