অগ্নিমিত্রা পাল (বাঁ দিকে), জুন (বাঁ দিকে), সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
আজ, মঙ্গলবার ভোট গণনা। কী হবে মেদিনীপুরে? একেবারে ফুরফুরে মেজাজে নেই কেউই! যুযুধান প্রার্থীরা কিঞ্চিৎ টেনশনে। তবে টেনশনে থাকলেও ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোকেদেরও সেটা বুঝতে দিচ্ছেন না! বরং বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, পরীক্ষার আগে প্রচুর পড়েও মেধাবী পরীক্ষার্থী যেমন টেনশন থাকেন, হয়তো সেই অনুভূতিই হচ্ছে! যুযুধান প্রার্থী বাইরে শরীরী ভাষায় বুঝিয়েছেন, তাঁরা চাপমুক্ত!
গণনার আগের দিন, সোমবার সকালে দলের প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের অডিয়ো- মেসেজ পেয়েছেন মেদিনীপুরের বিজেপি নেতারা। জয়ের ব্যাপারে তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসী, বুঝিয়েছেন অগ্নিমিত্রা। অডিয়ো- মেসেজে ঠিক কী বলেছেন বিজেপি প্রার্থী? বিজেপি নেতারা শুনেছেন, ‘আমি দিদিভাই বলছি। গণনার দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খড়্গপুরে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের (গণনাকেন্দ্র) সামনে আমরা শিবির করেছি। সকাল ৮টা-৯টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন। অবশ্যই আসবেন। দেখা হচ্ছে। সার্টিফিকেট (জয়ের শংসাপত্র) নিয়েই কিন্তু বেরোচ্ছি (গণনাকেন্দ্র থেকে)!’ জেতার আশা ছাড়ছেন না তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়াও। দলের নেতাদের এ দিন তিনি শুনিয়েছেন, ‘আমি অত্যন্ত আশাবাদী মানুষ। আমি আশাবাদী, মানুষ তৃণমূলের পাশেই থাকবেন।’ ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, ‘ফলাফল নিয়ে কোনও টেনশন করছি না। ভাল কিছুরই প্রত্যাশা করছি।’ দলের কাউন্টিং এজেন্টরা যেন শেষ অবধি টেবিলে থাকেন, নেতাদের শুনিয়েছেন সে কথাও। বলেছেন, ‘গণনা ভাল করে করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে, গণনাকেন্দ্রে টেবিলে দলের এজেন্টরা যাতে শেষপর্যন্ত থাকেন।’
প্রায় সব বুথফেরত সমীক্ষাই মেদিনীপুরে এগিয়ে রেখেছে বিজেপিকে। তবে ভোট গণনার প্রথম কয়েক ঘন্টা না কাটা পর্যন্ত স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলা যে মুশকিল, তা ঘনিষ্ঠ মহলে মেনে নিচ্ছেন একাংশ বিজেপি নেতা। তাঁদের মতে, সরাসরি টক্কর হবে এখানে। ফল ঘোষণার আগের দিন চনমনে ভাব ছিল না তৃণমূল শিবিরেও। তা হলে জেতার ব্যাপারে আশা জোগাচ্ছে কে? জেলা তৃণমূলের এক নেতার জবাব, ‘‘মেদিনীপুর আসন আমরা জিতব। আমরা একশো শতাংশ আশাবাদী। আশা জুগিয়েছে মানুষ। গত আড়াই মাসে মানুষের মুখের প্রতিচ্ছবি যা দেখেছি, তাতে তৃণমূলই জিতছে!’’ অগ্নিমিত্রা এবং জুন। মেদিনীপুরের ভোটযুদ্ধে তাঁরা এ বার প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে এই ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’র বাইরে তাঁরা বন্ধুই। প্রায় দু’দশকের বন্ধুত্ব দু’জনের। জুন অভিনেত্রী। অগ্নিমিত্রা ফ্যাশন ডিজাইনার। কাজের সূত্রে পরিচয় এবং সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। দু’জনে টলিপাড়ার চেনামুখ। এক সময়ে ডিজাইনার অগ্নিমিত্রার শো স্টপার ছিলেন অভিনেত্রী জুন। অগ্নিমিত্রার ডিজাইন করা পোশাক পরে কলকাতায় ফ্যাশন শোয়ে র্যাম্পে নজর কেড়েছিলেন তিনি।
