—প্রতীকী ছবি।
ভোট বাজারে নেতানেত্রীর ছবি-ভরা ইস্তাহারে থাকতেই পারত তাঁদের কথা। অন্তত এ রাজ্যের প্রধান দলগুলির ইস্তাহারে থাকারই কথা ছিল। সেখানেও কার্যত অদৃশ্য
অ্যাসিড আক্রান্তদের কথা। অথচ সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের একাধিক নির্দেশেও বার বার অ্যাসিড হানা রোধ কিংবা অ্যাসিড আক্রান্তদের পরিচর্যা বা পাশে দাঁড়ানোর কথা মনে করানো হয়েছে। এই পটভূমিতে আজ, সোমবার লোকসভা ভোটের পঞ্চম পর্যায়ে ভোট দিতে যাবেন দশ বছর আগে অ্যাসিড হামলায় দু’টি চোখ পুরোপুরি খুইয়ে বসা রিষড়ার
ঝুমা সাঁতরা।
বেঁচে থাকা বড় দায়! তাই দু’চোখ খুইয়েও রান্না করেন, আচার তৈরি করে বিক্রি করেন ঝুমা। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে ছেলে সাগরের হাত ধরে পুড়ে যাওয়া চোখ চশমায় ঢেকে ভোট দিতে যাবেন তিনি। দশ বছর আগে হামলায় মায়ের চোখ দু’টি নষ্ট হওয়ার সময়ে মাত্র ১৪ বছর বয়স ছিল সাগরের।
গোটা দেশের অ্যাসিড হামলার সংখ্যায় সব রাজ্যের মধ্যে এগিয়ে বাংলাই। অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের নিরিখেও এ রাজ্যের অগ্রগতি ঢিলেঢালা। সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বেশ কয়েক জন অ্যাসিড আক্রান্তকে বাড়তি ক্ষতিপূরণ দিতে বলেন। তাঁদের মধ্যে ঝুমাও রয়েছেন। আট বছর আগে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। পুড়ে যাওয়া একটা চোখের পাতা ঠিক করতেই লাগে এক লক্ষ। গত জানুয়ারিতে তাঁকে সংশ্লিষ্ট জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ মারফত আরও আট লক্ষ টাকা দিতে বলে হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে ঝুমার দু’টি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে তাঁকে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে পেনশনও দিতে বলেছে হাই কোর্ট। যদিও সেই টাকা পাওয়ার
নামগন্ধই নেই।
দেশে অ্যাসিড আক্রান্তদের প্রতিবাদের অন্যতম মুখ তথা অ্যাসিড আক্রান্তদের একটি মঞ্চের কর্ণধার শাহিন মালিক বলছিলেন, “পঞ্জাবে অ্যাসিড আক্রান্তেরা মাসে ৮০০০ টাকা এবং হরিয়ানায় ৯৫০০ টাকা পেনশন পান। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনের তাপউত্তাপ নেই।
তা ছাড়া, অ্যাসিড হামলার শিকার হলে ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা আসার কথা। সেই টাকা জোগাড় করতেও স্থানীয় পুলিশের তৎপরতা দরকার। অ্যাসিড হামলায় ন্যূনতম টাকা পেতেই পশ্চিমবঙ্গে এখনও বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়।”
এই ক্ষতিপূরণ ভোগান্তির কষ্ট হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন ক্যানিংয়ের জীবনতলার ৩২ বছরের খৈরুল শেখ। পেশায় আলু বিক্রেতা খৈরুল আত্মীয়ের ছোড়া অ্যাসিডে দু’টি চোখ হারান। এর পাঁচ মাস বাদে পুলিশ তাঁর বয়ান নেয়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় গত মাসে আট লক্ষ টাকা সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। খৈরুলের স্ত্রী সাবিনা এখন বাড়িতে নামমাত্র চায়ের দোকান চালান। খৈরুলের স্থায়ী রুজির জন্য মাসে ২০ হাজার টাকা পেনশনের রিট আর্জি পেশ করা হয়েছে হাই কোর্টে। যদিও ঝুমা তো হাই কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও পেনশন পাচ্ছেন না।
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দরকার হলে আদালত অবমাননার মামলা করতে হবে।” অ্যাসিড আক্রান্তদের অধিকার নিয়ে সক্রিয় সমাজকর্মী অপরাজিতা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “৩২ জন অ্যাসিড আক্রান্তের সমস্যার কথা জানি। রাজ্যে প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েক গুণ। সাহস করে ছিটেফোঁটা ক্ষতিপূরণের কথাও তাঁরা ভাবতে পারেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy