তৃণমূলের প্রচারে তন্ময়। নিজস্ব চিত্র।
বিজয়ার প্রণাম থেকে ভাইফোঁটা— বোনের হাতে সবই নেন দাদা। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। এক জন যখন ভোটারদের পদ্মফুলে সমর্থন জানানোর আর্জি জানাচ্ছেন, অন্য জন তখন তৃণমূলের হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। দাদা তন্ময় সাহা সাঁইথিয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা সংশ্লিষ্ট ফৈজুল্লাবাদের তৃণমূলের বুথ সভাপতি। তাঁরই সহোদরা বিজেপির পুরুলিয়া বিভাগের মহিলা মোর্চার ইনচার্জ তথা বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী পিয়া সাহা।
সাঁইথিয়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শ্বশুরবাড়ি হলেও পিয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডেই আলাদা বাড়িতে বাস করেন। ২০১৫ সালে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। ওই বছরই বিজেপির টিকিটে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। দু’বার বিজেপির টিকিটে সাঁইথিয়া বিধানসভা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জিততে না পারলেও গত বিধানসভায় ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলের নিরিখি সাঁইথিয়া পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতেই এগিয়েছিলেন তিনি। শাসকদলের বিধায়ক নীলাবতী সাহাকেও তাঁর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পিছনে ফেলে দেন। এ বারে বিজেপি তাঁকে বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে। সেই সুবাদে ইদানীং তিনি বোলপুরের বাসিন্দা। সময় পেলে এলাকার বাসিন্দা তথা নেতাদের বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী দেবাশিস ধরকে জেতানোর আহ্বানও জানাচ্ছেন।
অন্য দিকে, পিয়ার দাদা তন্ময় সাহা তৃণমূলের হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। শুক্রবার ফৈজুল্লাবাদেই তৃণমূলের মহিলা সেলের একটি বৈঠক ছিল। সেখানে তন্ময়-সহ উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক নীলাবতী সাহা, চেয়ারম্যান বিপ্লব দত্ত, তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস সাহা, স্থানীয় কাউন্সিলর মায়া সাহা প্রমুখ। ওই বৈঠকে দলের বুথ সভাপতি তন্ময়কে পিয়া সাহার দাদা হিসেবে তুলে ধরা হয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়কে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
তন্ময় স্কুলশিক্ষক। ফৈজুল্লাবাদে বাবা, মা, ভাই, স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে পরিবার। সেই বাড়িতে পিয়ারও যাতায়াত রয়েছে। তন্ময় বলেন, “রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও আমাদের পারিবারিক সৌহার্দে ফাটল ধরেনি। বিজয়ার প্রণাম থেকে বোনের হাতে ভাইফোঁটা নেওয়া— সবই বজায় আছে।”
পিয়ার কথায়, “রাজনীতি যাই করি না কেন, আর পাঁচজন ভাইবোনের মতোই আমাদের সম্পর্ক। তৃণমূল সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে ওঁকে আমার দাদা হিসেবে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে। তৃণমূলের অনেক নেতার স্ত্রী, ভাই বা বাবা আমাদের দলে আছেন। আমরা তাঁদের পারিবারিক পরিচয়কে প্রচারে তুলে ধরার নোংরামি করি না।”
পিয়ার মা কৃষ্ণা সাহা জানিয়েছেন, ছেলেমেয়েরা ভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করলেও আমাদের পরিবারে কোনও সংঘাত নেই। তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস সাহা বলেন, “কারা মানুষের ভাল করতে পারেন, তন্ময় তা উপলব্ধি করেছেন বলেই আমাদের সঙ্গে আছেন।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটের মুখে ওই ঘটনা বিজেপিকে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে। বিজেপির স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা কোষাধ্যক্ষ উদয় শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এতে অস্বস্তির কিছু নেই। গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ যে কোনও দলকে সমর্থন করতেই পারেন। সেটি বড় করে দেখানোটাই রাজনৈতিক সংকীর্ণতার পরিচায়ক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy