Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

ফুটবল মাঠের ‘মার্কিং’ বনাম দেদার নিজস্বী

ধনেখালির ডাকাবুকো তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের ‘ঘরের বুথ’ মাজিনানের মুইদিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেই দুই অভিনেত্রী প্রার্থীর কনভয় পরস্পরের পাশ কাটিয়ে বেরোয়।

(বাঁ দিকে) ধনেখালির একটি ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে বিতর্কে জড়ালেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। পান্ডুয়ার তিন্না আর সি প্রাইমারি স্কুলে ভোট কেন্দ্রের সামনে ভক্তদের ভিড়, ঘেরাটোপে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। পান্ডুয়ার একটি ভোট কেন্দ্রের সামনে ভক্তদের ঘেরাটোপে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ধনেখালির একটি ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে বিতর্কে জড়ালেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। পান্ডুয়ার তিন্না আর সি প্রাইমারি স্কুলে ভোট কেন্দ্রের সামনে ভক্তদের ভিড়, ঘেরাটোপে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। পান্ডুয়ার একটি ভোট কেন্দ্রের সামনে ভক্তদের ঘেরাটোপে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

ঋজু বসু
ধনেখালি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ০৬:৩৪
Share: Save:

পাঁচ বছর আগের ভোটে যা করেছিলেন, কার্যত এ বারও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটালেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। ঠিক যেন প্রতিপক্ষকে ফুটবল মাঠের ‘পুলিশম্যান মার্কিং’! রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের গড় ধনেখালিতেই প্রায় ঘাঁটি গেড়ে খেলার ছক সাজালেন বিজেপি প্রার্থী।

তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লকেটের মুখোমুখি মোলাকাত ধনেখালিতে প্রায় কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। ধনেখালির ডাকাবুকো তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের ‘ঘরের বুথ’ মাজিনানের মুইদিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেই দুই অভিনেত্রী প্রার্থীর কনভয় পরস্পরের পাশ কাটিয়ে বেরোয়। তবে দুই অভিনেত্রীর মুখোমুখি সাক্ষাৎ ঘটেনি।

এর ঠিক আগেই টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার সামনেই অসীমা বনাম লকেট দ্বৈরথ। ‘চোর অসীমা’ বলে লকেটের হুঙ্কার বাজখাঁই কণ্ঠে ‘ডাকাত লকেট’ বলে ফিরিয়ে দেন অসীমাও। দিনশেষে লকেট খোশমেজাজেই। তাঁর দাবি, “ধনেখালিতে তৃণমূলের গোলমেলে কাজ আবারও আটকে দিতে পেরেছি! খুব ভাল ভোট হল। আমার ব্যবধান বাড়বে।”

রচনা-শিবিরেও একই রকম আত্মবিশ্বাসের সুর। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বসা ভোটার সহায়তা কেন্দ্রগুলি ‘বেআইনি’ বলে লকেটের চোটপাট অত্যন্ত গর্হিত বলে মনে করছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের প্রতিনিধিরা। ওই কেন্দ্রগুলি থেকে ভোটারদের বুথ চেনাতে সাহায্য করা হচ্ছিল। রচনা বলছেন, “আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী থেকে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। কমিশনকে বিষয়টি জানাব।” কয়েক জন সাধারণ ভোটারও লকেটের জেরার মুখে পড়েন। কিন্তু স্পর্শকাতর বুথে ঠাসা হুগলি কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা সৃষ্টি ও সংবাদমাধ্যমে তৃণমূলের প্রতি সন্দেহের বীজ বপনে লকেট সফল।

