(বাঁ দিকে) নুর আলম খান এবং সায়নী ঘোষ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
এক পক্ষের লক্ষ্য বিধানসভায় ‘হারা’ ভাঙড়ে লোকসভায় জয়ধ্বজা ওড়ানো, আর অপর পক্ষের মরিয়া চেষ্টা গড় আগলে রাখার। লোকসভা ভোটের শেষ দফায় ‘কাঁটে কা টক্কর’ দেখলেন রাজ্যবাসী। সৌজন্যে, বহু রাজনৈতিক যুদ্ধের মাটি, ভাঙড়। রাজ্যে আইএসএফের হাতে থাকা একমাত্র বিধানসভা আসনটি এই ভাঙড়েই। আবার যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছ’টিতে এগিয়ে থাকলেও, তৃণমূলের একমাত্র কাঁটার নামও সেই ভাঙড়। সকাল থেকেই যাদবপুরের আইএসএফ প্রার্থী নুর আলম খানকে দেখা গেল ছুটতে। কখনও গ্রামবাসীদের ভোট দেওয়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য টোটো আনছেন, আবার কখনও পুলিশের গাড়ির সামনে চিৎকার করছেন ভোটারদের নিরাপত্তার দাবিতে, কখনও ভোটকেন্দ্রের সামনে জড়িয়ে পড়ছেন বচসায়। অন্য দিকে, নিজের ভোট দিয়ে যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ ঢুকে পড়েন ভাঙড়ের পার্টি অফিসে। বেলা গড়াতেও সেখান থেকে বেরোতে দেখা গেল না তাঁকে। কাঠফাটা রোদে যেখানে আইএসএফ প্রার্থী ঘুরলেন মাঠে-ময়দানে, সেখানে সায়নী বেছে নিলেন ভাঙড় ১ নম্বরে তৃণমূল পার্টি অফিসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। মোটামুটি দিনভর রইলেন সেখানেই। সেই পার্টি অফিসে বসে পরিচালনা করলেন ‘কুল কুল’ ভোট। যা দেখে অনেকেরই গুলিয়ে যাচ্ছিল, ভাঙড়ে এত নিশ্চিন্ত কী করে? পক্ষান্তরে, আইএসএফ প্রার্থীর হাঁকডাক শুনে মনে হতেই পারে, শক্ত ঘাঁটিতে কি খানিক হলেও ‘ব্যাকফুটে’ নওশাদেরা? ভোটের ভাঙড়ে আইএসএফকে মরিয়া হয়ে গড় আগলাতে দেখা গেলেও, দিনভর তেমন দেখাই মিলল না বিজেপি বা সিপিএমের। ভোট শেষে দেখা গেল, ভাঙড়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেবল ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল’ তৃণমূল এবং দিনভর দৌড়ে বেড়ানো আইএসএফ।
তবে, ভাঙড়ে ভোট হবে আর হিংসা হবে না, এমনও হয় নাকি? হয়ওনি তা। কেন্দ্রীয় বাহিনী, কুইক রেসপন্স টিম, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সাঁড়াশি নজরদারিকেও রীতিমতো ঘোল খাইয়ে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটেছে ভাঙড়ে। সকালে তৃণমূলের পার্টি অফিসে ঢোকার পর সায়নী আইএসএফের দিকে আক্রমণ শানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। বুঝতে পারছে, জিততে পারবে না। তাই ভোটদানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আইএসএফ আমাদের কর্মীদের মারছে। কিন্তু কর্মীদের পিটিয়ে মানুষকে ভোটদানে বিরত করা যাবে না। সেটা আইএসএফও বুঝতে পারছে। আমরা নিশ্চিত, বিপুল ব্যবধানে তা-ও জিতব। এই কারণেই আমি ভাঙড়কে বেস বানিয়েছি।’’ ভোটের আগের রাত থেকেই অশান্তি শুরু হয়ে গিয়েছিল ভাঙড়ে। শনিবার ভোট শুরু হতে না হতেই দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে। কোথাও আইএসএফ সমর্থকের মাথা ফাটল, কোথাও রক্ত ঝড়ল তৃণমূলের। কোথাও তৃণমূল কর্মীদের দিকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গেল পুলিশ। কোথাও পুলিশ নিজেই আহত হয়ে হাসপাতালে। সব মিলিয়ে, সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচনের লোকসভা ভোট হোক বা তৃণমূল স্তরের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পঞ্চায়েত ভোট— ভোটের ভাঙড়ে কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ল না। নজরদারির লাল চোখকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভাঙড় রয়ে গেল সেই ভাঙড়েই।
সাতুলিয়ায় আহত পুলিশকর্মী
ভোটের দায়িত্বে ভাঙড়ে গিয়ে আহত ৭০ এবং ৭১ নম্বর বুথের দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুলিশের কর্মী এমআই খান। সাতুলিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার বুথে সেক্টর অফিসারের দায়িত্ব ছিলেন তিনি। চিকিৎসার জন্য তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
সাতুলিয়ায় আহত আইএসএফ
ভাঙড় ২ এর সাতুলিয়ায় ভোট দিতে গেলে আইএসএফ ভোটারদের ঘিরে ধরে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ তৃণমূল বিরুদ্ধে। মারধরে আহত হন দুই আইএসএফ কর্মী। ধারালো অস্ত্র ও বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
ফুলবাড়িতে অভিযোগ আইএসএফের বিরুদ্ধে
ফুলবাড়িতে পুলিশের গাড়ি আটকে দেওয়ার অভিযোগ আইএসএফ কর্মী, সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আইএসএফ কর্মী, সমর্থকদের দাবি, ভোট দিতে গেলে তৃণমূলের আটকে দিচ্ছে। ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল। তাই তাঁদের পুলিশের গাড়িতে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার দাবি ওঠে।
ফুলবাড়িতে তৃণমূল-আইএসএফের মারামারি
বুথে এজেন্ট বসাতে গেলে আইএসএফ কর্মীদের উপর আক্রমণ করার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাল্টা আইএফএফের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। ঘটনায় দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। পুলিশের দেখা মিললেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ করেন আইএসএফ প্রার্থী নুর আলম।
সিপিএম এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ
ভাঙড় থানার ফুলবাড়িতেই আইএসএফ এবং তৃণমূলের মধ্যে গোলমাল। আইএসএফ প্রার্থী এবং কর্মীদের পথ আটকানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। উদ্ধার হয় তাজা বোমা। ভাঙড়ের ঘোঁজের মাঠ এলাকায় সিপিএম প্রার্থীর এজেন্টকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
পুলিশের তাড়া তৃণমূলকে
ফুলবাড়ি এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। অভিযোগ, আইএসএফ সমর্থকদের রাস্তায় আটকে দেওয়া হচ্ছিল। ভয় দেখিয়ে তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। আইএসএফের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশবাহিনী লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে তৃণমূল কর্মী, সমর্থকদের।
শানপুকুরে সংঘর্ষ
ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আইএসএফ কর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের। ঘটনাটি ঘটে ভাঙ্গড় ২ নম্বরের শানপুকুরে।
নলমুড়ি
নলমুড়িতে আইএসএফ-তৃণমূল সংঘর্ষ। ঘটনায় দু’পক্ষের আহত বেশ কয়েক জন। মাথাও ফাটে কয়েক জনের। ঘটনাস্থলে ভাঙড় থানার পুলিশ পৌঁছলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় আইএসএফ। ঘটনাস্থলে যান জয়েন্ট সিপি শুভঙ্কর সিন্হা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy