—প্রতীকী চিত্র।
নতুন ভোটার বেড়েছে প্রায় ষাট হাজার। গণতন্ত্রের এই সব নতুন ‘সেনানী’দের সমর্থন যে জয় নিশ্চিত করতে পারে, মানছেন পদ্ম-ঘাসফুল, দুই শিবির। তাই অন্য সব ‘ফ্যাক্টর’-এর পাশাপাশি নতুন এই ভোটারদের সমর্থন কতটা তাদের দিকে এল, হিসেব কষছে বিজেপি-তৃণমূল, দু’দলই। পাল্টা তরুণদের সমর্থন পাওয়া নিয়ে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে বাম-কংগ্রেস শিবিরকে। এ ছাড়া, ভোটের দিনে কুড়মি সমাজের শিবিরগুলিতে যে ভাবে তরুণ, যুবকদের ভিড় দেখা গিয়েছে, তা-ও যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া আসনে দু’লক্ষাধিক ভোটে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের মূলে অন্যতম ভূমিকা ছিল নতুন ভোটারদের সমর্থন। পুরুলিয়া কেন্দ্রে গত বারের চেয়ে এ বার ভোটার বেড়েছে ৭৩,৩৭১ জন। তার মধ্যে নতুন ভোটারই ৫৯,৬১২ জন। ৭৮.৩৯ শতাংশ সামগ্রিক ভোটদানের প্রেক্ষিতে কম-বেশি ৪৭ হাজার নতুন ভোটার ভোটযন্ত্রে মতামত দিয়েছেন। চলতি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের তুল্যমূল্য লড়াইয়ে এই ৪৭ হাজার ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, মানছে রাজনৈতিক শিবির।
কেন নতুন ভোটারদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ বারে পুরুলিয়ার ভোট-চিত্র গত বারের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। জাতিসত্তার দাবিতে আন্দোলন করা আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতো নির্বাচনে লড়ছেন। পুরুলিয়া কেন্দ্রের কুড়মি তথা মাহাতো সম্প্রদায়ের ভোট আছে তিরিশ শতাংশের বেশি, যা বরাবরই জয়-পরাজয়ে নির্ধারক ভূমিকা নেয়। পাশাপাশি, বাম-কংগ্রেস মঞ্চের প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ছেন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোও। পঞ্চায়েতে সর্বত্রই ভোট বেড়েছে বামেদের। প্রচার-পর্বেও হাতে হাত রেখে মাঠে নেমেছেন বাম-কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা। দু’দলেরই আশা, গত বার লোকসভায় হারানো ভোটের বড় অংশই এ বারে ঘরে ফিরবে। সে ক্ষেত্রে লড়াই কঠিন হতে পারে গেরুয়া শিবিরের। এই প্রেক্ষিতে নতুন ভোটারদের সমর্থন জয়-পরাজয়ে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে বলেই মনে করেছেন বিজেপি ও তৃণমূলের জেলার শীর্ষ নেতারা।
বিজেপির দাবি, মূলত কর্মসংস্থানের প্রশ্নেই নতুন প্রজন্মের সমর্থন পাবে তারা। দলের রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “নতুন প্রজন্মের একটাই চাহিদা, কাজের সুযোগ তৈরি হোক। রাজ্যে সেটাই নেই। পুরুলিয়াতেও ভারী শিল্প নেই যে কর্মসংস্থান হতে পারে। ফলে নতুন প্রজন্ম পরিবর্তন চাইছে।” তাঁর সংযোজন, “পড়াশোনা করেও চাকরি হবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই রাজ্যে। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিই দেখিয়ে দিয়েছে যে, তৃণমূল নেতাদের ঘুষ না দিলে চাকরি হবে না। এক কথায় বললে, কর্মসংস্থানে কোনও দিশা দেখতে পারছে না নতুন প্রজন্ম। পরিবর্তে তাঁরা দেখছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পদক্ষেপ। কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী শক্তিশালী দেশ গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তা দেখেই তরুণেরা বিজেপিমুখী হয়ে উঠেছেন।”
তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বছরে দু’কোটি বেকারদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “গোটা দেশের নিরিখে রাজ্যের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, নানা ভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে এই রাজ্যেই। তা ছাড়া, কন্যাশ্রী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, পড়ুয়াদের জন্য নানা ভাতার ব্যবস্থা করে পড়াশোনার খরচের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তরুণ প্রজন্ম শিক্ষিত। তাঁরা সবটাই জানেন, বোঝেন। তাঁদের সমর্থন তৃণমূল প্রার্থীর দিকেই থাকবে।”
আশায় বাম-কংগ্রেস শিবিরও। তাদের নির্বাচনী প্রচারে ভাল সংখ্যায় তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের দেখা গিয়েছিল। বেশ কিছু ক্ষেত্রে বামেদের পোলিং এজেন্ট হিসাবে ছিলেন নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই। বামেদের দাবি, তৃণমূল ও বিজেপি আসলে একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তা বুঝেই দু’দলের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন তরুণ প্রজন্ম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy