Advertisement
E-Paper

ময়দানে বেপাত্তা টিনা, কোন্দলেই কমবে ভোট?

কিন্তু গত দু’বছরে তেহট্টে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মারাত্মক রকম মাথাচাড়া দিয়েছে। তার এক দিকে তাপস, অন্য দিকে টিনা।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সাগর হালদার  

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৮
Share
Save

গত বিধানসভা নির্বাচনে তেহট্ট কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে মূলত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে শাসক শিবির।‌ তেহট্ট ১ ব্লকের একটি পঞ্চায়েতও নিজেদের দখলে রাখতে পারেনি তারা, বরং হাতছাড়া হয়েছে কয়েকটি পঞ্চায়েত। ফলে আসন্ন লোকসবা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র ধাক্কা খাবেন কি না, সেই প্রশ্ন নানা মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।

বস্তুত, গত লোকসভা নির্বাচনেও তেহট্টে ভাল ফল করতে পারেনি তৃণমূল। সে বার এই কেন্দ্রে বিজেপির চেয়ে প্রায় দু’হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন মহুয়া। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় সাত হাজার ভোটে জেতেন তৃণমূলের তাপস সাহা। ২০১১ সালে দল প্রার্থী না করায় তাপস নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে হেরে যান এবং দল তাঁকে বহিস্কার করে। পরে দলে ফিরিয়ে ২০১৬ সালে তাঁকে পলাশিপাড়া কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়। সেখানে তিনি জেতেন। এর পর গত বার তাপস তেহট্টের বিধায়ক হন।

তৃণমূল সূত্রের দাবি, এক সময়ে মহুয়ার সঙ্গে ভাল রকম দূরত্ব তৈরি হয়েছিল ‌তাপসের। তা যে আপাতত অনেকখানি কমেছে তার একটা প্রধান কারণ জেলা পরিষদ সদস্য টিনা ভৌমিক সাহার সঙ্গে উভয়ের অসদ্ভাব। মহুয়া মৈত্র তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী হওয়ার পর তেহট্টে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়। এক সময়ে মহুয়া-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত টিনা বরাবরই তাপস-বিরোধী ছিলেন। এখন মহুয়ার সঙ্গেও তাঁর রসায়ন ঘেঁটে গিয়েছে। ফলে ‘শত্রুর শত্রু’ ফর্মুলায় তাপস ও মহুয়া কাছাকাছি এসে গিয়েছেন, অন্তত প্রকাশ্যে।

কিন্তু গত দু’বছরে তেহট্টে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মারাত্মক রকম মাথাচাড়া দিয়েছে। তার এক দিকে তাপস, অন্য দিকে টিনা। সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। গত পঞ্চায়েত ভোটেও টিনা ও জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মোটা টাকা নিয়ে টিকিট বিক্রির অভিযোগ তুলেছিলেন তাপস। যার প্রভাব দেখা গিয়েছে সরাসরি পঞ্চায়েত নির্বাচনেই।

গত পঞ্চায়েত ভোটে তেহট্টে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে ঘাসফুল শিবিরের। তেহট্ট ১ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দু’টি পলাশিপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। বাকি ন’টি পঞ্চায়েত ও করিমপুর ২ ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত (নারায়ণপুর ১ ও ২, নন্দনপুর) মিলিয়ে তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্র। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তেহট্ট ১ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপি চারটি , সিপিএম সিপিএম তিনটি পায়। বাকি চারটি ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতে বিজেপি ও সিপিএম মিলে বোর্ড গঠন করে। তবে তেহট্ট পঞ্চায়েতে প্রথমে নির্দল প্রধান হলেও পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন।

তবে এখন মহুয়ার প্রচারে তাপসকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে। টিনা কার্যত ময়দানেই নেই। দলে অনেকেরই প্রশ্ন: এই লোকসভা ভোটে টিনার ভূমিকা বস্তুত কী হতে চলেছে? এ প্রসঙ্গে সোমবার টিনা বলেন, “আমার মা-বাবা, শাশুড়ি অসুস্থ। তাই নিয়েই ব্যস্ত রয়েছি।” তবে তাপসের দাবি, “ওঁকে যত দেখা না যায়, ততই ভাল। ওঁর জেলা পরিষদ এলাকাতেও ভাল ভোট পাবেন মহুয়া।” তৃণমূলের তেহট্ট ১ ব্লক সভাপতি সুকুমার মণ্ডল বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে ভুলত্রুটি হয়েছিল। এ বার আমরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়ছি।”

তবে এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদারের মতে,“তৃণমূলের দুর্নীতি পাহাড়প্রমাণ। আর, গত বারের তুলনায় আমাদের খামতি মেরামত হয়েছে, বিজেপির উন্নয়ন গ্রামে গ্রামে পৌঁছেছে। বিপুল ভোট পাবেন আমাদের প্রার্থী।” আবার তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএমের নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক সুবোধ বিশ্বাসের দাবি, “তৃণমূল-বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করে। সেই জায়গায় বামপন্থীরাই একমাত্র বিকল্প, তা মানুষ ক্রমশ বুঝছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Tehatta

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}