দু’জনের মিল কম নয়! প্রায় একই সময়ে কেরিয়ার শুরু করেছেন। রাজনীতিতে আনকোরা থেকেও একুশের বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে, প্রথম চেষ্টাতেই পৌঁছে গিয়েছেন বিধানসভার অন্দরে। জুন মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক। অগ্নিমিত্রা আসানসোলের (দক্ষিণ) বিজেপি বিধায়ক। এখন রাজনীতিতে তাঁদের সদর্প উপস্থিতি। মেদিনীপুরে দুই বন্ধুর ‘লড়াই’ যেন সৌজন্যেরও। প্রচারে তেমন ব্যক্তি আক্রমণ ছিল না। পারস্পরিক কু-কথা ছিল না। ভোটের পরের দিন স্ট্রং রুমের কাছে দু’জনের দেখা হয়েছিল। দেখা হতে দু’জনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সে দিন আগে স্ট্রং রুম চত্বর ছেড়েছিলেন অগ্নিমিত্রা। স্ট্রং রুম চত্বর ছাড়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘জুন, আসছি রে।’ মেদিনীপুরের সাংসদ ছিলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ। ২০১৯ এর ভোটে এই আসনটি দখল করেছিল বিজেপি। এ বার আর দিলীপকে এখানে প্রার্থী করেনি দল। ২০১৯ এর লোকসভায় মেদিনীপুরে বিজেপির জয়ের ব্যবধান ছিল ৮৭,১৬৮। তবে দু’বছরের মাথায় একুশের বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরকে ধাক্কা খেতে হয়েছিল। ২০২১ সালের বিধানসভার নিরিখে মেদিনীপুর লোকসভা আসনে বিজেপি পিছিয়ে পড়ে ৯৩,৭১৬ ভোটে। ২০১৯- এ এই লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছ’টিতে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। একুশে অবশ্য এই সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছ’টিতে জেতে তারা।
পরীক্ষা শেষ। এ বার চূড়ান্ত মুহূর্তের অপেক্ষা। সোমবার যুযুধান প্রার্থীরই সময় কেটেছে চূড়ান্ত ব্যস্ততায়। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কাউন্টিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সময় বার করে খানিক আড্ডা দিয়েছেন। চায়ের আড্ডায় কিছুটা সময় কাটিয়েছেন। খড়্গপুরে গণনাকেন্দ্রের অদূরে রাজনৈতিক দলগুলির শিবির থাকছে। দলীয় শিবিরে প্রতিটি মণ্ডল থেকে যাতে কার্যকর্তারা আসেন, সেই আবেদন জানিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। তাঁর বার্তা, ‘শিবিরে বসার জায়গা থাকছে। টেলিভিশন থাকছে। অবশ্যই আসবেন।’ কেন শিবিরে ভিড় থাকা জরুরি, অডিয়ো- মেসেজে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অগ্নিমিত্রা। তাঁর বার্তা, ‘কারণ আমরা ভিতরে থাকব। যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে গণনা, বাইরে বেরোতে পারব না। কিন্তু আমরা যদি জানি যে, আপনারা বাইরে রয়েছেন, সেটা আমাদের মনোবল বাড়াবে।’ তৃণমূল সূত্রে খবর, ব্লকস্তরের নেতাদের দলীয় শিবিরে থাকার বার্তা দিয়েছেন দলীয় প্রার্থীও। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, বুথফেরত সমীক্ষাই মিলবে। মেদিনীপুরে দলীয় প্রার্থীর জেতার ব্যাপারে এতটুকুও সংশয় নেই! তৃণমূল নেতৃত্বের পাল্টা দাবি, বুথফেরত সমীক্ষার ফল ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে! এখানে লড়াইয়ে শেষ অবধি পরাস্ত হবেন বিজেপি প্রার্থী।
আজ, মঙ্গলবার ফলপ্রকাশ। দুই বন্ধুর একজন জিতবেন, অন্যজন হারবেন। মেদিনীপুরের সঙ্গে টলিউডের যোগ কিন্তু রয়ে যাবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy