(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নওশাদ সিদ্দিকি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শেষ পর্যন্ত কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই প্রার্থী হতে চলেছেন নওশাদ সিদ্দিকি? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহলে। সোমবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। রবিবার আইএসএফ নেতা নওশাদ জানিয়েছেন, দল অনুমতি দিলেই তিনি প্রার্থী হবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। ডায়মন্ডহারবারের মতো আসনে ভাঙড় বিধায়ক প্রার্থী হলে যে তাদের আপত্তি নেই, তাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তী। জোটের ক্ষেত্রে এমনিতেই ডায়মন্ডহারবার আসনের দাবি জানায়নি কংগ্রেস। তাই নওশাদের দল আইএসএফ তাঁকে নির্বাচনে লড়াই করার অনুমতি দিলেই সম্মুখসমর হতে পারে অভিষেক-নওশাদের।
ডায়মন্ডহারবার লোকসভায় তাঁর প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে নওশাদ বলেছেন, ‘‘আমি ১০০ শতাংশ প্রস্তুত আছি ডায়মন্ডহারবারে লড়াই করার জন্য। দলের একটা মত রয়েছে। নেতৃত্বরা সকলেই সেখানে মতামত জানাচ্ছেন। এখনও চূড়ান্ত ফয়সালা হয়নি। আশা করছি আগামিকালই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। তা হলেই আমি মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ পাব।’’ জোটের অন্য শরিকদের উদ্দেশ্য করে ভাঙড় বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘আমি সংযুক্ত মোর্চার বিধায়ক। এখন বামেরা সংযুক্ত মোর্চা রাখবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত তাঁরা নেবেন। জোটের জন্য দরজা আমরা খুলেই রেখেছি। বামেরা কী করবে দেখা যাবে। বিজেপি ও তৃণমূলকে পরাজিত করার জন্য জোট করতে চায় কি চায় না, সেটা সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।’’
নওশাদের কথায়, ‘‘বামেরা বা যদি কোনও জায়গায় প্রার্থী দেয়, তা হলে কি আমি প্রার্থী হতে পারব না? আমরা লড়াই করতে পারব না? তাদের ওপরে নির্ভর করেই কি লড়াই করতে হবে? অবশ্যই তারা বড় দল। তাদের আমি সম্মান জানাই। ভোটের ময়দানে যদি একক ভাবে লড়াই করতে হয়, তা হলে আমাদের একাই লড়াই করতে হবে। আমি শুধুমাত্র দলের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।’’
অভিষেক বিরুদ্ধে আইএসএফের যুবা বিধায়কের লড়াই করার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নওশাদ সিদ্দিকি একাধিক বার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন তিনি ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন। ৬-৮ মাস আগে থেকেই তিনি এ কথা বলে আসছেন। তিনি বলেছেন আমি লড়ে জিতে নেব। যখন আলাপ আলোচনা হচ্ছে বিজেপি তৃণমূলকে হারাতে হবে, তখন নওশাদ সিদ্দিকি একজন বিধায়ক, তিনি যখন দায়িত্ব নিয়ে বলছেন, দাঁড়াব এবং দাঁড়াবই, দল যদি বলে আমিই দাঁড়াব। তাই আমরা বলেছি উনি যখন দাঁড়াতে চাইছেন, তখন উনি দাঁড়ান।’’ তবে নওশাদের দল তাঁকে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি না দিলে সিপিএম যে ওই আসনে প্রার্থী দেবে তা-ও খোলসা করে দিয়েছেন সুজন। তিনি বলেছেন, ‘‘ডায়মন্ডহারবারে উনি যদি না দাঁড়ান, তা হলে অবশ্যই আমাদের প্রার্থী দাঁড়াবেন। আমাদের প্রার্থী তৈরি আছে। আমার মনে হয় নওশাদ সিদ্দিকি যে ভাবে জনসমক্ষে বলেছেন ডায়মন্ডহারবারে দাঁড়াবেন, এবং তাঁর দাঁড়ানো প্রসঙ্গে বামেরা ও কংগ্রেস সমর্থন দিয়েছে, ফলে ওঁর ওই কথা থেকে সরে আসা উচিত নয়। কথা থেকে সরে এলে লোকে ওঁকে হালকা ভাবে নেবে।’’ প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র প্রার্থী হিসাবে ভাঙড় থেকে জয় পেয়েছিলেন আইএসএফ নেতা নওশাদ।
আর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের আসনে নওশাদের প্রার্থী হওয়াকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তিনি বলেন, ‘‘অভিষেক ফোবিয়া তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ওকে সস্তার রাজনীতি করার জন্য টিভিতে মুখ দেখানোর জন্য বলানো হচ্ছে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করব। যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডায়মন্ডহারবারে ৭০-৭২ হাজার ভোটে জিতেছিল, পাঁচ বছর কাজ করে সেই ব্যবধান তিন লাখ ২৫ হয়ে গেছে। তাই এ বার ডায়মন্ডহারবারের মানুষ বলছে হয় চার লক্ষ নয় পাঁচ লক্ষ ভোটে তাঁকে জেতাবেন। এমন একটা কথা বুঝতে পেরে পালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছে না। এ ওর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে, ও তাঁর ঘাড়ে দোষ ঠেলছে। যদি হিম্মত থাকে লড়ে দেখাক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy