Advertisement
E-Paper

রং পাল্টানো কেন্দ্রে ধন্দে সব পক্ষই

দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারেরা কখনও দাঁড়িয়েছেন কাস্তে-হাতুড়ির পাশে, আবার তার পরেই রং পাল্টে সমর্থন করেছেন জোড়া ফুল বা গেরুয়া শিবিরকে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩২
Share
Save

কিছুটা শহুরে অভিজাত এলাকা, আবার খানিকটা গ্রামীণ জনপদ। এই বিধানসভা এলাকায় মিলেমিশে রয়েছে সবই। কিন্তু গত বারো-তেরো বছরে এলাকার ভোটের পরিসংখ্যান চিন্তায় রাখছে সব দলকেই। কারণ, এই দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারেরা কখনও দাঁড়িয়েছেন কাস্তে-হাতুড়ির পাশে, আবার তার পরেই রং পাল্টে সমর্থন করেছেন জোড়া ফুল বা গেরুয়া শিবিরকে। এলাকায় উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্নের মধ্যে এই প্রশ্নটাও তাই ঘোরাফেরা করছে, এ বার কোন পক্ষকে এগিয়ে রাখবে এই কেন্দ্র?

দুর্গাপুর শহরের ডিএসপি টাউনশিপের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড এবং বিধাননগর, বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি, এইচএফসিএল এবং বিওজিএল টাউনশিপ এলাকার ২৩ থেকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে এই কেন্দ্রের মধ্যে। আবার রয়েছে গ্রামীণ এলাকা কাঁকসার তিনটি পঞ্চায়েত— গোপালপুর, মলানদিঘি ও আমলাজোড়া। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে প্রায় ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে সিপিএমকে হারিয়েছিল তৃণমূল, সঙ্গে ছিল কংগ্রেসের সমর্থন। বিজেপি তখন ভোট পেয়েছিল মাত্র ৪ শতাংশ।

তিন বছরের মাথায়, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি তৃণমূল এবং সিপিএমের থেকে পিছিয়ে থাকলেও, তাদের ভোট
বেড়ে দাঁড়ায় ২২ শতাংশ। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে আবার কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী হারিয়ে দেন তৃণমূল প্রার্থীকে। বিজেপি ১২ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানেই থাকে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে চিত্র অনেকটা পাল্টে যায়। এই এলাকা থেকে ২৬,৫৯১ ভোটে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে যান
বিজেপির সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। দু’বছর পরে আবার রংবদল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে জয়ী হন তৃণমূলের প্রদীপ মজুমদার। তাই এই কেন্দ্র রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সাপ ও মইয়ের খেলার শামিল।

এই এলাকায় নানা কারখানার শ্রমিকের বাস। ডিএসপি টাউনশিপে যেমন বাস করেন মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট (ডিএসপি) এবং অ্যালয় স্টিল প্লান্টের কর্মীরা, তেমনই কাঁকসার গোপালপুর, বামুনাড়া, বাঁশকোপা ইত্যাদি জায়গায় রয়েছেন স্থানীয় বেসরকারি ইস্পাত অনুসারী শিল্পের শ্রমিকেরা। তৃণমূলের দাবি, টানা আন্দোলনে কেন্দ্রের ডিএসপি বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা আটকে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, কাঁকসার গ্রামীণ এলাকায় সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, কিসানমান্ডি চালু করা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, আদিবাসীদের জন্য নানা সামাজিক প্রকল্প-সহ নানা কাজ হয়েছে। ভোটে তার সুফল মিলবে, আশায় তৃণমূল।

দলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কথায়, “সাধ্যমতো সব রকম ভাবে এলাকার মানুষের পাশে রয়েছি। কিন্তু কেন্দ্রের অসহযোগিতায় বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলি খোলার কোনও অগ্রগতি হয়নি।” বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের আবার দাবি, “কাঁকসার বিভিন্ন কারখানায় অর্থের বিনিময়ে বহিরাগতদের নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভও হচ্ছে। আমরা নিশ্চিত, ভোটে ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যাবে।”

সিপিএম এলাকায় অনুন্নয়নের অভিযোগ তুলে দোষ দিচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারকেই। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, কাঁকসার শিল্পতালুকগুলিতে গত ১২-১৩ বছরে কোনও নতুন কারখানা হয়নি। উল্টে, ২০-২২টি কারখানা বন্ধ হয়ে
গিয়েছে। তিনি বলেন, “কাজ হারানো মানুষ, পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের শিকার হওয়া লোকজন, সবাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। এমএএমসি, এইচএফসিএল চালু করার বিষয়ে বিজেপির বিদায়ী সাংসদের কোনও ভূমিকা নজরে আসেনি। তাঁকে কেউ দেখতেই পাননি ভোটের পরে।’’ তাই কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থীই এ বার এখানে ভোট পাবেন বলে তাঁদের আশা।

দাবি, পাল্টা দাবি চলছেই। তবে তার মধ্যে গত কয়েকটি ভোটের পরিসংখ্যান দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে রাখছে সব পক্ষকেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Durgapur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}