লকেটের জঙ্গিপনার পাশে রচনার প্রথম ভোটের দিনটা ছিল প্রচারেরই বাড়তি একটি দিন। ধনেখালির বোসো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে একান্ত আলাপচারিতায় বললেনও সেটা। “আসলে এত বড় কেন্দ্র, সব ক’টা বুথ তো প্রচারেও কভার করা যায় না। আমি ওদের কথা দিয়েছিলাম, ভোটের দিন আসব!” লকেটের কাছে রামবকুনি খেয়ে কাঁদো কাঁদো সরকারি পঞ্চায়েত কর্মী মিঠু দত্ত এসে রচনার সঙ্গে নিজস্বী তুলে গেলেন।

সকালে সপার্ষদ লকেটের সঙ্গে যে বুথে ঢুকতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘অতি সাবধানী’ বাধা পেয়েছি, দুপুরে রচনার উপস্থিতিতে সেই বুথের চক্রব্যূহও ঢিলেঢালা। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উপচে পড়া ফ্যানতরঙ্গ স্কুলবাড়ির বুথের মাঠেই মেলার মতো থিকথিক করেছে। শুধুমাত্র প্রার্থী বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির বুথে ঢোকার ছাড়পত্র থাকলেও রচনাকে ঘিরে অত্যুৎসাহে নিয়মের গেরো শিথিল হয়েছে। তিন্না আর সি প্রাইমারি স্কুলের একটি বুথে না-ঢুকেই রচনা বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। পিছু ডাকলেন প্রিসাইডিং অফিসার প্রদ্যোৎ মাইতি। খোদ ভোটবাবুর কাতর ‘সেলফি অনুরোধ’টুকু সানন্দে মেনে নিলেন তারকা প্রার্থী।

ভক্তের দল ঝাঁকে ঝাঁকে বলাগড়, পান্ডুয়া, ধনেখালি, সিঙ্গুরের অপরিসর রাস্তার দু’ধারে তিনি আসার আধ ঘণ্টা আগে থেকে অপেক্ষা করছে। রচনাকে দেখে কর্মী, সমর্থকদের থেকে থেকে ‘জয় হুগলি’, ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতেও তৃণমূলের কব্জির জোর দৃশ্যমান।

তবে সকালে টি-২০র পাওয়ার প্লে-র আদলে চালিয়ে খেলে লকেটই তৃণমূলকে উসকে দেন। ধনেখালির সিতি পলাশি প্রাইমারি স্কুলে ভোটের কাজে আসা এক আশাকর্মীর হাতে তৃণমূলের ভোটার স্লিপ দেখে মারমুখী হন তিনি। ওই তল্লাটের বিভিন্ন বুথে কোনও ভোটার এই গোলমালে বিরক্ত হয়েছেন। ‘যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা’ বা ‘ভোটের পর দেখা যায় না’ কটাক্ষও শুনতে হয় লকেটকে। বিকেলে ভদ্রেশ্বরে তাঁকে জুতো দেখানোর ঘটনাও ঘটে। লকেট বলেন, “আমি গায়ের নামাবলি নাড়তে নাড়তে ওদের মুখোমুখি হই।”

রচনার পাশে দিনভর তাঁর স্বামী প্রবাল বসু এবং এক দাদা অশেষ পাল। দুপুরে বৃষ্টির ভ্রুকুটিতে সব মহিলা ভোট পড়া নিয়ে প্রবাল চিন্তিত। বিকেলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে একটু মুরগি ভাজা আহার বাদ দিয়ে রচনা সারা ক্ষণ বুথের আলো, ভোটারদের স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজ নিয়েছেন। সোমবার গাড়িতে বসে বাড়ির তৈরি নুন ছাড়া আলুভাজা খেয়ে কার্যত উপবাস রাখলেন লকেট। সন্ধ্যায় ছেলের কাছে ফিরতে রচনা কলকাতামুখী। লকেট বললেন, “৪ জুন পর্যন্ত এখানেই ভোটযন্ত্র পাহারা দেব।” রচনা ইতিহাস রচনা করেন, না কি হুগলির গলার লকেট গলায় থাকে, তা নিয়ে জল্পনা চলল চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড় থেকে চন্দননগরের স্ট্যান্ডে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy